রাশিয়ার চালানো ভয়াবহ ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে অন্তত ১৪ জন নিহত এবং ৪৪ জন আহত হয়েছে। ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার (১৭ জুন) ভোরে চালানো এ হামলায় শহরের ২৭টি স্থানে আঘাত হানে রুশ বাহিনী।
দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইহর ক্লাইমেঙ্কো জানান, হামলায় আবাসিক ভবন ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। একটি আবাসিক ভবনের ৩০টি অ্যাপার্টমেন্ট সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। ধ্বংসস্তূপে এখনও নিখোঁজদের খোঁজে অভিযান চলছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, আজ শত্রু ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র কোনো কিছুই বাদ রাখেনি। এটি ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে পূর্ণমাত্রার আগ্রাসন শুরুর পর কিয়েভে অন্যতম বৃহত্তম হামলা।
কিয়েভের স্ভিয়াতোশিনস্কি ও সোলোমিয়ানস্কি জেলায় বহু মানুষ আহত হয়েছেন। শহরের অন্য দুটি এলাকায় অগ্নিকাণ্ডের খবর পাওয়া গেছে বলে জানান মেয়র ভিতালি ক্লিচকো। তিনি এও বলেন, হামলায় ছড়িয়ে পড়া শর্যপনেলের (বিস্ফোরণের ধাতব টুকরো) আঘাতে একজন মার্কিন নাগরিক প্রাণ হারিয়েছেন। তিনি এটিকে যুক্তরাষ্ট্রকে ‘সম্পূর্ণ অবমাননা’ করা হয়েছে বলেও মন্তব্য করেছেন।
হামলাটি এমন সময় ঘটে যখন বিশ্বনেতারা কানাডায় জি-৭ সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন । ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি সম্মেলনে অংশ নিতে মঙ্গলবারই রওনা করেছেন।
ইউক্রেনের পররাষ্ট্র উপমন্ত্রী আন্দ্রিই সিবিহা মনে করছেন, এই ‘বৃহৎ ও নিষ্ঠুর’ হামলাটি পরিকল্পিতভাবে জি-৭ সম্মেলনের সঙ্গে সময় মিলিয়ে চালানো হয়েছে। এর উদ্দেশ্য, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি একধরনের ‘অসম্মান’ প্রদর্শন।
তিনি সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, পুতিন ইচ্ছাকৃতভাবে এটি করেছে, জি-৭ চলার সময়েই। এটি যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্য মিত্রদের জন্য একটি স্পষ্ট বার্তা, যারা যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানিয়ে আসছেন। পুতিন চান যেন জি-৭ নেতারা দুর্বল দেখায়। কেবল শক্ত প্রতিক্রিয়া ও মস্কোর ওপর বাস্তব চাপই তার ভুল প্রমাণ করতে পারে।
কানাডা সফরের আগে হামলার ঘটনাটিকে ‘রাশিয়ার অন্যতম ভয়ংকর আক্রমণ’ বলে আখ্যা দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। তিনি বলেন, পুতিন এমন হামলা করছেন কারণ তিনি এখনও যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন।
হোয়াইট হাউসের প্রতি সমর্থন আরও জোরালো করতে এবং পুতিনের ওপর চাপ বাড়াতে ট্রাম্পের সঙ্গে নিজেই সরাসরি আলোচনায় বসার পরিকল্পনা করছেন জেলেনস্কি।
যুক্তরাষ্ট্রের চাপে রাশিয়া ও ইউক্রেন সম্প্রতি যুদ্ধবিরতির বিষয়ে দুই দফা সরাসরি আলোচনায় বসেছে। তবে এখন পর্যন্ত কেবল বন্দী বিনিময় ও মৃতদেহ হস্তান্তর ছাড়া কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। এর মধ্যেই ১ জুন ইউক্রেনের এ অভিযানে মস্কোর একটি প্রধান বোমারু ঘাঁটি ধ্বংস হয়। এর প্রতিক্রিয়ায় রাশিয়া তাদের বিমান হামলা বাড়িয়ে দিয়েছে।
সর্বশেষ হামলায় রাশিয়া ১৭৫টি ড্রোন ও ১৪টির বেশি ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছে বলে জানিয়েছে কিয়েভ কর্তৃপক্ষ। এদিকে ওডেসা শহরেও রাশিয়ার হামলায় আরও ১৩ জন আহত হয়েছেন।
এমজে
