ঢাকা, বুধবার, ৪ আষাঢ় ১৪৩২, ১৮ জুন ২০২৫, ২১ জিলহজ ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

ইরান-ইসরায়েল সংঘাত আর কতদিন চলবে?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫:১২, জুন ১৮, ২০২৫
ইরান-ইসরায়েল সংঘাত আর কতদিন চলবে? তেল আবিবের আকাশে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ঠেকাতে কাজ করে আয়রন ডোম

ইসরায়েলের আকাশে গত কয়েক রাত ধরেই একই দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি দেখা যাচ্ছে। ইরানের এক ঝাঁক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুটে আসছে।

আর ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সেগুলো ঠেকাতে পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ছে। ইরানের বেশির ভাগ ক্ষেপণাস্ত্র ঠেকানো গেলেও সবসময় পারা যাচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো— এই দৃশ্য আর কতদিন দেখা যাবে?

ইসরায়েলি গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের ধারণা অনুযায়ী, ইরানের হাতে প্রায় দুই হাজার ক্ষেপণাস্ত্র ছিল, যেগুলো এক হাজার ২০০ মাইল দূরত্বে ইসরায়েল পর্যন্ত পৌঁছাতে সক্ষম। কিন্তু সংঘাত শুরুর ঠিক আগে, শুক্রবার ভোরে ইসরায়েলের গোপন অভিযান ও বিমান হামলার মাধ্যমে ইরানের অনেক ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করে দেওয়া হয়।

এরপর থেকে ইরান গত পাঁচ দিনে চারশর মতো ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে বলে জানায় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী। তারা দাবি করেছে, এর মধ্যে ১২০টি ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ কেন্দ্র ধ্বংস করা হয়েছে। ইসরায়েল আরও জানায়, তারা তেহরানের আকাশসীমায় নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে নির্ধারিত সময়ের আগেই। এর ফলে ইরানি বাহিনীর নতুন করে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার ক্ষমতা আরও সীমিত হয়ে যাওয়ার কথা।

ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার গতি অনেক কমে গেছে। শুক্রবার প্রথম রাতে তারা ১৫০টির মতো ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছিল। আর মঙ্গলবার রাতে সেই সংখ্যা কমে মাত্র ২৫টিতে দাঁড়ায়। এর আগে বিকেলে ১০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়। অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে, সংখ্যার হিসেবে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার পরিমাণ বেশ কমে যাচ্ছে।  

ইরানকে এখন খুব কঠিন একটা সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে, বলছিলেন ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের সামরিক বিশ্লেষক ফাবিয়ান হিনজ। তিনি বলেন, তাদের ক্ষেপণাস্ত্র মজুত সীমিত। তারা এখন যেভাবে ছুড়ছে, সেই পরিমাণে তো পুনরায় তৈরি সম্ভব নয়।

তিনি আরও বলেন, শুধুমাত্র শুক্রবার রাতে ইরান ১৫০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়লেও, গত অক্টোবরে তারা ২০০টি ছুড়েছিল হিজবুল্লাহ ও হামাস নেতাদের হত্যার প্রতিশোধ নিতে। অর্থাৎ এখন তাদের আক্রমণ শক্তি আরও কমেছে।

তবে ইসরায়েলি বিশ্লেষকেরা সতর্ক করে বলছেন, ইরানের অর্ধেকেরও বেশি অস্ত্রাগার এখনও অক্ষত রয়ে গেছে, এবং অনেক ক্ষেপণাস্ত্র গোপন ভূগর্ভস্থ ডিপোতেও থাকতে পারে।

ইসরায়েল  ইরানের আক্রমণ ক্ষমতা কিছুটা কমাতে পেরেছে ঠিকই, তবে তাদের নিজেদেরই প্রতিরক্ষা চালিয়ে যাওয়া খুব ব্যয়বহুল হয়ে উঠেছে। ইসরায়েলের শীর্ষস্থানীয় অর্থনৈতিক দৈনিক দ্য মার্কার রিপোর্ট করেছে, রোজ রাতে প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে তাদের খরচ হচ্ছে প্রায় এক বিলিয়ন শেকেল, অর্থাৎ প্রায় ২৮৫ মিলিয়ন ডলার।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এইভাবে দীর্ঘ সময় ধরে এমন লড়াই চালানো সম্ভব নয়, অন্তত এই মাত্রায় নয়। অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্র থেকে নতুন অস্ত্র না এলে বা মার্কিন সেনারা সরাসরি অংশ না নিলে, ইরান যদি একই হারে হামলা চালাতে থাকে, তাহলে ইসরায়েল মাত্র ১০–১২ দিনই প্রতিরক্ষা চালিয়ে যেতে পারবে।

মার্কিন ও ইসরায়েলি গোয়েন্দা বিশ্লেষণে যুক্ত থাকা এক কর্মকর্তা বলেন, এমনকি এই সপ্তাহের শেষ দিকেই ইসরায়েলকে হয়তো আরও কম ক্ষেপণাস্ত্র ঠেকানোর সিদ্ধান্ত নিতে হবে, কারণ প্রতিটি প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র এখন হিসাব করে ছুড়তে হবে। তিনি বলেন, তাদের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এখনই চাপে পড়েছে। তাই বেছে বেছে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র থামাতে হবে।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মিসাইল ডিফেন্স অ্যাডভোকেসি অ্যালায়েন্সের সঙ্গে যুক্ত ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র বিশেষজ্ঞ তাল ইনবার বলেন, ২০১৪ সালে হামাসের সঙ্গে যুদ্ধে ইসরায়েল যুদ্ধবিরতির চেষ্টা করেছিল ঠিক ওই সময়, যখন তাদের প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র শেষ হয়ে যাচ্ছিল। তিনি বলেন, এবারো প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্রের মজুত বড় একটি ফ্যাক্টর হয়ে উঠতে পারে।

ইসরায়েল বহুস্তরবিশিষ্ট প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ব্যবহার করে। এর মধ্যে নিচু উচ্চতায় ছোড়া রকেট ঠেকাতে ব্যবহার হয় বিখ্যাত আয়রন ডোম। মাঝারি উচ্চতার জন্য ব্যবহৃত হয় ডেভিড’স স্লিং ও অ্যারো সিস্টেম। আর যুক্তরাষ্ট্র সরবরাহ করেছে প্যাট্রিয়ট ও থাড।

ইনবার বলেন, ইরানের ভারী ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র থামাতে অ্যারো সিস্টেম ব্যবহার করতে হয়। এর জন্য প্রতিটি প্রতিরোধক ক্ষেপণাস্ত্রের জন্য গুনতে হয় প্রায় ৩০ লাখ ডলার। আর এসব ক্ষেপণাস্ত্র এত উচ্চগতিতে আসে, আয়রন ডোম দিয়ে সেগুলো থামানো ৯ এমএম পিস্তল দিয়ে রকেট থামানোর মতোই অকার্যকর।

মিডলবেরি ইনস্টিটিউটের জেমস মার্টিন সেন্টারে কর্মরত গোয়েন্দা বিশ্লেষক জিম ল্যামসন বলেন, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন কেন্দ্রগুলো এখন ইসরায়েলের লক্ষ্যবস্তু হওয়ায় তাদের ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন ধীরে ধীরে কমে যাবে। যদি সরকার পাল্টে না যায় বা তারা অস্ত্র ছেড়ে না দেয়, তাহলে তাদের ক্ষেপণাস্ত্র শক্তি পুনরুদ্ধার করা কঠিন হবে। এটি ইসরায়েলের বড় কৌশলগত অর্জন হয়ে উঠবে।

ওয়াশিংটন পোস্ট অবলম্বনে লিখেছেন বাংলানিউজের সিনিয়র নিউজরুম এডিটর রকিবুল সুলভ

আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।