ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ মে ২০২৪, ০০ জিলকদ ১৪৪৫

আন্তর্জাতিক

ট্যাংকার না আটকাতে যুক্তরাষ্ট্রকে হুঁশিয়ারি ইরানের

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৫৬ ঘণ্টা, আগস্ট ২০, ২০১৯
ট্যাংকার না আটকাতে যুক্তরাষ্ট্রকে হুঁশিয়ারি ইরানের

প্রায় ছয় সপ্তাহ জিব্রাল্টারে আটক থাকার পর মুক্তি পেয়েছে ইরানি তেলবাহী ট্যাংকার। কিন্তু, পুনরায় এটিকে আটক করার চেষ্টা চালাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। বিষয়টি আঁচ করে তেহরান হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, উন্মুক্ত সমুদ্র থেকে ওই ট্যাংকার যেন না আটকায় যুক্তরাষ্ট্র।

ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি এ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়েছে বলে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম জানায়।  

জাহাজ চলাচলের তথ্য অনুসারে দেখা যায়, সোমবার (১৯ আগস্ট) ইরানি তেলবাহী ট্যাংকারটি গ্রিসের পেলোপোনেসিয়ান শহর কালামাতার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছে।

জিব্রাল্টার ছেড়ে যাওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র সুপার ট্যাংকারটি আটক করতে পারে- এমন গুঞ্জনের মধ্যে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে ইরানি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, তেমন কিছু ঘটলে উন্মুক্ত সমুদ্রপথে জাহাজ চলাচল বিপজ্জনক হয়ে উঠবে। আমরা সরকারিভাবে বিশেষ করে সুইস দূতাবাসের মাধ্যমে এ বিষয়ে সতর্কবার্তা জানিয়েছি।  

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরকারিভাবে সরাসরি ইরানের কোনো যোগাযোগ নেই। সুইজারল্যান্ডই ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিত্ব করে।    

‘গ্রেস-১’ নামের ওই তেল ট্যাংকারটির নাম বদলে বর্তমানে ‘আদ্রিয়ান দরিয়া ১’ রাখা হয়েছে। এটি ২১ লাখ ব্যারেল তেল বহন করছে, যার অর্থমূল্য প্রায় ১১৫ মিলিয়ন পাউন্ড।
 
গত ৪ জুলাই ইউরোপীয় নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সিরিয়ায় তেল নিয়ে যাচ্ছে, এই অভিযোগে জিব্রাল্টার প্রণালী থেকে ওই ট্যাংকারটি আটক করে যুক্তরাজ্যের রাজকীয় নৌবাহিনী। পরবর্তীতে এর প্রতিক্রিয়ায় পারস্য উপসাগর অঞ্চল থেকে ‘স্টেনা ইমপেরো’ নামে ব্রিটিশ পতাকাবাহী একটি ট্যাংকার আটক করে ইরান। এ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে চরম উত্তেজনা দেখা দেয়। এক পর্যায়ে নিজেদের জাহাজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আগের মোতায়েন করা যুদ্ধজাহাজের পাশাপাশি উপসাগরীয় অঞ্চলে আরও একটি যুদ্ধজাহাজ পাঠায় ব্রিটেন।  

অবশ্য ইরান শুরু থেকেই সিরিয়ায় তেল নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে আসছিল। শেষমেশ গত সপ্তাহে ইউরোপীয় নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সিরিয়া বা অন্য কোথাও ট্যাংকারটি যাবে না, এমন শর্তে ইরান লিখিত প্রতিশ্রুতি দিলে সেটি ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ব্রিটেনের অঞ্চল জিব্রাল্টারের কর্তৃপক্ষ।

কিন্তু শুক্রবার (১৬ আগস্ট) ওই ট্যাংকার আটক করার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের আদালত পরোয়ানা জারি করলে এটি ছেড়ে দেওয়া নিয়ে আইনগত অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। ট্যাংকারটি যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেছে বলে ওই আদেশে উল্লেখ করা হয়। যুক্তরাষ্ট্র অভিযোগ করে, ওই তেল ট্যাংকারটি ইরানের বিশেষায়িত বিপ্লবী গার্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক কোম্পানির। কিছুদিন আগে এ বাহিনীকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ আখ্যায়িত করে অবরোধ আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। ফলে তারা ট্যাংকারটি আটকে রাখার ব্যাপারে জিব্রাল্টার কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানায়।  

এর প্রতিক্রিয়ায় রোববার (১৮ আগস্ট) জিব্রাল্টার প্রশাসন জানায়, তারা মার্কিন অনুরোধ রক্ষা করতে পারবে না। কেননা, এই অঞ্চল ইউরোপীয় আইনের প্রতি দায়বদ্ধ। ইরানের ব্যাপারে আরোপিত মার্কিন নিষেধাজ্ঞা ও ইউরোপীয় নিষেধাজ্ঞা ভিন্ন। তাছাড়া ইউরোপ, যুক্তরাজ্য বা জিব্রাল্টারের কাছে ইরানের বিপ্লবী গার্ড সন্ত্রাসী সংগঠনও নয়। শেষমেশ জিব্রাল্টার ছাড়তে আইনগত বাধা সরে যায় ইরানি তেল ট্যাংকারটির।  

আদ্রিয়ান দরিয়া ১-কে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র হস্তান্তর ও অন্যান্য কাজে সহযোগিতার জন্য জিব্রাল্টারের শিপিং এজেন্সি অ্যাস্ত্রালশিপকে ভাড়া করা হয়। সংবাদ সংস্থা এপিকে এ এজেন্সি জানায়, আদ্রিয়ান দরিয়া ১-এর আগের সব ক্রু বদলে ভারতীয় ও ইউক্রেনের নাবিকদের নিযুক্ত করা হয়েছে।

জিব্রাল্টার আটককালে ট্যাংকারটি পানামার পতাকা বহন করছিল। কিন্তু রোববারের (১৮ আগস্ট) ভিডিও ফুটেজ ও ছবিতে দেখা যায় এটি বর্তমানে ইরানের পতাকা বহন করছে।  

বাংলাদেশ সময়: ২১৫৩ ঘণ্টা, আগস্ট ১৯, ২০১৯ 
এইচজে/এইচএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।