ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

তথ্যপ্রযুক্তি

দেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অফিস-সার্ভার চালুর জোর তাগিদ

শাওন সোলায়মান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০০৭ ঘণ্টা, জুলাই ৫, ২০২১
দেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অফিস-সার্ভার চালুর জোর তাগিদ

ঢাকা: সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর জবাবদিহিতা, স্বচ্ছতা নিশ্চিতে বাংলাদেশে অফিস ও সার্ভার স্থাপনের তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এজন্য প্রয়োজনে আইন তৈরি করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর ওপর নিয়ন্ত্রণ বাড়ানো হবে বলে জানান নীতিনির্ধাকরা।

দেশে অফিস ও সার্ভার থাকলে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোতে আদান-প্রদান হওয়া তথ্যের সুরক্ষাও নিশ্চিতসহ নানামুখী ইতিবাচক দিক রয়েছে বলে মতামত সংশ্লিষ্টদের।

বাংলাদেশের ভৌগলিক সীমানায় দীর্ঘদিন ধরে কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে গুগল, ফেসবুক, টুইটারের মতো বড় বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন একাধিক সামাজিক মাধ্যম, ভিডিও স্ট্রিমিং সাইট ও সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজার (এসইও) এর মতো প্ল্যাটফর্ম রয়েছে। এসব প্ল্যাটফর্ম থেকে বছরের পর বছর মোটা অংকের আয় হলেও বাংলাদেশের সরকার অথবা অন্য অংশীদারদের লভ্যাংশের কোনো অংশ দিতে হয় না প্রতিষ্ঠানগুলোকে। রাজস্ব, লভ্যাংশ বণ্টন ছাড়াও এগুলোকে আনা যাচ্ছে না কোনো আইনি কাঠামোর মধ্যে।

সরকারের সংশ্লিষ্ট মহল থেকে জানা যায়, বিভিন্ন সময় তথ্যগত সাহায্য চেয়েও আশানুরূপ সাড়া পাওয়া যায় না সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো থেকে। ফেসবুকের উদাহরণ দিয়ে সরকারের ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বাংলানিউজকে বলেন, ফেসবুক এখন আগের চেয়ে বেশি সাড়া দেয়, তবে সেটাও পর্যাপ্ত না। আগে তো একেবারেই দিতো না। তাদের কিছু বললেই তারা তাদের নিজস্ব ‘কমিউনিটি গাইডলাইন’ এর কথা বলে অর্থাৎ ইউরোপ-আমেরিকা স্ট্যান্ডার্ডের গাইডলাইন ধরিয়ে দেয়।

জব্বার আরও বলেন, তারা (ফেসবুক) আমাদের দেশে কখনোই অফিস বা সার্ভার স্থাপন করতে আগ্রহী ছিল না, এখনও নয়। এখানে তাদের একটি অফিস চালু করার কথা ছিল, তবে সেটিরও নতুন কোনো আপডেট নেই। এজন্য আইন দরকার। আমাদের নিজস্ব আইন করা দরকার যেটি আইসিটি বিভাগ করছে।

এমনই প্রেক্ষাপটে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর প্রতি নিয়ন্ত্রণ আরোপে আইন করতে যাচ্ছে সরকার। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগ এই আইনের খসড়া তৈরি করছে বলে জানা যায়। আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এক সাক্ষাৎকারে বাংলানিউজকে বলেন, জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ অন্য প্ল্যাটফর্মগুলোতে (ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউব ও অন্যান্য) নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চায় সরকার। প্ল্যাটফর্মগুলোতে ছড়ানো সব ধরনের অপরাধ-অপপ্রচার ঠেকাতে নতুন আইন করা হচ্ছে। প্রস্তাবিত আইনে দেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর অফিস স্থাপনেরও বিধান রাখা হবে।

‘এরইমধ্যে সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স, তুরস্ক এ ধরনের আইন করেছে। তাদের আইনের ধারাগুলো পর্যালোচনা করে এই আইনের খসড়া চূড়ান্ত করা হবে। প্রস্তাবিত নতুন আইনে পুরো সামাজিক মাধ্যম নিয়ে আমরা কাজ করছি। আইনে ডেটা নিরাপত্তা ও ব্যক্তিগত তথ্য গোপনীয়তার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। ’

এমন আইন হলে সেটির দেশের জন্য বহুমাত্রিক ইতিবাচক ফলাফল নিয়ে আসবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল (সিএসই) বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইউনুস আলী দীর্ঘদিন গবেষণা করছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নিয়ে।

ড. ইউনুস বাংলানিউজকে বলেন, বাংলাদেশে তাদের অফিস ও সার্ভার চালু করতে আইন করা হলে আমাদের দেশের জন্য কিন্তু ভালো এবং এটা একটা সুন্দর উদ্যোগ। দু’টি বড় উপকারিতা রয়েছে। এক তাদের কার্যক্রমকে আইনের আওতায় আনা যাবে এবং দুই, তারা তাদের মুনাফা অর্জনে আমাদের ডাটা (তথ্য) ব্যবহার করছে যেটা কিনা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে, দেশের মধ্যেই রাখা যাবে। যদি দেশের বাইরেও যায় সেটা ট্র্যাক করা যাবে। সর্বোপরি পুরো বিষয়টিতে আমাদের নিজস্ব রিসোর্স ব্যবহার করা হবে যেমন লোকবল, অবকাঠামো, মেধা সম্পদ ইত্যাদি।

সাম্প্রতিক সময়ে অস্ট্রেলিয়াতে গুগলের একটি ঘটনার উদাহরণ দিয়ে ড. ইউনুস বলেন, অস্ট্রেলিয়াতে একটা আইন করা হলো যার জন্য সেখানকার গণমাধ্যমগুলোর সঙ্গে লভ্যাংশ বিনিময় করতে হয়েছে গুগলকে। গণমাধ্যমের নিউজ অপটিমাইজ করে দেখানো হচ্ছে গুগলে, যার জন্য তারা অর্থ আয় করছে কিন্তু এতদিন সেগুলোর অংশ গণমাধ্যমকে দেওয়া হতো না। গুগল প্রথমে বিরোধিতা করলো, একদিন অস্ট্রেলিয়াতে গুগলের সব সেবা বন্ধ ছিল কিন্তু সেখানকার সরকারের কড়াকড়িতে গুগল কিন্তু সেই আইন মানতে বাধ্য হলো। বাংলাদেশে ধরেন বাংলানিউজের সংবাদ দেখানো হচ্ছে গুগলে। সেগুলো দেখিয়ে আয় হচ্ছে তাদের কিন্তু বাংলানিউজকে তারা সেখান থেকে কিছু দিচ্ছে? এটা তো দিতে হবে নইলে গণমাধ্যমের লোকসান হবে। কাজেই আমাদের দেশে এমন আইন হওয়া দরকার।   

ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলো সেই আইন কতটুকু মানতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে এই গবেষক বলেন, তারা সম্প্রতি ভারতের জন্য মেনেছে, অস্ট্রেলিয়ার জন্য মেনেছে। চীন যে তাদের এত কঠোর শর্ত দেয় তাও গুগল, ফেসবুক চীনে ব্যবসা করতে চায়। তারা যদি বুঝতে পারে যে, বাংলাদেশ একটি বড় বাজার তাহলে তারাও এগুলো মেনে নেবে। না মানার মতো কোনো ঘটনা ঘটবে না। এক্ষেত্রে সরকার ও প্ল্যাটফর্মগুলো ‘নেগোশিয়েট’ করবে। এরপরেও যদি না মানার মতো কোনো পরিস্থিতি আসে তাহলে বিকল্প তৈরি হয়ে যাবে। মানুষ তখন গুগল, ফেসবুক বাদ দিয়ে অন্যকিছু ব্যবহার করবে। এখানে বাংলাদেশের হারানোর কিছু নেই কারণ বাংলাদেশ এখন কিছুই পায় না। বরং তারা হারাবে কারণ তাদের এখানে একটা বাজার রয়েছে, আয় রয়েছে।

আরও পড়ুন- সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নিয়ন্ত্রণে আসছে নতুন আইন

বাংলাদেশ সময়: ০০০৬ ঘণ্টা, জুলাই ০৫, ২০২১
এসএইচএস/এএ/এমএইচএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।