ঢাকা, মঙ্গলবার, ৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৮ রমজান ১৪৪৫

তথ্যপ্রযুক্তি

নারীরা বেশি শিকার পর্নোগ্রাফির, পুরুষরা ব্যাংকিং কার্ড হ্যাকিংয়ের

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৩, ২০২২
নারীরা বেশি শিকার পর্নোগ্রাফির, পুরুষরা ব্যাংকিং কার্ড হ্যাকিংয়ের

ঢাকা: দেশে পুরুষের তুলনায় নারীরা বেশি সাইবার অপরাধের শিকার হচ্ছেন।  ভুক্তভোগীদের মধ্য পুরুষের সংখ্যা ৪৩ দশমিক ২২ ও নারীদের সংখ্যা ৫৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ।

নারীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হয়রানি এবং পর্নোগ্রাফির শিকার বেশি হচ্ছেন। পুরুষরা বেশি শিকার হচ্ছেন মোবাইল ব্যাংকিং ও এটিএম কার্ড হ্যাকিংয়ে।

স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশনের (সিসিএ ফাউন্ডেশন) ‘বাংলাদেশ সাইবার অপরাধপ্রবণতা-২০২২’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।  এ গবেষণায় পৃষ্ঠপোষকতা করেছে প্রযুক্তি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান সাইবার প্যারাডাইজ লিমিটেড।

শনিবার (১৩ আগস্ট) বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনে (ক্র্যাব) আয়োজিত অনুষ্ঠানে সিসিএ ফাউন্ডেশনের সভাপতি কাজী মুস্তাফিজের সভাপতিত্বে গবেষণা প্রতিবেদনের বিস্তারিত তুলে ধরেন গবেষক দলের প্রধান ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক মনিরা নাজমী জাহান।

তিনি বলেন, করোনা ভাইরাস পরবর্তী সময়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপপ্রচার বাড়ছে। ভুক্তভোগীদের বেশির ভাগের বয়স ১৮ থেকে ৩০ বছর, এই হার ৮০ দশমিক ৯০ শতাংশ। হয়রানির শিকারের পর ভুক্তভোগীদের ৭৩ দশমিক ৪ শতাংশই আইনের আশ্রয় নেয় না। এছাড়া আইনের আশ্রয় নেওয়া ভুক্তভোগীদের মাত্র ৭ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ আইনি সেবার প্রতি সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

জরিপে ২০২১ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২২ সালের ২ মার্চ পর্যন্ত ব্যক্তি পর্যায়ে ভুক্তভোগী ১৯৯ জনকে ১৮টি প্রশ্ন করা হয়।  

সেই মতামতের ভিত্তিতে এই গবেষণা প্রতিবেদন তৈরি করা হয়।  

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, লোকলজ্জার ভয়সহ বিভিন্ন কারণে অপরাধের বিষয়ে ভুক্তভোগীরা কোথাও অভিযোগ করেন না। সার্বিক পরিস্থিতিতে সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রণে ব্যাপকভাবে সচেতনতামূলক কার্যক্রমসহ আটটি সুপারিশ তুলে ধরা হয় গবেষণা প্রতিবেদনে।

কাজী মুস্তাফিজ বলেন, গবেষণায় সাক্ষাৎকার নেওয়ার সময় ভুক্তভোগীরা মানসিকভাবে চরম বিপর্যস্ত অবস্থায় ছিলেন। তারা কোথাও প্রতিকার না পেয়ে সিসিএ ফাউন্ডেশনের কাছে সহায়তা চান। কিন্তু ভার্চ্যুয়াল জগতে ক্ষতিগ্রস্ত হলে আর বেশি কিছু করার থাকে না। মূলত সাইবার অপরাধ সংঘটিত হওয়ার আগেই সচেতন হওয়া জরুরি।

আলোচকদের মধ্যে ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন আইএসপিএবির পরিচালক সাকিফ আহমেদ বলেন, দেশের ইন্টারনেট ব্যবহারকারী বেশিরভাগ মানুষ কোনো না কোনোভাবে ভুক্তভোগী। শিশুদের পরিস্থিতি আরও আশঙ্কাজনক। একটা ইন্টারনেট সংযোগ একই সময়ে পরিবারের ১৩-১৪ জন্য ব্যক্তি ব্যবহার করেন। কিন্তু সবাই ঝুঁকির বিষয়ে সচেতন নন। এ ধরনের অপরাধ থেকে বাঁচতে সচেতনতার বিকল্প নেই। দেশে ১২ হাজার থেকে ১৫ হাজার অবৈধ ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ব্যবহারকারীদের আইডি লগ সংরক্ষণ করে না, এটি জরুরি।

সাবেক অডিটর জেনারেল ও প্রযুক্তিবিদদের আন্তর্জাতিক সংগঠন আইসাকা ঢাকা চ্যাপ্টারের সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন বলেন, ১৮ থেকে ৩০ বছর বয়সীরা শুধু ভুক্তভোগীই নয়, অপরাধীরাও বেশিরভাগ এই বয়সী। প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে যেসব সাইবার অপরাধ ঘটে সেসবের তথ্য পাওয়া যায় না। বর্তমানে গুজবও একটা মারাত্মক বিষয়।  

আন্তর্জাতিক একটি গবেষণায় দেখা গেছে, সচেতনতামূলক কাজের পাশাপাশি পুলিশ প্রশাসনকেও আরও কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার সুলতানা ইশরাত জাহান বলেন, অনেকে সাইবার অপরাধের শিকার হয়েও অভিযোগ করেন না। কিন্তু পুলিশ প্রশাসনকে আইন মেনেই কাজ করতে হয়। তাই আইনি প্রতিকারের বিষয়ে সবাইকে সচেতন হতে হবে এবং অপরাধের শিকার হলে দ্রুত নিকটস্থ থানায় অথবা সিআইডি অফিসে যোগাযোগ করতে হবে। তাহলে আইনি প্রতিকার মিলবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৩, ২০২২
এইচএমএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।