ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

আন্তর্জাতিক

টাইম সাময়িকীকে দেওয়া জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের সাক্ষাৎকার

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮০৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১, ২০১০
টাইম সাময়িকীকে দেওয়া জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের সাক্ষাৎকার

‘গোপনীয়তা অনেক ক্ষেত্রেই গুরুত্বপুর্ণ। ’ উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জে টাইম সাময়িকীর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক রিচার্ড স্টেনজেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন।

স্টেনজেল তাকে জিজ্ঞাসা করেন, বৈশ্বিক সম্পর্ক বা কূটনীতিতে গোপনীয়তা সম্পদ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে এমন দৃষ্টান্ত আছে কিনা। মার্কিন কূটনৈতিক তৎপরতার গোপন নথি জনসম্মুখে প্রকাশ করে দেওয়ায় এ মুহূর্তে বিশ্বের সব গণমাধ্যমেই শিরোনাম হয়েছে উইকিলিকস। নথি ফাঁসের ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ বিশ্ব নেতৃবৃন্দ অত্যন্ত বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছে। তবে গোপনীয়তার নিজস্ব স্থান আছে জানিয়ে অ্যাসাঞ্জে বলেন, ‘আমরা আমাদের সংবাদ উৎসের পরিচয় গোপন রাখি। এটা করতে আমাদের প্রচুর দুর্ভোগ পোহাতে হয়। তবে নিপীড়ন, নির্যাতন সংক্রান্ত খবরের বেলায় গোপনীয়তা ব্যবহার করা উচিৎ নয়। ’

যুক্তরাষ্ট্রের পথ ধরে চীন ও রাশিয়ার গোপন নথি ফাঁস করতে চান কি না তাকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘হ্যা, অবশ্যই। আসলে, আমরা বিশ্বাস করি এই সমাজগুলোরই (চীন, রাশিয়া) সংশোধনের সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। বিশাল নথি ফাঁসের পর বিশ্বজুড়ে প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘গণমাধ্যমে নজরদারি ও প্রতিক্রিয়া এতো বেশি ছিল যে, এটা বুঝতেই আমরা আমাদের সামর্থ্যরে খেই হারিয়ে ফেলেছিলাম। ’

৩৬ মিনিটের সাক্ষাৎকারে অ্যাসাঞ্জে জানান, নির্যাতন-নিপীড়নের খবর প্রকাশ করার মধ্য দিয়ে দুই উপায়ে ইতিবাচক পরিবর্তন আসতে পারে। জনসম্মুখে কর্মরত নিপীড়নকারী সংগঠনগুলোর উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘প্রথমত, এমন উপায়ে সংশোধন করতে হয় যাতে তারা তাদের প্রচেষ্টা ও জনস্মুখে নিজেদের তুলে ধরার জন্য গর্ববোধ করে। দ্বিতীয়ত, ভেতর থেকে ওই সংগঠনগুলোর কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়, বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে এবং এর ফলে দক্ষ হয়ে উঠার পথ বন্ধ হয়ে যায়। আমার এই ফলাফলটা খুব ভালো। সংগঠনগুলো দক্ষ, প্রকাশ্য ও সৎ হয় অথবা গোপন, ষড়যন্ত্রমূলক ও অদক্ষ হয়। ’

যুক্তরাষ্ট্র কোন ক্যাটাগরির মধ্যে পড়ে? তিনি উত্তর দেন, ‘সমাজ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র আরও গোপন হয়ে যাচ্ছে। দেশটির খোলাখুলি বা মুক্তমনা বৈশিষ্ট্য সম্ভবত ১৯৭৮ সালে তুলনামূলকভাবে সবচেয়ে বেশি ছিলো। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এরপর থেকে তা কমতে থাকে। এর কারণ হচ্ছে, আমেরিকার বিশাল অর্থনীতি। আরও কারণ রয়েছে। ’ তিনি বলেন, ‘সমাজসংস্কারের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্ররে চেয়ে চীনের সম্ভাবনাই বেশি। চীন সরকার, তার জননিরাপত্তা সেবা, স্বাধীন কথা বলার আপাত বিপদ ইত্যাদির প্রতি খেয়াল রেখে এবং যখন কেউ একজন বলে যে দেশটিতে ভয়ংকর কিছু ঘটছে। আমি আসলে মনে করি এগুলো সবই আশাবাদী চিহ্ণ। কারণ এর মানে হচ্ছে, কথার মাধ্যমে এখনো সমাজসংস্কার সম্ভব এবং মতা কাঠামো এখনো সহজাতভাবেই রাজনৈতিক, আর্থিক নয়। সুতরাং সাংবাদিকতা ও লেখালেখি পরিবর্তন সাধন করতে সম এবং এ কারণেই চীন সরকার এতো ভীত। ’

অপরদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলো সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘সমাজের মৌলিক উপাদানগুলো ভীষণভাবে অর্থব্যবস্থার মধ্যে ঢুকে পড়েছে, ফলে রাজনৈতিক পরিবর্তনের পরেও অর্থনৈতিক পরিবর্তন আসবে না। অন্য কথায়, রাজনৈতিক পরিবর্তনের পরেও প্রকৃত কোনো পরিবর্তন আসবে না। ’

অ্যাসাঞ্জে উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাকালীন নীতিগত দিক নিয়ে কথা বলেন। একইসঙ্গে কিভাবে এই অনলাইনভিত্তিক গণমাধ্যমটি বিকশিত হলো তাও তিনি আলোচনা করেছেন। প্রতিষ্ঠার বছর ২০০৬ সালের শুরুর দিকে কোয়ালিটি ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এ ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হচ্ছিল। তিনি বলেন, ‘আমরা ভেবেছিলাম, ব্লগার ও উইকিপিডিয়ার লেখকদের বিশ্লেষণ আমরা পাব। যা হয়ত নিউইয়র্ক টাইমসের প্রথম পাতা বা বিড়াল অন্য কিছুর চেয়ে মজার হবে। ’

বাংলাদেশ সময়: ২০৪০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০১, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।