ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

তথ্যপ্রযুক্তি

আইটি প্রফেশনালদের স্বর্ণালী গন্তব্য জাপান

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১, ২০১৯
আইটি প্রফেশনালদের স্বর্ণালী গন্তব্য জাপান

পূর্ব-এশিয়ার দ্বীপরাষ্ট্র জাপান; সূর্যদয়ের দেশ হিসেবেও আমাদের কাছে পরিচিত। তবে বিশ্বজুড়ে দেশটির প্রধান পরিচিতি তথ্যপ্রযুক্তিতে উন্নত ও অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ দেশ বলেই। স্বাধীনতার পর উন্নয়ন সহযোগী হয়েও সবার উপরে রয়েছে জাপান।

একাত্তরে স্বাধীনতার পর অর্থাৎ ১৯৭২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের সঙ্গে জাপানের আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হলেও বাঙালি-জাপানিদের সম্পর্ক শতাব্দী প্রাচীন। জাপানকে ঐতিহাসিকভাবে বন্ধুরাষ্ট্র হিসেবেই বিবেচনা করে বাঙালিরা।


 
বাংলাদেশ-জাপানের জাতীয় পতাকার মাঝেও মিল রয়েছে। এর মাঝেও বাঙালি-জাপানির মধ্যে সম্পর্কের ধারণা পাওয়া যায়। ইতিহাস বলে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বাঙালি জাতীয়তাবাদী নেতা নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু ব্রিটিশদের কাছ থেকে বাংলা স্বাধীন করতে জাপানের রাজার সাহায্য চান।  

তার সেই আহ্বানে দেশটির রাজা জাপানের পদাতিক ও বিমান বাহিনীকে বাংলা অভিমুখে প্রেরণ করেন। বাঙালি-জাপানির বন্ধুত্বের স্মারক হিসেবে দুই দেশের পতাকার একটি মিল বলেই মনে করেন অনেক ঐতিহাসিক।
 
জাপানের সঙ্গে বর্তমানে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেশের বিভিন্ন উন্নয়ন খাতে সহায়তা করছে জাপান। এর মধ্যে রূপসা সেতু, মেট্রোরেল প্রকল্প উল্লেখযোগ্য।
 
ক’দিন আগে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই প্রকল্প বুঝিয়ে দিয়ে রীতিমতো চমক দেখিয়েছে জাপানের তিন নির্মাণ কোম্পানি। এমনকি বাড়তি অর্থও ফেরত দিয়েছে তারা। এটা তাদের পেশাদারিত্ব এবং সততার নিদর্শনই বটে।
 
অর্থনৈতিক অবস্থানের দিক দিয়ে ব্যাপক ব্যবধান সত্ত্বেও এশিয়ার এই দুটি দেশের সরকার ও জনগণের মধ্যে সম্পর্ক বেশ সুর্দঢ়। এই সম্পর্কের জায়গা থেকেই হয়তো বাংলাদেশের জন্মলগ্ন থেকেই আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অবদান রেখে চলেছে জাপান। আলাদা করে বললে, তারা সবসময়েই আমাদের সংকটময় খাতগুলোতে; বিশেষ করে- দারিদ্র্য দূরীকরণ, বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং জনশক্তি উন্নয়নে উদার সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে।
 
সরকারের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) হিসাবে, স্বাধীনতার পর থেকে ২০১৮ সালের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ৪২ বছরে বাংলাদেশের উন্নয়নে একক দেশ হিসেবে সবচেয়ে বেশি সহায়তা দিয়েছে জাপান। ওই সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও দাতাগোষ্ঠী অনুদান ও আর্থিক সহায়তা দিয়েছে প্রায় ৫২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।  

এর সিংহভাগ বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) দিলেও দেশ হিসেবে জাপান ছিল শীর্ষে। ইআরডি বলছে, একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বরের পর থেকে এ পর্যন্ত জাপানের কাছ থেকে মোট ৪২৭ কোটি ডলার ঋণসহায়তা পাওয়া গেছে। আর ৩১১ কোটি ডলার এসেছে অনুদান হিসেবে। অন্যদিকে সাড়ে ২৪ কোটি ডলারের সমপরিমাণ খাদ্যসহায়তা দিয়েছে জাপান।
 
বিশ্ব অর্থনীতিতে জাপানের অবস্থান তৃতীয়। কিন্তু বিগত বছরগুলোতে জাপানে শিশুজন্ম হার কমে যাওয়ার ফলে এবং বয়স্ক নাগরিকের সংখ্যাধিক্যের কারণে দেশটিতে দেখা দিয়েছে শ্রমিক সংকট। তথ্য অনুযায়ী, জাপানে প্রতিবছর জন্ম–মৃত্যুর ব্যবধান প্রায় ৪ লাখ। গড় আয়ু ৮৪ বছর পর্যন্ত, যা পৃথিবীর যেকোনো দেশের চেয়ে বেশি। ৬৫ বা তার চেয়ে বেশি বয়সের জনসংখ্যা ২৮ দশমিক ১ শতাংশ। জাতিসংঘের হিসাবে, জাপানের এই সংখ্যা বিশ্বের মধ্যে সর্বোচ্চ; যা ইতালিতে ২৩ দশমিক ৩ শতাংশ, পর্তুগালে ২১ দশমিক ৯ শতাংশ এবং জার্মানিতে ২১ দশমিক ৭ শতাংশ, যুক্তরাষ্ট্রে ১৫ ও ভারতে ৬ শতাংশ।
 
জাপানের শতবর্ষী বা তার বেশি মানুষের সংখ্যা বর্তমানে ৬৯ হাজার ৭৮৫ জন। দুই দশক আগের চেয়ে যা ৭ গুণ বেশি। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম টেলিগ্রাফের প্রতিবেদন অনুযায়ী, আগামী বছর অর্থাৎ ২০১০ সালে বিভিন্ন খাতে জাপানের ৬ লাখ কর্মীর সংকট হবে। আর পাঁচ বছরে তা বেড়ে দাঁড়াবে ১ কোটি ৩০ লাখে।
 
প্রতিটি চাকরির বিপরীতে আবেদন হচ্ছে ১ দশমিক ৬ জন। গত বছর মোট কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর পরিমাণ ছিল ৬ কোটি ৭০ লাখ। ২০৩০ সাল নাগাদ তা কমে ৫ কোটি ৮০ হবে বলে আশঙ্কা করছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, বয়স্ক মানুষ দেখাশোনা করার মতো পর্যাপ্তসংখ্যক তরুণও নেই দেশটিতে। নিম্ন মৃত্যু ও জন্মহারের কারণে আগামী ২০৬০ সালের মধ্যে বর্তমান লোক সংখ্যা ১২ কোটি ৭৩ লাখ থেকে কমে ৮ কোটি ৭ লাখে পৌঁছাবে।
 
মূলত গড় আয়ু বেশি হওয়ায় জাপানে বৃদ্ধদের সংখ্যা বেড়েই চলছে। ফলে তাদের জীবন যাত্রার ব্যয় সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে সরকারকে। যা অর্থনীতির চাকা গতিহীন করে তুলছে। জাতিসংঘের মতে, প্রজনন হার বাড়াতে না পারলে জাপানকে প্রতিবছর অন্তত সাড়ে ১০ লাখ করে অভিবাসীকে নিজের দেশে ঠাঁই দিতে হবে।
 
বৃদ্ধদের সংখ্যা বেশি হওয়ায় কাজ করার লোক পাচ্ছে না সরকার। এ পরিস্থিতি মোকাবেলায় জাপান সরকার উদ্যোগ নিয়েছে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো থেকে সম্ভাবনাময় জনশক্তিকে জাপানে চাকরি ও শিক্ষা অর্জনে উৎসাহিত করতে। ২০১৫ সালে জাপানে শ্রমের চাহিদা পূরণে বিদেশি শ্রমিক নিয়োগের কঠোর অভিবাসন নীতি শিথিল করে দেশটির পার্লামেন্টে নতুন আইন পাস করা হয়। সেখানে বলা হয়, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে ৩ লাখ ৪৫ হাজার শ্রমিক নেওয়া হবে।
                                                        
এ দেশগুলোর তালিকায় রয়েছে- বাংলাদেশ, ভিয়েতনাম, ভারত, মালয়েশিয়া, নেপাল ও ফিলিপাইন। এসব দেশের দক্ষ জনশক্তিকে তুলনামূলক প্রতিযোগিতামূলক বেতন দিয়ে জাপানিজ কোম্পানিগুলো চাকরি দেওয়ার জন্য নিয়ে যাচ্ছে জাপানে। এরই ধারাবাহিকতায় জাপানের সঙ্গে জনশক্তি রপ্তানি বিষয়ক একটি চুক্তি সই করে বাংলাদেশ। এরপরই মূলত কোনো ধরনের খরচ ছাড়াই দক্ষ শ্রমিক হিসেবে বাংলাদেশিদের জন্য জাপানে যাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়। এটি বাংলাদেশের জন্য একটি বড় সুযোগ।
 
জাপানের আইটিইই পরীক্ষা সংক্রান্ত এক কর্মশালায় বক্তব্য দেন অধ্যাপক ড. মো. সাজ্জাদ হোসেন। জাপানে বর্তমানে পড়াশোনা ও চাকরি সূত্রে ১৫ হাজারের কমবেশি বাংলাদেশি অবস্থান করছেন। দুই দেশের মৈত্রীবন্ধনে তাদের ভূমিকা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। বিগত ২০ বছরে প্রায় ১ দশমিক ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স প্রেরণসহ প্রবাসীরা বাংলাদেশে জাপানি বিনিয়োগ ও দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য প্রসারে রেখেছেন কার্যকর ভূমিকা।  
 
জাপানি কোম্পানিতে চাকরি একবার পেলে তা সারাজীবন থাকে। কোম্পানি শ্রমিকদের দায়িত্ব নেয় অভিভাবক হিসেবে। থাকা-খাওয়ার চিন্তা শ্রমিকের নয়, কোম্পানির। বড় ধরনের কোনো অপরাধ বা গর্হিত কাজ না করলে কোম্পানি থেকে কারও চাকরি চলে যায় না।
 
কোনো কারণে যদি কারও চাকরিচ্যুতি ঘটে তাহলে ধরে নেওয়া হয় ওই ব্যক্তি সমাজের উপযোগী নয়। প্রবাসীরা জাপানি ভাষা আয়ত্ত করে জাপানি পরিবার ও তাদের নিয়োগ কর্তৃপক্ষ জাপানি শিল্পোদ্যোক্তাদের কাছে বাংলাদেশের জীবনযাত্রা, সংস্কৃতি ও ব্যবসা-বাণিজ্যের সুযোগ-সুবিধার কথা সহজে তুলে ধরতে পারেন।
 
বিশ্বব্যাপী যখন অর্থনৈতিক মন্দা অব্যাহত রয়েছে, বাংলাদেশ তখন সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ৭ থেকে ৮ শতাংশ স্থিতিশীল জিডিপি অর্জন করেছে। উচ্চ সম্ভাবনা ও ক্রমবর্ধমান অর্থনীতি বাংলাদেশকে পরবর্তী ১১টি সম্ভাবনাময় দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম দেশ হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
 
বিশ্বের ৭ম জনবহুল (১৬৩ মিলিয়ন) দেশ হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশ সামাজিক ক্ষেত্রে ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এমডিজি) অধিকাংশই অর্জন করেছে।
 
এ দেশের ১৫ থেকে ৩৫ বছরের ৮০ মিলিয়ন (আট কোটি) যুবশক্তিকে আধুনিক জ্ঞান ও দক্ষতা এবং মানসম্পন্ন উচ্চশিক্ষার মাধ্যমে গড়ে তোলা সম্ভব হলে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড অর্জিত হবে। এজন্য সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
 
বর্তমানে বাংলাদেশে স্বাক্ষরতার হার ৬৩ দশমিক ৮ শতাংশ এবং উচ্চশিক্ষায় অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১২ শতাংশের বেশি। উচ্চশিক্ষা স্তরে এ বৃদ্ধি বিস্ময়কর। বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষা স্তরে ২০০৯ সালের ১ দশমিক ৬ মিলিয়ন শিক্ষার্থী বেড়ে ২০১৯ সালে ৩ দশমিক ৮ মিলিয়নে উন্নীত হয়েছে।

ইউজিসি’র তথ্যমতে আমাদের দেশে ২০১৮ সালে সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে প্রকৌশল, প্রযুক্তি ও কারিগরি বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রী অর্জনকারি গ্রাজুয়েটদের সংখ্যা যথাক্রমে ৮,০৯৭ এবং ১৮,৩৪৭ জন। এদের মধ্যে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে ২,৫১৬ জন এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে ৭০০ জন।  

বর্তমান যুগ তথ্যপ্রযুক্তির। তথ্যপ্রযুক্তি ও  প্রকৌশল বিদ্যায় সমৃদ্ধ জনশক্তির দেশ হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্বে ভালো অবস্থানে রয়েছে। এ কারণে জাপানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দক্ষ তথ্যপ্রযুক্তি প্রকৌশলীদের কাজের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
 
বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প এখন বিস্তৃত হচ্ছে। হাইটেক পার্ক, আইসিটি ইনকিউবেটর, শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাবের মাধ্যমে সরকার আইসিটি বিষয়ক জ্ঞান আহরণ ও প্রয়োগের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। দেশে আজ প্রায় ছয় লাখ ফ্রিল্যান্সার কাজ করে চলেছে। আমাদের দেশের গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ হচ্ছে- জনশক্তি, তাদের মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।

আইটিইই কি:

Information Technology Engineers Examination-ITEE বা আইটিইই হচ্ছে তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে প্রকৌশলীদের পরীক্ষা; যা জাপানের আইপিএ (ইনফরমেশন টেকনোলজি প্রমোশন এজেন্সি) দ্বারা পরিচালিত জাতীয় স্তরের আইটি ইঞ্জিনিয়ার্স পরীক্ষা। এটি জাপানের বৃহত্তম স্কেল জাতীয় যোগ্যতা পরীক্ষাগুলোর মধ্যে একটি।

যেখানে প্রতি বছর প্রায় ৬ লাখ আবেদনকারী আবেদন করে থাকেন। আইটিইই পরীক্ষা একই তারিখ এবং সময় একই আইপিটিইসি (ইনফরমেশন টেকনোলজি প্রফেশনাল এক্সামিনেশন কাউন্সিল) সদস্য দেশগুলোর মধ্যে একই সেট নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। পরীক্ষাটি বছরে দু'বার, সাধারণত এপ্রিল এবং অক্টোবরে অনুষ্ঠিত হয়।
 
আইটিপিসি দ্বারা বর্তমানে চারটি পরীক্ষা দেওয়া হচ্ছে:
স্তর-১: আইটি পাসপোর্ট পরীক্ষা (আইপি), এই পরীক্ষাটি আইটি এবং নন-আইটি পেশাদার এবং স্নাতকদের জন্য উপযুক্ত।
 
স্তর-২: মৌলিক তথ্যপ্রযুক্তি প্রকৌশলী পরীক্ষা (এফই), এই পরীক্ষাটি আইটি পেশাদার এবং স্নাতক এবং চতুর্থ বর্ষের ‘সিএসই / আইটি সম্পর্কিত শিক্ষার্থীদের জন্য উপযুক্ত।
 
স্তর-৩: ফলিত তথ্য প্রযুক্তি ইঞ্জিনিয়ার পরীক্ষার (এপি), এই পরীক্ষাটি অভিজ্ঞ আইটি পেশাদারদের জন্য উপযুক্ত।
 
স্তর-৪: উন্নত পরীক্ষা (এই), এই পরীক্ষাটি ডোমেন নির্দিষ্ট অভিজ্ঞ আইটি পেশাদারদের জন্য উপযুক্ত।
 
এশিয়ায় আইটিইই:

আইটিইই যোগ্যতা এশীয় অঞ্চলে ব্যাপকভাবে গৃহীত হয়। আইটিইই পরীক্ষায় পারস্পরিক স্বীকৃতির একটি চুক্তি এশিয়ার ১৩ টি দেশের মধ্যে করা হয়েছে। আইটিইই প্রশংসাপত্রটি পারস্পরিকভাবে চীন, তাইওয়ান, ভারত, জাপান, কোরিয়া, সিঙ্গাপুর, ফিলিপাইন, মালয়েশিয়া, মঙ্গোলিয়া, মায়ানমার, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম এবং বাংলাদেশে স্বীকৃত।
 
আইটিপিসি এশিয়ার আইটি ইঞ্জিনিয়ার্স স্কিল স্ট্যান্ডার্ডস এবং আইটি ইঞ্জিনিয়ার্স পরীক্ষার বাস্তবায়নে সদস্য দেশগুলোর সব প্রয়াসকে সমন্বিত করার একটি সংস্থা। ২০১৪ সালের ১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ আইটিপিসির সদস্য দেশ হিসেবে যোগ দেয়। বাংলাদেশ ছাড়াও সংস্থাটির সদস্য দেশ হচ্ছে- ফিলিপাইন, মালয়েশিয়া, মঙ্গোলিয়া, মায়ানমার, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম।
 
বাংলাদেশে সরকারের আইসিটি বিভাগের অধীনে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের ‘বাংলাদেশ আইটি-ইঞ্জিনিয়ার্স পরীক্ষা কেন্দ্র (বিডি-আইটিইসি)’ চালু করেছে। এখানে দেশের আইটি পেশাদার / স্নাতকদের জন্য জাতীয় স্তরের পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। নন-আইটি পেশাদার / স্নাতকেরাও তাদের আইটি জ্ঞান এবং দক্ষতার জন্য আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জন করতে পারেন।
 
বিডি-আইটিইসি নিয়মিতভাবে ২০১৩ সালের অক্টোবর থেকে বাংলাদেশে আইটিইই পরিচালনা করছে। দুটি পরীক্ষা এখন বাংলাদেশে হয়। এগুলো হচ্ছে-
 
স্তর -১: আইটি পাসপোর্ট পরীক্ষা (আইপি), এই পরীক্ষাটি নন-আইটি পেশাদার এবং স্নাতকদের জন্য উপযুক্ত।
 
স্তর -২: মৌলিক তথ্য প্রযুক্তি ইঞ্জিনিয়ার পরীক্ষা (এফই), এই পরীক্ষাটি আইটি পেশাদার এবং স্নাতক এবং চতুর্থ বর্ষের ‘সিএসই/আইটি সম্পর্কিত শিক্ষার্থীদের জন্য উপযুক্ত।
 
ভাষা জ্ঞান:
জাপানে যেতে হলে দেশটির ভাষা জানতে হবে। জাপানিজ ভাষার ওপর দক্ষতা সম্পন্ন লোক না থাকায় সরকার জাপানের প্রয়োজন মেটাতে পারছে না।
 
জাপানিজ ভাষার প্রাথমিক লেভেল ভালোভাবে জানতে একজন মানুষের তিনমাসের মতো সময় লাগে। এক্ষেত্রে ভাষাটা শিখে নেওয়া যেতে পারে সহজেই। জাপানি ভাষার ‘এন ফোর’ লেভেল পর্যন্ত জানতে হবে। ‘এন ফাইভ’ হচ্ছে প্রাথমিক পর্যায়। এরপরের ধাপ হচ্ছে ‘এন ফোর’ লেভেল। অর্থাৎ জাপানি ভাষায় ভালোভাবে বলতে, লিখতে ও পড়তে জানতে হবে।
 
জাপানে যেতে হলে জাপানি ভাষা জানার সর্বনিম্ন স্ট্যান্ডার্ড এটি। তবে  ‘এন থ্রি’ বা ‘এন টু’ জানলে তা হবে অতিরিক্ত যোগ্যতা। জাপানে যাওয়ার পরও নিয়মিত ভাষার বিষয়ে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ থাকবে। প্রবাসী কল্যাণ ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীনে সারা দেশে ২৮টি ভাষা শিক্ষা কেন্দ্র রয়েছে। ভাষা শিক্ষার সার্টিফিকেট পেতে বাংলাদেশে অবস্থিত জাপানের দূতাবাসে গিয়ে পরীক্ষা দিতে হবে।
 
জাপান যেহেতু প্রযুক্তিখাতে বিশ্বের নেতৃত্বস্থানীয় একটি দেশ, তাই বাংলাদেশি আইটি প্রফেশনালরা যদি দেশটির আইটি কোম্পানিগুলোতে কাজ করতে পারে সেক্ষেত্রে টেকনোলজি ট্রান্সফার (প্রযুক্তির স্থানান্তর) হবে।  

আমাদের হাইটেক পার্ক হচ্ছে, যেখানে বিশ্বমানের প্রযুক্তিবিদ দরকার। জাপানে কাজ করা তরুণরা এতে নেতৃত্ব দিতে পারে। আর পেশাগত দক্ষতা অর্জন করলে যে জাপান যেতে হবে বিষয়টা এমন-ও নয়, দেশেও নিজ নিজ ক্ষেত্রে অনেক ভালো করতে পারবে তরুণেরা।  

মোদ্দাকথা, তরুণ জনগোষ্ঠীকে ভবিষ্যত সমৃদ্ধ বাংলাদেশের জন্য, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভিশন ২০৪১ বাস্তবায়ন এবং চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের জন্য নিজেকে যোগ্য হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। এজন্য সঠিক পথে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। তবেই গড়ে ওঠবে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলার আধুনিক রূপ তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর ডিজিটাল বাংলাদেশ।

লেখক: সদস্য, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয়য় মঞ্জুরী কমিশন।

বাংলাদেশ সময়: ১০০৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০১, ২০১৯
এমএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।