ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

আন্তর্জাতিক

কানকুন, জলবায়ু পরিবর্তন এবং উইকিলিকস

অ্যামি গুডম্যান | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৩৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১২, ২০১০
কানকুন, জলবায়ু পরিবর্তন এবং উইকিলিকস

কানকুনে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে শেষ পর্যন্ত একটি সমঝোতায় পৌঁছানো গেছে বলে জানা গেছে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে সম্মেলনে উপস্থিত সব দেশের প্রতিনিধিরা একমত হয়েছেন।

তবে এর কর্মকৌশল নির্ধারণ হয়নি। সম্মেলন চলাকালীন এই প্রবন্ধটি লেখেন উত্তর আমেরিকার বিখ্যাত সাংবাদিক অ্যামি গুডম্যান। প্রকাশিত হয় ডেমোক্রাসিনাও.ওআরজি-এ। লেখাটির গুরুত্ব বিবেচনা করে কানকুন শেষের পরেও তা প্রকাশ করা হলো। অনুবাদ করেছেন বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.-এর নিউজরুম এডিটর নুসরাত জাহান

জাতিসংঘের পৃষ্ঠপোষকতায় কানকুনে তুমুল আলাপ-আলোচনা চলছে। মনুষ্যসৃষ্ট বৈশ্বিক উষ্ণতা কিভাবে কমিয়ে আনা যায় এ বিষয়ে গভীর আলোচনায় মগ্ন দেশ-বিদেশের প্রতিনিধিরা। গত বছরের ব্যর্থ কোপেনহেগেন সম্মেলনের পর জলবায়ু বিষয়ে এটাই প্রথম গুরুত্বপূর্ণ এবং বড় কোনো সম্মেলন এবং সবচেয়ে উষ্ণতম দশকের শেষে গিয়ে তা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

এ সম্মেলন নিয়ে উদ্বেগ যতো চড়া, প্রত্যাশা ততটাই কম। সম্প্রতি আমরা উইকিলিকস নামক ওয়েবসাইটে শত শত মার্র্কিন গোপন নথি ফাঁস হওয়ার খবর শুনেছি। একইসঙ্গে এই একই যুক্তরাষ্ট্র, ইতিহাসের সবচেয়ে দূষিত দেশ, এখানে অত্যন্ত নোংরা কাজে লিপ্ত বলেও শোনা যাচ্ছে। এক সাংবাদিক (জুলিয়ান) সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।     

নোংরা কাজই বটে! গত বছর প্রেসিডেন্ট ওবামা এক ঝটিকা সফরে কোপেনহেগেন যান এবং মাত্র কয়েকটি দেশের একটি দল নিয়ে অনেকটা জোরপূর্বকই ‘কোপেনহেগেন চুক্তি’ করেন। এতে এমন এক পরিকল্পনার কথা বলা হয়েছে যেখানে কিছু দেশ জনসম্মুখে কার্বন নির্গমণ কমানোর অঙ্গীকার করবে এবং যা যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়ায় যাবে। একইসঙ্গে সম্পদশালী, উন্নত দেশগুলো দরিদ্র দেশগুলোকে জলবায়ু পরিবর্তনের পরিণতি মোকাবেলায় কোটি কোটি ডলার দেবে এবং উন্নয়নশীল দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপখাইয়ে নেবে। একইসঙ্গে উন্নত দেশগুলোর উদ্ভাবিত সবুজ-জ্বালানির অর্থনীতি অনুসরণ করবে। এগুলো শুনতে হয়তো ভালই লাগছে। কিন্তু প্রকৃতঅর্থে কিয়োটো প্রটোকল চুক্তিকে পাশ কাটানোর জন্যই এ নকশা করা হয়েছিল। ১৯০টি বা তারও বেশি দেশ কিয়োটো প্রটোকলে স্বাক্ষর করে। অথচ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এতে স্বাক্ষর করেনি।

এক্ষেত্রে প্রকৃত ঘটনাটি কি ছিলো, উইকিলিকসের তারবার্তা তা ব্যাখ্যা করতে সাহায্য করেছে। কোপেনহেগেন সম্মেলনে উন্নত বিশ্বের অন্যতম প্রধান সমালোচক ভারত মহাসাগরে অবস্থিত ছোট দ্বীপপুঞ্জ মালদ্বীপ প্রজাতন্ত্রের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাসিদও এ চুক্তিতে সই করেন। উইকিলিকসে ফাঁস হওয়া ২০১০ সালের ১০ ফেব্রুয়ারির এক গোপন মার্কিন নথিতে যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত মালদ্বীপের রাষ্ট্রদূত আব্দুল গফুর মোহাম্মদের কিছু তথ্যের উল্লেখ করা হয়। এতে দেখা যায়, জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক বিশেষ মার্কিন দূত জোনাথন পের্শিং এর সঙ্গে এক বৈঠকে নাসিদ বলেন, ‘মালদ্বীপের মতো জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার দেশগুলো বৃহৎ অর্থনীতির দেশগুলোর নির্ধারিত সাহায্য পেলে উপকৃত হবে। তবে ওই ধনী দেশগুলোকে সমর্থন করার মধ্য দিয়েই কেবল এ সুবিধাটা পাওয়া সম্ভব বলেও অন্যান্য দেশগুলো উপলব্ধি করেছে। ’ এসময় মালদ্বীপের রাষ্ট্রদূত সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাওয়া থেকে দ্বীপটিকে রক্ষার জন্য পাঁচ কোটি মার্কিন ডলার সাহায্যের আবেদন করেন।    


ওই বৈঠকের এক সপ্তাহ পর জলবায়ু কার্যক্রম সংক্রান্ত ইউরোপীয় কমিশনার কোনি হেডেগার্ডের সঙ্গে একটি বৈঠক করেন জোনাথন পের্শিং। ফাঁস হওয়া তারবার্তা থেকে জানা যায় কোনি ছোট দ্বীপ রাষ্ট্রের মিত্রদের ‘উৎকৃষ্ঠ মিত্র’ বলাসহ তাদের আর্থিক সাহায্যের পরামর্শ দেন। ২০১০ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারির আরেকটি বার্তায় বলা হয়, ‘বলিভিয়া, ভেনেজুয়েলা, কিউবা, নিকারাগুয়া, ইকুয়েডরের মতো অসহযোগী দেশগুলোর প্রতি আমরা নিষ্ক্রিয় থাকবো এবং তাদের প্রান্তিক দেশে পরিণত করবো। ’ এ বৈঠকে উপস্থিত আন্তর্জাতিক অর্থনীতি বিষয়ে জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত পরামর্শক মাইকেল ফ্রোম্যানও এতে সম্মতি জানান। অর্থাৎ এখানে বার্তাটা খুবই পরিষ্কার: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আছো তো তুমি সাহায্যের জোয়ারে ভেসে যাবে। আর যদি বিরোধিতা করো তাহলে শাস্তি ভোগ করবে।

উল্লেখ্য, কোপেনগেহেনসহ কানকুনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন ইউরোপীয় কমিশনার কোনি হেডেগার্ড।

ফাঁস হওয়া এসব গোপন তারবার্তার সত্যতা সম্পর্কে এবারের কানকুন সম্মেলনে পের্শিং এর কাছে জানতে চাওয়া হলে কোনো সদুত্তর পাওয়া যায়নি। একইসঙ্গে ইকুয়েডর বা বলিভিয়ার ভাগ্যে কি আছে তাও জানাননি তিনি।  

তবে জাতিসংঘে বলিভিয়ার রাষ্ট্রদূত পাবলো সোলোনের কাছে এর উত্তর আছে। এ ঘটনার মধ্যেই উত্তর আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘একটি বিষয় আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি যে তারা বলিভিয়া ও ইকুয়েডরের তহবিল ছাঁটাই করবে। এটাই বাস্তব। আর তারা এটা খুব স্পষ্টভাবেই বলেছে, ‘আমরা অনুদানের পরিমাণ কমিয়ে ফেলতে যাচ্ছি, কারণ তুমি কোপেনগেহেন চুক্তি সমর্থন করোনি। ’ এই কথার মানে তো হুমকি দেওয়া। ’

কানকুন আলোচনার ফলাফল নিয়ে সোলোন আশাবাদী নন। তিনি বলেন, ‘এতে তাপমাত্রা চার ডিগ্রী পর্যন্ত বাড়ানোর আবেদন করা হবে। এটা মানুষের জীবন ও পৃথিবীর জন্য হবে বিপর্যয়কারী। ’
 
বাংলাদেশ স্থানীয় সময়: ০৫৪৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১২, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।