ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

আন্তর্জাতিক

কাশ্মীর ইস্যুতে ভারতকে কড়া বার্তা দিলো সুইডেন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৫৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৯, ২০১৯
কাশ্মীর ইস্যুতে ভারতকে কড়া বার্তা দিলো সুইডেন

ভারতশাসিত কাশ্মীরে কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষের বাড়াবাড়ির পরিপ্রেক্ষিতে নয়াদিল্লিকে কড়া বার্তা দিয়েছে সুইডেন সরকার। সুইডিশ রাজা কার্ল গুস্তাফ ও রানি সিলভিয়া, পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান লিনদেসহ দেশটির শীর্ষ নেতৃত্বের একটি প্রতিনিধিদলের ভারত সফরের ঠিক দু’দিন আগে স্টকহোম এই বার্তা দিলো।

বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) সুইডেনের জাতীয় সংসদে এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিনদে ভারত সরকারকে কাশ্মীরে সব ধরনের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার আহ্বান জানান। একইসঙ্গে সেখানে জনসাধারণের অবাধ চলাচল ও যোগাযোগ সুবিধা স্বাভাবিক করার কথাও বলেন।

আগামী ১ ডিসেম্বর রাজা, রানি, পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সুইডেন সরকারের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল ভারত সফরে আসছে। সপ্তাহব্যাপী এ সফরে বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নেবে তারা। এই উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদলের সফরের প্রসঙ্গ সংসদে উঠলে কাশ্মীর বিষয়ে একটি প্রশ্ন ওঠে।

সেই প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিনদে বলেন, ‘আমরা সবসময়ই মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার গুরত্বকে জোর দিয়েছি, যেন কাশ্মীরের পরিস্থিতিকে ব্যাপক আকার ধারণ করা থেকে ঠেকানো যায়। এই পরিস্থিতির দীর্ঘমেয়াদী রাজনৈতিক সমাধানের জন্য অবশ্যই প্রক্রিয়ায় কাশ্মীরের অধিবাসীদের সম্পৃক্ত করতে হবে। এক্ষেত্রে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার সংলাপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ’

ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ ধারা অনুযায়ী কাশ্মীরকে দেওয়া বিশেষ সুবিধা বাতিলের পর থেকেই সেখানকার পরিস্থিতি থমথমে। গত ৫ আগস্ট ওই সুবিধা বাতিলের সিদ্ধান্তের আগে বিক্ষোভ ঠেকাতে নাটকীয় কায়দায় অঞ্চলটিজুড়ে সামরিক ও আধা-সামরিক বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য মোতায়েন করা হয়। বন্দি করা হয় সাবেক দুই মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি, ওমর আব্দুল্লাহসহ মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলোর অনেক নেতাকে। ইন্টারনেট, ক্যাবল নেটওয়ার্কসহ যাবতীয় সব যোগাযোগও বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। কারফিউ জারি করে রাস্তায় রাস্তায় সাঁজোয়া যান নিয়ে অবস্থান নেয় সশস্ত্র বাহিনী।

পাকিস্তানসহ কিছু মুসলিম দেশ কাশ্মীরের পরিস্থিতিকে ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের আগ্রাসন-পরবর্তী অবস্থার সঙ্গে তুলনা করলেও ভারত সরকারের কর্মকর্তারা তা বারবারই প্রত্যাখ্যান করছিলেন। নয়াদিল্লি দাবি করে আসছে, কাশ্মীরের পরিস্থিতি শান্তই আছে। জনগণের বৃহত্তর স্বার্থেই সেখানে নিরাপত্তা ব্যবস্থায় কড়াকড়ি রয়েছে।

ওই সুবিধা বাতিলের পরই ১০ আগস্ট সুইডেন সরকারের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে পরিস্থিতিকে ‘উদ্বেগজনক’ বলা হয়। ১৩ সেপ্টেম্বর সুইডিশ সংসদে উত্থাপিত এক বিবৃতিতেও পরিস্থিতি ‘উদ্বেগজনক’ বলে উল্লেখ করা হয়। একই সুরে বৃহস্পতিবারও কাশ্মীরের পরিস্থিতিকে ‘উদ্বেগজনক’ বলে উল্লেখ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিনদে। তিনি বলেন, ‘জম্মু ও কাশ্মীরে আরোপিত সব ধরনের বিধি-নিষেধ তুলে নিতে ভারত সরকারের প্রতি সুইডেন এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন আহ্বান জানাচ্ছে। অবাধ জনচলাচল ও যোগাযোগ সুবিধা পুনরায় স্বাভাবিক হওয়া অত্যন্ত তাৎপর্যবহ। ’

ভারতে নিযুক্ত সুইডেনের রাষ্ট্রদূত ক্লাস মোলিনের বরাত দিয়ে নয়াদিল্লির সংবাদমাধ্যম জানায়, সুইডিশ উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদলের সফরে কাশ্মীরের বিষয়টি আলোচনার টেবিলে উঠতে পারে। সুইডিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিনদে এবং ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের মধ্যকার বৈঠকেই এ নিয়ে কথা হতে পারে বলে ধারণা পাওয়া যাচ্ছে। তবে রাজা-রানি কোনো ‘রাজনৈতিক’ মন্তব্য করবেন না বলে মনে করছেন রাষ্ট্রদূত মোলিন।

ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকরা চলে যাওয়ার সময় উপমহাদেশ ভাগ হয়ে গেলে তখন মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কাশ্মীরের শাসকরা বিশেষ শর্তে ভারতে যোগ দেন। সেই শর্তটিই ৩৭০ অনুচ্ছেদ আকারে সংবিধানে সংরক্ষিত ছিল। এই অনুচ্ছেদের আওতায় কাশ্মীর আলাদা সংবিধান ও পতাকার স্বাধীনতা ভোগ করতো। এমনকি সেখানে সরকারি চাকরি, জমি কেনা এবং ব্যবসা করার সুযোগটিও ছিল কেবল কাশ্মীরিদের জন্যই। কিন্তু ওই অনুচ্ছেদ বাতিলের কারণে সেসব সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছে কাশ্মীরীরা।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৯, ২০১৯
এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।