ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

আন্তর্জাতিক

ঝুঁকি নিয়ে খালি হাতে জমি থেকে মাইন সরাচ্ছেন ইউক্রেনের কৃষকরা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫৪ ঘণ্টা, মার্চ ২৭, ২০২৩
ঝুঁকি নিয়ে খালি হাতে জমি থেকে মাইন  সরাচ্ছেন ইউক্রেনের কৃষকরা

গেল বছরের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করে রাশিয়া। রাশিয়ার সৈন্যদের দখলে নেওয়ার পর প্রথমবার নিজের জমিতে যান ওলেকসান্দ্র হাভরিলুক।

 

তিনি ইউক্রেনের ইজিয়াম শহরের কাছাকাছি স্থান ভ্যালিকা কোমিশুভাহার বাসিন্দা। জমিতে থাকা ধ্বংসাবশেষ দেখে তার চোখে পানি চলে আসে।  
 
তার জমিতে থাকা ভবনটি প্রায় পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। লাখ লাখ ডলারের ভারি যন্ত্রাদি ধ্বংসাবশেষের মধ্যে পড়ে রয়েছে। গেল বছর চাষ করা গম পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে।

হাভরিলুকের জন্য এখন সবচেয়ে বড় সমস্যা তার জমিতে পড়ে থাকা ল্যান্ডমাইন। তার জমির আশপাশের প্রায় ১২ বর্গমাইল জমিতে লুকিয়ে আছে ল্যান্ডমাইন।   সিএনএন।  

৬৯ বছর বয়সী হাভরিলুক হাতে খুঁড়ে ল্যান্ডমাইনগুলো বের করছেন। জমি পরিষ্কারের ক্ষেত্রে এটি এক ধরনের মরিয়া প্রচেষ্টা। এপ্রিলের শুরুতেই ফসল রোপণ মৌসুম। তার আগেই জমি পরিষ্কার করতে হবে।  

তিনি বলেন, আমি ভয়ে ছিলাম। কিন্তু আমাকে তো জমিতে ফসল লাগাতে হবে।  

হাভরিলুক বলেন, আমি জমি থেকে অন্তত ২০টি মাইন সরিয়েছি নিজের জন্য কেনা মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে শনাক্ত করে।  

তিনি বলেন, আপনি গেলেন, খুঁজে পেলেন, একটি কাঠি দিয়ে এর আকার শনাক্ত করলেন,  খুঁড়লেন এবং বের করে আনলেন। এই কাজ বিপজ্জনক, কিন্তু কোনো উপায় নেই।  

ইউক্রেনজুড়ে কৃষকরা কঠিন এই বাস্তবতার মুখোমুখি। তাদের বিস্ফোরকভর্তি জমি পরিস্কার করতে হচ্ছে কারণ সামনেই রোপণ মৌসুম। এবার ফসল রোপণ না করলে আরও একটি বছর আয় ছাড়াই কাটবে।  

ইউক্রেনের আগ্রাসন ইতোমধ্যে ইউক্রেন থেকে শস্য রপ্তানি অনেকটাই বন্ধ হয়ে রয়েছে। বিশ্বজুড়ে শস্য ও রুটির মতো পণ্যগুলোর দাম বাড়তি। কৃষ্ণসাগর দিয়ে ইউক্রেনের জাহাজ চলাচলে জাতিসংঘের মধ্যস্ততায় চুক্তি হওয়া সত্বেও এই দামবৃদ্ধি ঠেকানো যায়নি।  

ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর হিসাবে, দেশটির প্রায় এক তৃতীয়াংশে অবিস্ফোরিত যুদ্ধাস্ত্র রয়েছে, যা চলতি বছর বিশাল এলাকাজুড়ে ফসল উৎপাদনে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।

গত কয়েক মাসের প্রতিবেদন অনুযায়ী দেখা যায়, কৃষকরা জমিতে কাজ করতে গিয়ে হতাহত হয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছেন দক্ষিণ ইউক্রেনের শেভরন গ্রামের কাছের এক কৃষক। ৬৫ বছর বয়সী এই কৃষক বিস্ফোরকের কাছ দিয়ে হাঁটছিলেন।  

মাইন পরিষ্কার এখন জমি পরিষ্কারের অংশ হয়ে উঠেছে। এটি ধীর ও ব্যয়বহুল কাজ।  

ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনী বছরজুড়ে ৪৫ হাজার বিস্ফোরক ডিভাইস নিষ্ক্রিয় করেছে। এমনটিই বলছে, দেশটির সামরিক বাহিনীর প্রচারমাধ্যম।  

বিশ্বের সবচেয়ে বড় মাইন পরিষ্কারকারী সংগঠন হ্যালোর ৭০০ কর্মী এখন ইউক্রেনে কাজ করছেন। বছরশেষে এই সংখ্যা দ্বিগুণ করার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।  

হ্যালোর পরিচালনাকারী মাইরি কানিংহাম বলেন, দেশজুড়ে অনেক পরিমাণে মাইন রয়েছে। এটি পুরো দেশের সমস্যা। লোকজন, কৃষিজমির নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আগে প্রয়োজন।  

নিরাপত্তা সতর্কতা ওলেসান্দ্র হাভরিলুককে থামাতে পারে না। তিনি জানান, গেল ২৫ বছর ধরে তিনি তার কৃষি জমি প্রস্তুত করেছিলেন। তিনি আবার তা তৈরি করবেন পরিবারের ভবিষ্যৎ নিশ্চিতে। তিনি বলেন, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো জমি পরিষ্কার করা।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫১ ঘণ্টা, মার্চ ২৭, ২০২৩
আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।