ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

আন্তর্জাতিক

ফিরে দেখা-২০১৪

বছরের অভিশাপ আইএস-ইবোলা, ক্ষত ফার্গুসন-উড়োজাহাজ

হুসাইন আজাদ, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৪
বছরের অভিশাপ আইএস-ইবোলা, ক্ষত ফার্গুসন-উড়োজাহাজ ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: মহাকালের অতলে হারিয়ে গেলো আরও একটি বছর। সময়ের চক্রে আর কখনোই ফিরবে না ২০১৪ সাল।

তবে বছরটির রেখে যাওয়া স্মৃতি-বিস্মৃতি ঘুরবে-ফিরবে প্রকৃতি-পরিবেশ-মনুষ্য সভ্যতায়।

কী দিয়ে গেল বছরটি? এ হিসাব-নিকাশের ফলাফলে এখন আরও একবার উচ্ছ্বসিত অথবা বিষাদগ্রস্ত হচ্ছেন বিশ্ববাসী।

বছরজুড়ে যেসব ঘটনা মানুষের যোগ-বিয়োগের খাতাকে ভারী করেছে সেসব ঘটনার মধ্য থেকে শীর্ষ ১০টিকে আরেকবার স্মরণ করে দিচ্ছে বাংলানিউজ।

ইসলামিক স্টেট (আইএস)
চলতি বছরের ‘অভিশাপ’ হিসেবে উত্থান ঘটেছে ইরাক ও সিরিয়া অঞ্চলের কট্টর জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস। ইরাক ও সিরিয়ার মধ্যবর্তী বিশাল এলাকা দখলে নিয়ে ২৯ জুন বিশ্বব্যাপী খেলাফত প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয় আবু বকর আল বাগদাদি নামে এক বিতর্কিত সুন্নি নেতার নেতৃত্বাধীন আইএস।

ইরাকের অনেক গুরুত্বপূর্ণ শহর দখলের পর ১১ অক্টোবর সংগঠনটির যোদ্ধারা রাজধানী বাগদাদের উদ্দেশে রওনা দিলে তাদের ‘দমনে’ এগিয়ে আসে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা গোষ্ঠী। আইএসের বিরুদ্ধে এ সামরিক অভিযান শুরুতে ইরাকে চললেও পরে তা একসময়ের কড়া পশ্চিমা বিরোধী বাশার আল-আসাদের সম্মতি নিয়ে বিস্তৃত করা হয় সিরিয়ায়ও। আইএসের বিরুদ্ধে গণহত্যা, ধর্মান্তরকরণ, ধর্ষণ, দাসপ্রথা, বিদেশি নাগরিকদের জিম্মি করে শিরশ্ছেদ, সাংবাদিকদের ওপর হামলাসহ অসংখ্য অভিযোগ এনে এ সামরিক অভিযান শুরু করা হয়। ‘বিশ্বসম্প্রদায়ের’ অভিযানে আইএস’র শক্তি ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে বলে দাবি করছে পশ্চিমারা। আল-কায়েদা থেকে সৃষ্ট আইএস’র জন্ম হয় সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদবিরোধী সশস্ত্র লড়াই শুরু হওয়ার প্রেক্ষাপটে।

ইবোলা ভাইরাস
অনেক আগেই এ প্রাণঘাতী ভাইরাস শনাক্ত করা গেলেও এ বছরের এপ্রিল থেকে এক প্রকার মহামারি আকার ধারণ করে ইবোলা। পশ্চিম আফ্রিকা ছাড়িয়ে পুরো বিশ্ববাসীর কাছেই এ বছরের সবচেয়ে আতঙ্কের নাম ছিল ইবোলা ভাইরাস। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) তথ্যানুযায়ী, ইবোলায় আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত ৭ হাজার ৮৩৩ জন মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। এরমধ্যে বেশিরভাগই লাইবেরিয়া, সিয়েরা লিওন, গায়ানা ও কঙ্গোর নাগরিক। ১৯৭৬ সালে প্রথম শনাক্ত হওয়া এই ভাইরাসের নামকরণ হয়েছে কঙ্গোর ইবোলা নদীর নামে।

চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে, ইবোলা বা এবোলা নামে পরিচিত ভাইরাস ডিজিজ (ইভিডি), ইবোলা হেমোরেজিক ফিভার (ইএইচএফ) হলো ইবোলা ভাইরাসঘটিত এমন রোগ, যার কোনো নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই; আক্রান্ত ব্যক্তিদের নিরাময়ের চেষ্টায় ওরাল রিহাইড্রেশন থেরাপি কিংবা ইন্ট্রাভেনাস ফুইড দেওয়া হয়। এ রোগে আক্রান্ত হলে তার প্রায় ৫০-৯০ শতাংশ লোকই মারা যায়।

ইবোলার বিরুদ্ধে লড়াই করা আক্রান্ত রোগী, চিকিৎসক, সেবক, অ্যাম্বুলেন্সকর্মীদের ‘পারসন অব দ্য ইয়ার’ ঘোষণা করে মার্কিন প্রভাবশালী সাময়িকী টাইম।

ইউক্রেন-ক্রিমিয়া সংকট
অস্থিরতার শুরু ২০১৩ সালের নভেম্বরে হলেও এ বছরের ফেব্রুয়ারিতেই বিশ্ব রাজনীতিতে সবচেয়ে বেশি আলোচিত হয়ে ওঠে ইউক্রেন-ক্রিমিয়া সংকট। এই সংকট ইস্যুতে রাশিয়ার সঙ্গে পশ্চিমাদের বিবাদ ছিল স্নায়ুযুদ্ধের পর সবচেয়ে বেশি। ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে একটি সহযোগিতা চুক্তি বাতিলের লক্ষ্যে প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইয়ানুকভিচের প্রস্তুতিকে কেন্দ্র করে গণবিক্ষোভ শুরু হলে ২২ ফেব্রুয়ারি ক্ষমতাচ্যুত হয়ে পালিয়ে যান তিনি। এতে কিয়েভ পুরোপুরি ইইউপন্থিদের দখলে চলে গেলে রুশপন্থি ক্রিমিয়ায় শুরু হয় কিয়েভবিরোধী বিক্ষোভ। এক পর্যায়ে ক্রিমিয়াকে রুশ ফেডারেশনের অন্তর্ভুক্ত করতেও সেখানে তৎপরতা শুরু হয়। পূর্বাঞ্চলীয় দোনেৎস্ক ও লুহানস্কে শুরু হয় সশস্ত্র বিদ্রোহও।

এমন সংকটের ধারাবাহিকতায় ১৬ মার্চ ক্রিমিয়ায় গণভোটের আয়োজন করা হয়। গণভোটের রায় অনুযায়ী, ইউক্রেনের ওই এলাকাটির রুশ ফেডারেশনে একীভূত হয়ে যায়। ২১ মার্চ রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ক্রিমিয়াকে আনুষ্ঠানিকভাবে রুশ ফেডারেশনের অন্তর্ভুক্তি সংক্রান্ত একটি বিলে স্বাক্ষর করলে কড়া নিন্দা জানায় যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমারা। একইসঙ্গে রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ২৪ মার্চ দেশটিকে প্রভাবশালী জোট জি৮ থেকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়।

মালয়েশীয় উড়োজাহাজ
বছরটি বড় রকমেরই ‘অভিশাপ’ হয়ে থাকবে মালয়েশিয়ার বিমান পরিবহন খাতের জন্য। এক বছরে তিনটি যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ দুর্ঘটনা কবলিত হয়েছে দেশটির একাধিক এয়ারলাইন্সের।

প্রথম দুর্ঘটনা ৮ মার্চ। মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের এমএইচ৩৭০ ফ্লাইটটি ২৩৯ যাত্রী নিয়ে কুয়ালালামপুর থেকে বেইজিংয়ের উদ্দেশে রওয়ানা দেওয়ার পর লাপাত্তা হয়ে যায়। বোয়িং ৭৭৭-২০০ইআর উড়োজাহাজটি উড্ডয়নের এক ঘণ্টারও কম সময় পর দক্ষিণ চীন সাগরে এর সর্বশেষ অবস্থান রেকর্ড করে সংশ্লিষ্ট এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল। কিন্তু কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর আর কোনো খোঁজ মেলেনি এই উড়োজাহাজের। মাস কয়েক ধরে অনুসন্ধানের পরও কোনো ধ্বংসাবশেষ বা অন্য কোনো নিদর্শন খুজেঁ না পেয়ে মালয়েশীয় সরকার ঘোষণা করে, উড়োজাহাজটি গভীর সমুদ্রে ডুবে গেছে, এর কোনো যাত্রীই বেঁচে নেই।

এমএইচ৩৭০ উড়োজাহাজের শোক না কাটতেই ১৭ জুলাই আবারও দুঃসংবাদ পায় মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্স। এবার নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডাম থেকে ২৯৮ আরোহী নিয়ে কুয়ালালামপুরের উদ্দেশে ফেরার পথে ইউক্রেনের সংঘাতপূর্ণ এলাকায় ভূপাতিত হয় এর ফ্লাইট এমএইচ১৭। বলা হয়ে থাকে, ইউক্রেনের সরকারি বাহিনী ও রুশপন্থি বিদ্রোহীদের সংঘর্ষের সময় একটি ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে বিধ্বস্ত হয় উড়োজাহাজটি। যদিও এর দায় নিয়ে মস্কোর সঙ্গে ওয়াশিংটনসহ পশ্চিমাদের ব্যাপক কাঁদা ছোঁড়াছুড়ি হয়।

আর সর্বশেষ বছর অন্তেও ২৮ ডিসেম্বর ফের দুঃসংবাদ হজম করতে হয় মালয়েশিয়ান একটি উড়োজাহাজ কোম্পানিকেই। এবার দুর্ঘটনাকবলিত হয় কুয়ালালামপুরভিত্তিক এয়ার এশিয়ার একটি উড়োজাহাজ। ২৮ ডিসেম্বর ভোরে ইন্দোনেশিয়ার সুরাবায়া থেকে ১৬২ আরোহী নিয়ে সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি বিমানবন্দরের উদ্দেশে উড়াল দেওয়ার ঘণ্টা দেড়েকের মধ্যেই এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় কিউজেড৮৫০১ ফ্লাইটটির। প্রায় তিনদিন নিখোঁজ থাকার পর ৩০ ডিসেম্বর জাভা সাগরে উড়োজাহাজটির ধ্বংসাবশেষ ও এর যাত্রীদের উদ্ধারের দাবি করা হয়।

ফুটবল বিশ্বকাপ
বছরের সবচেয়ে আলোচিত আয়োজন ছিল সাম্বা নৃত্যের দেশ ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত ফিফা বিশ্বকাপ ২০১৪। ১৩ জুন থেকে ১৩ জুলাই পর্যন্ত পুরো ৩২ দিন বিশ্ববাসী মেতেছিল ফুটবলযজ্ঞে। ব্রাজিল বনাম ক্রোয়েশিয়ার ম্যাচের মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া এ উন্মাদনার আসর শেষ হয় আর্জেন্টিনা ও জার্মানির ফাইনালের মধ্য দিয়ে। দীর্ঘ প্রায় দুই যুগ পর ফাইনালে খেলা লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনাকে কাঁদিয়ে চতুর্থবারের মতো শিরোপা ঘরে তুলে নেয় জার্মানি। পুরো টুর্নামেন্টে অসাধারণ খেলে সেরা খেলোয়াড় হিসেবে গোল্ডেন বল জিতে নেন বার্সেলোনা সেনসেশন মেসি। সবচেয়ে বেশি ছয় গোল করে গোল্ডেন বুট জেতেন কলম্বিয়ান তারকা হামেস রদ্রিগেজ। আর সেরা গোলকিপারের পুরস্কার গোল্ডেন গ্লোব জেতেন জার্মানির ম্যানুয়াল ন্যুয়ের।

এ ফুটবলযজ্ঞের মধ্যে সবচেয়ে বড় অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে ব্রাজিল-কলম্বিয়া ম্যাচে। কলম্বিয়ান জুয়ান জুনিগার মারাত্মক ফাউলে আহত হয়ে পুরো টুর্নামেন্ট থেকেই ছিটকে পড়েন নেইমার। আর তার অনুপস্থিতিতে জার্মানির সঙ্গে সেমিফাইনালে ৭ গোল হজম করে বিদায় নিতে হয় পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের।

স্কটল্যান্ডের গণভোট
যুক্তরাজ্য থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পৃথক স্বাধীন স্কটল্যান্ড রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যে ১৮ সেপ্টেম্বর গণভোটের আয়োজন করা হয়। গণভোটকে সামনে রেখে স্কটিশ রাজনীতিকদের পাশাপাশি নির্ঘুম রাতযাপন করেন যুক্তরাজ্যের রাজনীতিকরাও। কিন্তু বিস্ময়করভাবে গণভোটে ‘স্বাধীনতা’কেই ঠেলে দেয় স্কটিশরা। তারা যুক্তরাজ্যের সঙ্গে একীভূত থাকার পক্ষে মত দেয়। এই গণভোটে স্কটল্যান্ডের মোট ভোটারের ৯৯ দশমিক ৯১ শতাংশ অংশ নেয়, এরমধ্যে ৫৫ দশমিক ৩ শতাংশই ‘স্বাধীনতা’কে প্রত্যাখ্যান করে।

বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাজ্য ও স্কটল্যান্ডের জনগণের পাশাপাশি ওই গণভোটের দিকে পুরো বিশ্বও তাকিয়ে ছিল। ওই গণভোটে স্কটল্যান্ডের ‘স্বাধীনতা’র দাবি উতরে গেলে পুরো ইউরোপেই বিচ্ছিন্নতার আওয়াজ উঠতো, কেবল গণভোটের আয়োজনে যেমনটি এগিয়ে এসেছিল স্পেনের কাতালোনিয়া অঞ্চল।

১৭০৭ সালে এক সমঝোতার মাধ্যমে ইংল্যান্ডের সঙ্গে একীভূত হয় পৃথক রাজ্য স্কটল্যান্ড। স্কটল্যান্ড ছাড়াও যুক্তরাজ্যের অপর তিনটি সাংবিধানিক রাষ্ট্র হলো ইংল্যান্ড, ওয়েলস ও উত্তর আয়ারল্যান্ড।

ফার্গুসন বিক্ষোভ
বলা হয়ে থাকে, ২০১৪ সাল ছিল যুক্তরাষ্ট্রের ‘বর্ণবাদী মুখোশ’ খোলার বছর। ৯ আগস্ট মিসৌরি অঙ্গরাজ্যের ফার্গুসনে ড্যারেন উইলসন নামে এক শ্বেতাঙ্গ পুলিশের গুলিতে মাইকেল ব্রাউন নামে এক নিরস্ত্র কৃষ্ণাঙ্গ কিশোর নিহত হয়। পুলিশের দাবি, দোকানের পাওনা না দেওয়ায় ব্রাউনকে ধরতে গেলে তিনি পুলিশের সঙ্গে আক্রমণাত্মক আচরণ করেন। তবে এ ঘটনার বিচার আদালতে গড়ালেও গ্র্যান্ডজুরি অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তাকে অব্যাহতি দেন। এরপরই যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে তুমুল বিক্ষোভ শুরু হয়। বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে নিউইয়র্ক, শিকাগোসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শহরেও। বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের সংঘর্ষের প্রেক্ষিতে প্রায় সাতদিন মিসৌরিতে সেনা মোতায়েন ছিল।  

গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন
ইসরায়েলের দখলদারিত্বের মনোভাব সবসময়ই নিন্দিত থেকেছে। চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে আবারও এ নিন্দিত আগ্রাসন চালায় পশ্চিমা মদতপুষ্ট রাষ্ট্রটি। এক ফিলিস্তিনি কিশোর ও তিন ইসরায়েলি কিশোরকে অপহরণ ও হত্যার জের ধরে গাজার সামরিক সংগঠন হামাস ও তেলআবিবের মধ্যে উত্তেজনার শুরু হয়। এরই এক পর্যায়ে ৮ জুলাই গাজায় ‘সন্ত্রাস দমনে’ সামরিক অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। পশ্চিমা পরোক্ষ মদতে ২৬ আগস্ট পর্যন্ত ইহুদী রাষ্ট্রটির সামরিক বাহিনীর হামলায় প্রায় ২ হাজার ২০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়। অপরদিকে ৬৭ সেনাসদস্যসহ ৭১ ইসরায়েলি নিহত হওয়ার দাবি করে তেলআবিব। অভিযান শুরুর এক সপ্তাহ পর ইসরায়েল সর্বাত্মক হামলা চালালে সাত সপ্তাহের মধ্যে গাজায় ১৭ হাজারেরও বেশি বসতবাড়ি পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায়। এছাড়া, ক্ষতিগ্রস্ত হয় আরও প্রায় ৩৮ হাজার বসতবাড়ি। তেলআবিবের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, হামাসের রকেট হামলার ভয়ে সাময়িকভাবে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যান প্রায় ৮ হাজার ইসরায়েলি। পরে মিশরের মধ্যস্থতায় বিশ্বসম্প্রদায়ের চাপের মুখে সামরিক অভিযান বন্ধ করতে বাধ্য হয় ইসরায়েল। হামাসের সঙ্গে যুদ্ধ বন্ধ সংক্রান্ত ওই চুক্তির দিনকয়েক পরই বিধ্বস্ত গাজা ছেড়ে চলে যায় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী।

পেশোয়ারের স্কুলে তালেবানি হত্যাযজ্ঞ
কেবল পাকিস্তানকে নয়, ইতিহাসের জঘণ্যতম শিশু হত্যাযজ্ঞ ঘটিয়ে ১৬ ডিসেম্বর বিশ্ববাসীকেও স্তম্ভিত করে দেয় সন্ত্রাসী গোষ্ঠী তালেবান। সেদিন সকালের শান্ত পেশোয়ার পরিণত হয় নিষ্পাপ শিশুর রক্ত অববাহিকায়। সেখানকার সামরিক বাহিনী পরিচালিত একটি স্কুলে হামলা চালিয়ে ১৩২ শিশুসহ অন্তত ১৪১ জনকে হত্যা করে তালেবান জঙ্গিরা। তালেবানদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর অভিযানের পাল্টা জবাবে এই নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালানো হয় বলে দাবি করা হয়। পুরো বিশ্বকে স্তব্ধ করে দেওয়া এ ঘটনায় অভিযুক্ত তালেবানদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নিয়ে চলেছে পাক সরকার।

হংকং বিক্ষোভ
হংকংয়ের ২০১৭ সালের নির্বাচনের প্রার্থী বাছাইয়ের প্রক্রিয়ার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অসন্তোষ প্রকাশ করে ২৬ সেপ্টেম্বর বিক্ষোভে নামে চীনশাসিত অঞ্চলটির গণতন্ত্রপন্থিরা। প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়ার সিদ্ধান্তে বলা হয়, ভোট সবাই দিতে পারলেও প্রার্থী বাছাই করবে একটি কমিটি। গণতন্ত্রপন্থিরা আশঙ্কা প্রকাশ করেন, ওই কমিটি বেইজিংনিয়ন্ত্রিত হবে, যারা বেইজিংপন্থি প্রার্থীই দাঁড় করানোর সুযোগ দেবেন নির্বাচনে। বেইজিংয়ের ইঙ্গিত ছাড়া প্রার্থী দেওয়ার সুযোগ দেওয়ার দাবিতে প্রথমে কিছু বামপন্থি ছাত্র এ বিক্ষোভ শুরু করলেও পরে এতে যোগ দেয় হাজারো জনতা, এমনকি বেইজিংবিরোধী অনেক আইনপ্রণেতাও। এসময় নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের কয়েক দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। তবে, সরকারের কৌশলে আস্তে আস্তে দুর্বল হতে থাকে বিক্ষোভের তীব্রতা। শেষ পর্যন্ত আলোচনায় মতৈক্যে পৌঁছাতে না পারলেও আদালতের নির্দেশ ১৫ ডিসেম্বর বিক্ষোভকারীদের শিবির উচ্ছেদ করে বেইজিংপন্থি সরকার। বিক্ষোভে প্রায় ৫০০ জন আহত ও এক হাজার জন গ্রেফতার হয়।

এছাড়া, বছরজুড়ে ভারতের জাতীয় লোকসভা নির্বাচন ও এতে ‘সাম্প্রদায়িক’ তকমাধারী নরেন্দ্র মোদীর দল বিজেপির নিরঙ্কুশ জয়লাভ, নাইজেরিয়ার সন্ত্রাসী গোষ্ঠী বোকো হারামের কয়েক দফা গণহত্যা এবং প্রায় ৩০০ স্কুলছাত্রী অপহরণ, থাইল্যান্ডে সামরিক শাসন, যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যবর্তী নির্বাচনে রিপাবলিকানদের জয়, ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দিলমা রৌসেফের দ্বিতীয় দফা জয়, দু’দফা প্রধানমন্ত্রিত্বের পর তুর্কি রাজনীতিক রজব তৈয়্যব এরদোয়ানের প্রেসিডেন্টের দায়িত্বগ্রহণ, পাকিস্তানি শিক্ষা অধিকারকর্মী মালালা ইউসুফজাই ও ভারতীয় শিশু অধিকারকর্মী কৈলাস সত্যার্থীর যৌথভাবে শান্তিতে নোবেল জয়, বাউন্সারের আঘাতে অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটার ফিলিপ হিউজের অকাল মৃত্যু, সিডনির কফিশপে সন্ত্রাসী হামলা ও জিম্মি সংকট এবং নিউইয়র্কের ব্রুকলিনে দুই পুলিশ সদস্যকে গুলি করে আলোচিত ছিল।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।