সুদানের দারফুর অঞ্চলে এক মসজিদে ড্রোন হামলায় অন্তত ৭৮ জন নিহত হয়েছেন বলে বিবিসিকে জানিয়েছেন এক চিকিৎসক। আর আহত হয়েছেন আরও প্রায় ২০ জন।
শুক্রবার সকালে এল-ফাশের শহরের ওই মসজিদে নামাজ চলাকালে হামলাটি হয়। স্থানীয়রা জানান, ড্রোনটি সরাসরি মসজিদে আঘাত হানলে মুহূর্তেই ডজনখানেক মানুষ প্রাণ হারান। ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে মরদেহ উদ্ধারের কাজ এখনও চলছে।
এই হামলার জন্য আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসকে (আরএসএফ) দায়ী করা হচ্ছে। তবে তারা কোনো দায় স্বীকার করেনি। আরএসএফ ও সেনাবাহিনী দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে ভয়াবহ গৃহযুদ্ধে লিপ্ত।
এল-ফাশের দখলের লড়াই এখন সবচেয়ে তীব্র আকার নিয়েছে। এটি দারফুর অঞ্চলে সেনাবাহিনীর শেষ ঘাঁটি। এখানে তিন লাখেরও বেশি সাধারণ মানুষ অবরুদ্ধ অবস্থায় রয়েছেন। বিশ্লেষকদের আশঙ্কা, শহরটি দখলে নিলে আরএসএফ শত্রু বিবেচিত জাতিগোষ্ঠীগুলোর ওপর ভয়াবহ নিপীড়ন চালাতে পারে।
বিবিসি ভেরিফাই নিশ্চিত করেছে, মসজিদের পাশে প্রায় ৩০টি মরদেহ কাফনের কাপড় ও চাদরে মোড়ানো অবস্থায় রাখা হয়েছে।
সম্প্রতি আরএসএফ নতুন করে এল-ফাশেরের ওপর আক্রমণ শুরু করেছে। এর মধ্যে শহরের কাছে অবস্থিত বাস্তুচ্যুতদের আবু শউক শিবিরে ভয়াবহ হামলার খবর পাওয়া গেছে। স্যাটেলাইট ছবিতে দেখা যাচ্ছে, শিবিরের বড় অংশ এখন আরএসএফের নিয়ন্ত্রণে।
ইয়েল ইউনিভার্সিটির হিউম্যানিটারিয়ান রিসার্চ ল্যাব জানিয়েছে, আরএসএফ যৌথ বাহিনীর সদরদপ্তরেও প্রবেশ করেছে। এটি সেনাদের জন্য কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যাচাইকৃত ফুটেজে বিশাল ওই কমপ্লেক্সে আরএসএফ যোদ্ধাদের অবস্থানও দেখা গেছে।
শহরটি পুরোপুরি দখল হলে পশ্চিম সুদানে আরএসএফের আধিপত্য সুসংহত হবে এবং দেশ কার্যত দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়বে—উত্তর ও পূর্বে সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণ, আর পশ্চিমে আরএসএফের কর্তৃত্ব।
জাতিসংঘ শুক্রবার সতর্ক করে বলেছে, সংঘাতটি ক্রমেই জাতিগত রূপ নিচ্ছে। উভয় পক্ষই প্রতিপক্ষকে সহযোগিতার দায়ে সাধারণ মানুষের ওপর হামলা চালাচ্ছে।
তবে আন্তর্জাতিক সংস্থা ও মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, আরএসএফ পদ্ধতিগতভাবে আরব নয় এমন সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে জাতিগত নিধন চালাচ্ছে। চিকিৎসাসেবা সংস্থা ডক্টরস উইদাউট বর্ডারসের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আরএসএফ সদস্যরা প্রকাশ্যে বলেছে তারা এল-ফাশেরকে অ-আরব জনগোষ্ঠী থেকে ‘পরিষ্কার’ করতে চায়।
যদিও আরএসএফ এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং দাবি করেছে, এসব গোষ্ঠীগত দ্বন্দ্বের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই।
আরএইচ