ঢাকা, রবিবার, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

আন্তর্জাতিক

বিদায় ভাষণে কাঁদলেন-হাসলেন ওবামা, বললেন আমরাই শ্রেষ্ঠ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪৫২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১১, ২০১৭
বিদায় ভাষণে কাঁদলেন-হাসলেন ওবামা, বললেন আমরাই শ্রেষ্ঠ বিদায় ভাষণে বারাক ওবামা

ঢাকা: ‘সব মাপকাঠিতেই আমেরিকা এখন আরও সেরা, আরও শক্তিশালী’ বলে জানিয়েছেন যুক্তারাষ্ট্রের বিদায়ী প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। আট বছর আগে আমেরিকা যেখানে ছিলো তার চেয়ে অনেক দূর এগিয়ে গেছে বলেও জানান তিনি।

 

হাজারো সমর্থকের উল্লাস-চিৎকার চলছিলো। ঠিক সেই মুহূর্তে স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি) রাতে শিকাগোতে প্রেসিডেন্ট হিসেবে বিদায়ী ভাষণে বারাক ওবামা তার সরকারের সফলতা ও শ্রেষ্ঠত্বের কথা তুলে ধরেন।

ক্ষমতার আট বছরের অভিজ্ঞতা শেয়ার এবং স্মৃতি রোমন্থন করতে গিয়ে আবেগ তাড়িত হয়ে কথনো হাসলেন, কখনো কাঁদলেন। চোখের পানি আড়ালেরও চেষ্টা করলেন। একই সঙ্গে আবার উদ্বেগের কথাও জানালেন ওবামা।

যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে দেশটির ৪৪তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে দুই মেয়াদে ৮ বছর কাটিয়ে বিদায়ী ভাষণে বারাক ওবামা বললেন, আমাদের গণতন্ত্র আজ হুমকির মুখে।

আমেরিকানদের বললেন, আমাদের ইতিহাস থেকে শিখতে হবে, একে অন্যের কথা শুনতে ও বুঝতে হবে। আমাদের ধৈর্য্যধারণ করতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম এই কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট এখন ৫৫’য় পড়েছেন। ২০০৮ সালে তিনি প্রথম দফায় প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেন। এরপর ২০১২ সালে দ্বিতীয় দফায় নির্বাচিত হন।

ওবামার উত্তরসূরী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন রিপাবলিকান দলের ধনকুবের ব্যবসায়ী ডোনাল্ড ট্রাম্প। আগামী ২০ জানুয়ারি তিনি শপথ নেবেন। তার আগে এটিই বারাক ওবামার প্রেসিডেন্ট হিসেবে জাতির উদ্দেশ্যে সবশেষ ভাষণ।

বারাক ওবামা বলেন, আমরা আমেরিকাকে আরও উন্নত ও শক্তিশালী অবস্থানে নিয়ে গেছি। যা পরবর্তী প্রজন্ম অনুসরণ করবে। ভাষণে তিনি জাতিকে ‘বিদায়’ জানিয়ে বলেন, তার মানে এই নয় যে অগ্রগতির পরিবর্তন থেকে তিনি সরে দাঁড়াচ্ছেন। যেখানেই থাকবেন দেশের উন্নয়নে এবং ইতিবাচক পরিবর্তনে কাজ করে যাবেন বলেও প্রত্যয় ব্যক্ত করেন বারাক ওবামা।

আট বছর শাসনামলে দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি পুনরুদ্ধার, জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে ভূমিকা, কিউবার সঙ্গে সম্পর্ক পুনঃস্থাপন ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে তার সরকারের কঠোর অবস্থানের কথা তুলে ধরেন ওবামা।

যুক্তরাষ্ট্রে এখনও বর্ণবৈষম্য আছে উল্লেখ করে ওবামা বলেন, বর্ণবাদের বিরুদ্ধে আমাদের আরও অনেক কিছু করার আছে।

ওবামা তার সমর্থকদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারাই আমাকে প্রেসিডেন্ট বানিয়েছিলেন। আজ আমি বিশ্বাসই করতে পারছি না যে এরই মধ্যে আটটি বছর কেটে গেছে। আমি আপনাদের কাছ থেকে শিখেছি। আর সে অনুযায়ী কাজ করে গেছি। আর আজ আমার ধন্যবাদ জানানোর রাত। আপনাদের ধন্যবাদ প্রতিটি দিন আমাকে সম্মৃদ্ধ করে তোলার জন্য।

ওবামা তার উত্তরসূরী জর্জ ডব্লিউ বুশের কথা স্মরণ করে বলেন, বুশ যেভাবে নতুন হিসেবে আমাকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন, আমিও সেই ভাবেই ডোনাল্ড ট্রাম্পকে দায়িত্ব দিচ্ছি। আমি আশা করি আমার কাজগুলোই ট্রাম্প আরও এগিয়ে নিয়ে যাবেন।

বিদায়ী ভাষণ অনুষ্ঠানে বারাক ওবামা এবং তার স্ত্রী ও কন্যা, ছবি: সংগৃহীতআমেরিকার সাধারণ মানুষ, নাগরিক ও শিক্ষার্থীদের তার অনুপ্রেরণা হিসেবে উল্লেখ করেন বারাক ওবামা। তিনি বলেন, সাধারণ মানুষই গণতন্ত্রের চালিকাশক্তি। মানুষই গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিয়ে যায়।

গত আটবছরে যুক্তরাষ্ট্রে বড় কোনো সন্ত্রাসী হামলা হয়নি উল্লেখ করে ওবামা বলেন, আমরা অনেক সন্ত্রাসবাদীকে খুঁজে বের করেছি। আইএস আজ ধ্বংসের পথে।

‘কেউ আমেরিকাকে ভয় দেখাতে পারবে না। নিশ্চিন্তে থাকুন। আমাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আগের চেয়ে এখন আরও বেশি শক্তিশালী। পরিবর্তনের সাহস আমেরিকাই দেখিয়েছে। অর্থনীতি উন্নত ও শক্তিশালী হয়েছে, দারিদ্র্য কমেছে’- বলেন ওবামা।

বিদায়বেলায় বর্ণবিদ্বেষ ও দেশটির গণতন্ত্র নিয়ে নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্রের এই ৪৪তম প্রেসিডেন্ট বলেন, আমাদের এসবে উর্ধ্বে উঠতে হবে, গণতন্ত্রকে সমুন্নত রাখতে হবে। মানুষের বাক স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। আইনকে সবার জন্য সমান করে তুলতে হবে।

স্ত্রী ফাস্র্টলেডি মিশেল ওবামাকে দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে তার পাশে থেকে শক্তি ও সাহস যোগানোর জন্য ধন্যবাদ জানান বারাক ওবামা। তিনি বলেন, স্ত্রী হিসেবেই শুধু নয়, বন্ধু হিসেবে পাশে ছিলো মিশেল। দুই মেয়ে সাসা ও মালিয়াকে উদ্দেশ্য করে ওবামা বললেন, আমি জীবনে যতটুকু করতে পেরেছি তার জন্য তোমাদের বাবা হিসেবে আমি গর্বিত।

কেউ স্বীকার করুক আর না করুক দেশটির গণতন্ত্র হুমকির মুখে বলেও মন্তব্য করেন ওবামা। অর্থনৈতিক বৈষম্য, বর্ণবাদ ও সমাজে বৈষম্য আমেরিকার জন্য প্রধান প্রতিবন্ধকতা বলে তিনি উল্লেখ করেছেন। একই সঙ্গে তা সমাধাননের জন্য সবাইকে আহ্বান জানান ওবামা।

‘আমাদের পরিবর্তন প্রয়োজন’ এই স্লোগান নিয়ে ২০০৮ সালে ওবামা ক্ষমতায় এসেছিলেন। সে কথা  স্মরণ করে ওবামা জানান, আমেরিকার সাধারণ জনগণ ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে সক্ষমতা অর্জন করেছে।

অভিবাসীরা যুক্তরাষ্ট্রকে সমৃদ্ধ করেছেন উল্লেখ করে মুসলমানদের প্রতি কোনো ধরনের বৈষম্যমূলক আচরণ থেকে বিরত থাকার কথা বলেছেন তিনি।

বিদায়ী ভাষণ অনুষ্ঠানে ২০ হাজারের বেশি মানুষ উপস্থিত ছিলেন। ভাষণ শেষে তিনি অনেকের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। এ সময় তার সঙ্গে ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামা, ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং তার স্ত্রী জিল বাইডেন উপস্থিত ছিলেন।

‘গুডবাই’ বললেন ওবামা

বাংলাদেশ সময়: ১০৫০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১১, ২০১৭
টিআই/এমএমকে

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।