যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে সতর্ক করেছেন যেন এখনই ইরানের ওপর হামলা না চালানো হয়। কারণ, ওয়াশিংটন ও তেহরানের মধ্যে নতুন এক পরমাণু চুক্তি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হচ্ছে বলে জানান তিনি।
হোয়াইট হাউসে বুধবার(২৯) সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প বলেন, আমি নেতানিয়াহুকে বলেছি, এখনই হামলা অনুচিত হবে, কারণ আমরা একটি সমাধানের খুব কাছাকাছি।
সম্প্রতি ওমান ও ইতালিতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে একাধিক দফা আলোচনা হয়েছে। সেই আলোচনার সূত্র ধরে সম্ভাব্য সমঝোতার আশা করছেন উভয় পক্ষের কূটনীতিকরা।
ইসরায়েল বেশ কিছুদিন ধরেই ইরানের পরমাণু স্থাপনায় বিমান হামলার হুমকি দিয়ে আসছে। পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় ইরান হুঁশিয়ারি দিয়েছে, এমন কোনো আগ্রাসনের জবাব তারা কঠোরভাবে দেবে।
এই প্রেক্ষাপটে, ইরান তাদের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কার্যক্রম সাময়িকভাবে স্থগিত রাখতে পারে— যদি যুক্তরাষ্ট্র কিছু নির্দিষ্ট শর্ত মেনে নেয়। দুইজন ইরানি কর্মকর্তা সংবাদনাধ্যমকে জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র যদি তেহরানের জব্দকরা অর্থ ছেড়ে দেয় এবং বেসামরিক কাজে ইউরেনিয়াম পরিশোধনের অধিকারকে স্বীকৃতি দেয়, তাহলে একটি ‘রাজনৈতিক সমঝোতা’ সম্ভব হতে পারে।
তারা আরও জানান, যদি যুক্তরাষ্ট্র এসব শর্তে সম্মত হয়, তাহলে ইরান এক বছরের জন্য ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কার্যক্রম বন্ধ রাখতে রাজি।
এই অবস্থার মধ্যেই আন্তর্জাতিক পরমাণু সংস্থা (আইএইএ)-এর মহাপরিচালক রাফায়েল মারিয়ানো গ্রোসি মন্তব্য করেছেন, আলোচনার ফল এখনো পরিষ্কার নয়, তবে চলমান আলোচনা ইতিবাচক ইঙ্গিত দেয়।
তিনি বলেন, আমি মনে করি এটি একটি চুক্তির ইচ্ছার বহিঃপ্রকাশ, এবং সেটিই এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত ঐতিহাসিক পরমাণু চুক্তি, ‘জয়েন্ট কমপ্রিহেনসিভ প্ল্যান অব অ্যাকশন’ (জেসিপিওএ), ইরানের পরমাণু কর্মসূচির ওপর সীমা নির্ধারণ করেছিল। এর বদলে তেহরানকে কিছু নিষেধাজ্ঞা থেকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল।
তবে ট্রাম্প প্রশাসন ২০১৮ সালে একতরফাভাবে যুক্তরাষ্ট্রকে ওই চুক্তি থেকে প্রত্যাহার করে নেয়। এতে করে তেহরান ও ওয়াশিংটনের সম্পর্কের চরম অবনতি ঘটে।
নতুন চুক্তির আলোচনা ঘিরে যুক্তরাষ্ট্র এখনও জোর দিয়ে বলছে, ইরানকে অবশ্যই ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ স্থায়ীভাবে বন্ধ করতে হবে, কারণ এই প্রযুক্তিকে সম্ভাব্য পরমাণু অস্ত্র তৈরির পথ হিসেবে দেখা হয়।
কিন্তু ইরান দীর্ঘদিন ধরেই বলছে, তাদের পরমাণু কর্মসূচি সম্পূর্ণভাবে শান্তিপূর্ণ এবং বেসামরিক লক্ষ্যেই পরিচালিত হচ্ছে। তারা ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ ক্ষমতা বাতিলের মার্কিন দাবিকে ‘আন্তর্জাতিক চুক্তিভিত্তিক অধিকার ও সার্বভৌমত্বে হস্তক্ষেপ’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।
সাম্প্রতিক রোম বৈঠকে ওমানের মধ্যস্থতায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে পঞ্চম দফার আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে ইরান প্রস্তাব দিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র যেন জাতিসংঘের পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ চুক্তি (এনপিটি)-এর আওতায় তাদের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের অধিকারকে স্বীকৃতি দেয় এবং মার্কিন নিষেধাজ্ঞার ফলে আটকে থাকা ইরানি সম্পদ মুক্ত করে দেয়।
সবমিলিয়ে, আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে একটি নতুন পরমাণু সমঝোতার সম্ভাবনা ক্রমেই জোরালো হচ্ছে, যদিও তা এখনও নির্ভর করছে পারস্পরিক ছাড় দেওয়ার ওপর।
সূত্র: আল জাজিরা
এমএম