ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

আন্তর্জাতিক

চারশ’ বছরের প্রাচীন মন্দিরে পুরোহিত পদে রোবট! 

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪৪ ঘণ্টা, আগস্ট ১৮, ২০১৯
চারশ’ বছরের প্রাচীন মন্দিরে পুরোহিত পদে রোবট! 

জাপানের হনশু দ্বীপাঞ্চলের কিয়োটো শহরে চারশ’ বছরের প্রাচীন একটি বৌদ্ধ মন্দিরে পুরোহিত হিসেবে এক রোবটকে নিযুক্ত করা হয়েছে। রোবট পুরোহিতের ফলে আজকের তরুণ প্রজন্ম ধর্মের প্রতি বেশি আকর্ষণ বোধ করবে বলে মনে করছেন মন্দিরের অন্য পুরোহিতরা ।

চলতি বছরের শুরুর দিক থেকে কিয়োটোর কোডায়জি মন্দিরে বৌদ্ধদের করুণা দেবী কাননের অবতার হিসেবে এ রোবট দর্শনার্থীদের মন্ত্র পড়িয়ে আসছে। শিক্ষা দিচ্ছে- অহং, কামনা ও ক্ষোভের বিপদ এবং পারস্পরিক সহানুভূতি সম্পর্কে।

রোবটটির নাম মিন্দার।

সময়ের পালাবদলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এ রোবট একদিন বিপুল প্রজ্ঞার অধিকারী হবে বলে মনে করেন মন্দিরের অন্যতম পুরোহিত তেনশো গোটো।  

আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা এএফপিকে তিনি বলেন, রোবটের যেহেতু মৃত্যু নেই, তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে কালে কালে এটি আরও প্রজ্ঞাবানে পরিণত হবে। এটাই হলো রোবটের দুর্দান্ত দিক। এটি চিরকালব্যাপী সীমাতীত জ্ঞান অর্জন করতে পারবে।  

‘আমরা আশাবাদী যে, নিজের প্রজ্ঞা বৃদ্ধির মাধ্যমে এ রোবট মানুষকে কঠিন বিপদআপদ থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করতে পারবে। এটি বৌদ্ধ ধর্মকে বদলে দিচ্ছে। ’ 

পূর্ণবয়স্ক এ রোবটটি তৈরিতে লেগেছে দশ লাখ মার্কিন ডলার (প্রায় সাড়ে আট কোটি টাকা)। ওসাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোবটিকস বিভাগের অধ্যাপক হিরোশি ইশিগুরো এটির জনক। মিন্দার ঘাড়, হাত ও মাথা নাড়াতে পারে। মানুষের চামড়ার সঙ্গে মিল রেখে এর হাত, মাথা ও কাঁধ সিলিকন দিয়ে মুড়ে দেওয়া হয়েছে। প্রার্থনার ভঙ্গিতে দুই হাত জড়ো করে, প্রশান্ত কণ্ঠস্বরে কথা বলে মিন্দার।

পুরোহিত গোটো বলেন, মিন্দার মানুষকে নিজের অহং সম্পর্কে সতর্ক করে। সে জানায় যে, আজকের মানুষ নিজের অহং আর স্বার্থের মধ্যে ডুবে আছে।  

সনাতন পুরোহিতদের চেয়ে রোবট পুরোহিত তরুণদের বেশ আকৃষ্ট করবে উল্লেখ করে গোটো বলেন, আজকালের তরুণরা মনে করে মন্দির কেবল বিয়ে আর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার জায়গা। তাদের সঙ্গে আমার মতো সনাতন পুরোহিতরা আর সংযোগ স্থাপন করতে পারেন না। রোবট পুরোহিত এ ঘাটতি পূরণ করতে পারবে বলে ধারণা করি।

অনেকেই, বিশেষ করে বিদেশিরা পুরোহিত হিসেবে রোবট নিযুক্ত করাকে ধর্মের পবিত্রতা নষ্ট করা হিসেবে অভিযোগ করছেন। অনেকে সমালোচনা করে বলছেন, মূলত অর্থলাভের আশায় পর্যটকদের আকর্ষণ করতেই এ ব্যবস্থা। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন গোটো।  

তিনি বলেন, পুরোহিত বেশে রোবটকে দেখে পশ্চিমারা বেশি হতাশ। এটি হতে পারে বাইবেলের প্রভাব। তারা রোবটকে ফ্রাঙ্কেস্টাইনের সঙ্গে তুলনা করে। জাপানিদের রোবট নিয়ে কোনো সংস্কার নেই। আমরা ছোটবেলা থেকেই কমিকস পড়ে বড় হই, আর সেখানে রোবট আমাদের বন্ধু।

‘বৌদ্ধ দর্শন ঈশ্বরে বিশ্বাসের ব্যাপার নয়। এটি মূলত বুদ্ধের পথ অনুসরণ করা। ফলে মেশিন, লোহার পাত বা গাছ কে সেটির প্রতিনিধিত্ব করে তা ব্যাপার নয়। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এতোটাই উন্নত স্তরে পৌঁছেছে যে, বুদ্ধ রোবট অবতারেও রূপান্তরিত হতে পারেন বলে আমরা মনে করি।  

বাংলাদেশ সময়: ১১৪২ ঘণ্টা, আগস্ট ১৮, ২০১৯ 
এইচজে/এইচএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

আন্তর্জাতিক এর সর্বশেষ