ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

তথ্যপ্রযুক্তি

আইসিটির কাজ নারীদের জন্য সহজ: ফারহানা এ রহমান

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২৮ ঘণ্টা, মার্চ ৮, ২০১৯
আইসিটির কাজ নারীদের জন্য সহজ: ফারহানা এ রহমান ফারহানা এ রহমান/ছবি: ডি এইচ বাদল

ঢাকা: ফারহানা এ রহমান। তথ্যপ্রযুক্তি খাতে নারীদের পাইওনিয়র। আইসিটির বড় সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস)-এর সিনিয়র সহ-সভাপতি। 

আউটসোর্সিং ব্যবসার অন্যতম ইউওয়াই সিস্টেমস লি. ও ইউওয়াই ল্যাবের চেয়ারপারসনের দায়িত্ব সামলানোর পাশাপাশি হেলথপ্রিয়-২১ এর এমডি হিসেবে আছেন। আউটসোর্সিং ব্যবসায় বৈদেশিক অর্থ রোজগারে তরুণদের অন্যতম ক্ষেত্র হিসেবে ইউওয়াই সিস্টেমস লি. কাজ করে যাচ্ছে।

পাশাপাশি তিনি আইসিটিতে প্রতিবন্ধীদের জন্য কাজ করেছেন। আইসিটিতে নারী উদ্যোক্তাদের পাইওনিয়রও ফারহানা।
 
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টিবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী ফারহানা আইসিটিতে কাজ করতে গিয়ে তার মুকুটে যোগ হয়েছে সাফল্যের একাধিক পালক। কেনিয়ায় ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ট্রেড অ্যান্ড সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট অ্যাট ট্রেড ডেভেলপমেন্ট সিম্পোজিয়ামে মর্যাদাপূর্ণ বছরের সেরা নারী রপ্তানিকারক ও দেশে সেরা নারী উদ্যোক্তার পুরস্কারও এসেছে তার ঘরে। পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সঙ্গে জড়িত আছেন ফারহানা।
 
নারী দিবসের আগে বাংলানিউজের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে তার সাফল্যের বিস্তর তথ্যে পাশাপাশি নারীদের আইসিটিতে কাজের ক্ষেত্র এবং সম্ভাবনার কথা বলেছেন ফারহানা এ রহমান।   
 
সম্প্রতি বেসিস কার্যালয়ে ফারহানা এ রহমান বলেন, শুরু থেকেই বিভিন্ন ক্রিয়েটিভ কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। শেলাই, বুটিক, পশুপাখি পালন, গাছ লাগানো আমার আগ্রহের জায়গা ছিল। ক্রিয়েটিভি সব সময় আমাকে অ্যাট্রাক করত।
 
আমি যখন সেভেন/এইটে পড়ি তখন থেকেই বিভিন্ন ধরনের ছোট ছোট ব্যবসা করার চেষ্টা করি। সেই চেষ্টাগুলোতে কখনও সফল হয়েছি কোনোটা সফল হয়নি। কিন্তু ব্যবসার জন্য যে প্যাশন, সেটা শুরু থেকেই ছিল।
 
আমি মাস্টার্স পাস করার আগে আইসিটি সম্পর্কে জানার সুযোগ হলো, তখন বিভিন্ন ট্রেনিং সেন্টারে ট্রেনিং হচ্ছে- কম্পিউটার আসলে কী করে? আইসিটিটিতে ভিজ্যুয়ালাইজ খুব সহজ। আমি যেটা চিন্তা করি সেটার আউটপুট দেখা সবচেয়ে সহজ এবং তাড়াতাড়ি এটার আউটকাম পাওয়া যায়। এ জিনিসটা আমাকে আকর্ষণ করেছিল।
 
ওই সময়ে আমার বিয়ে হয়, প্রথম সন্তানের জন্ম হয়। এরই মধ্যে মাস্টার্স পাস করে একটা চাকরিতে জয়েন করি। তার কিছুদিন পর আমার ছেলেটার অ্যাবনরমালিটি ধরা পড়ে। ডাগনসিস করার পর দেখা যায় সে অটিস্টিক, তখন তার বয়স মাত্র ১৮ মাস।
 
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আমি ৯-৫টা পর্যন্ত চাকরি করব, এই জিনিসটা ফ্যামিলি থেকে কেউ হয়তো মুখে না করছে না। কিন্তু অন্তরে একটা নেগেটিভিটি ছিল। আর যেহেতু অটিজম সম্পর্কে আমি কোনো কিছু জানতাম না, আমার বন্ধু-বান্ধব-আত্মীয়-স্বজনদের অজস্র প্রশ্নের উত্তর আমার কাছে ছিল না সে সময়। যার জন্য আমি একটা নতুন পরিবেশে যাওয়ার জন্য আইসিটিতে লেখাপড়া শুরু করি।
 
লেখাপড়া শুরুর এটাও একটা কারণ ছিল, যে নতুন পরিবেশে নতুন মানুষদের সংস্পর্শে থাকলে পুরনো লোকদের কাছে জবাবদিহি করতে হবে না যে কেন বাচ্চা কথা বলছে না! কেন এরকম হলো! আমি নিজেও জানি না কেন এরকম হলো? ওই থেকে আমার শুরু…।
 
আমার যে নেটওয়ার্ক ছিল, দেশের বাইরে বন্ধু-বান্ধব ছিল তাদের মাধ্যমে আমার আইসিটির কাজ আসে। আমি তখন ঘরে বসে কিছু কিছু কাজ করা শুরু করি। যখন দেখলাম কাজের ভলিউম বাড়ছে এবং এটা আসলে একা দেখার জিনিস না, তখন আমার গেস্টরুমে প্রথম কোম্পানির সেটআপটা হয়। এরপর কিছুদিন পর অফিস নিতে হয়, সেটা ২০০৫ সাল।
 
ফারহানা এ রহমান

তখনকার পরিবেশে একজন নারীর সাফল্য, কীভাবে হলো?

ফারহানা: শুরু থেকেই দেশের বাইরের কাজ করছি এবং কাজ তুলে দেওয়ায় ইনজয় করেছি। তখন লোকাল মার্কেটে আইসিটি, তার মধ্যে একজন মহিলা আইসিটি টেকনোলজি এন্টারপ্রাইনর- এটার অ্যাক্সেপ্টনেস তখনও ছিল না। যার জন্য লোকাল মার্কেটে কাজ করা খুবই কষ্টসাধ্য ছিল। তবে আমি ওটাই করে গেছি।
 
পরিবারের কাছে সাপোর্ট কেমন পেয়েছেন?

ফারহানা: প্রথম দিকে আমার ফ্যামিলি বুঝতে পারত না আসলে কি কাজ? যেহেতু একটা দুর্ঘটনার মধ্য দিয়ে আমি যাচ্ছি, তারা আমাকে বাধা দেয়নি। তারা যে খুব উৎসাহিত করতে পেরেছে সেটাও না। কিন্তু আমি যখন বিজনেস স্ট্যাবিলিস্ট করলাম তখন পুঁজিটা ফ্যামিলি থেকেই এসেছে। কোম্পানি চালানোসহ বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে পরিবারের সাপোর্ট পেয়েছি। আমার পরিবারের জন্যই আমি এতদূর এসেছি, সেটা বাবা-মা, শ্বশুরবাড়ি, স্বামী বলেন, পরিবারের সাপোর্টটাই আসল ছিল।
 
কাজের বাধা কি ছিল?
ফারহানা:
অন্তরায় ছিল যখন পরিবারকে বাইরের মানুষের সঙ্গে কথা বলতে হতো তখন এটা তাদের জন্য বর্ণনা করা খুব কঠিন ছিল। কারণ আমি এমন একটা জিনিস নিয়ে কাজ করছি যেটা তারা নিজেরাও বোঝেন না। সেগুলো নিয়ে অনেক কনফিউশন ছিল। এর বাইরে ফ্যামিলির সঙ্গে কোনো সমস্যা হয়নি।  

বর্তমান প্রেক্ষাপটে মেয়েদের অ্যাক্সেস কেমন?

ফারহানা: আজকের পৃথিবীতে, একটা মেয়ে লেখাপড়া করে বাসায় বসে থাকবে- সেই মাইন্ডসেট থেকে আমাদের সরে আসতে হবে। কারণ, ওই মেয়েটা এক সময় মা হবে, কারো স্ত্রী, তাকে এই যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হলে তারও একটা জগৎ থাকা প্রয়োজন।  
 
নারীদের এগিয়ে নিতে পুরুষের কাছে প্রত্যাশা কি?

ফারহানা: এখনও আমরা অনেক ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রিত। অনেকে সাপোর্ট করছেন বলেই বড় বড় পজিশনে মেয়েরা উঠে এসেছে। পুরুষরা যেন সহযোগিতার হাত বাড়ায়। মেয়েদের সিদ্ধান্তকে যতক্ষণ না মর্যাদা দিতে না পারব ততক্ষণ বলতে পারব না যে সমান-সমান হয়েছি। সমান-সমান ওটাই, এখন ঘরের কাজেও চাই ছেলেরা কাজ করুক। যখন আমরা মেয়েদের বাইরে আশা করছি তখন ছেলেদেরও পাশাপাশি আমরা চাই। আজকে যদি মেয়েদের কেউ এগিয়ে না দেয়, তারও তো মেয়ে আছে। অন্যের একজন মেয়েকে এগিয়ে দেওয়া মানে আমার মেয়েকে অনেকখানি এগিয়ে দেওয়া।
 
৫০ শতাংশ মেয়ে ঘরে বসে থাকলে দেশের অর্থনীতি কীভাবে সাবলম্বী হবে? তাদের বার বার ব্লক করলে আমরা নিজেরাই নিজেদের ব্লক করছি।
 
সরকারের কাছে প্রত্যাশা কি?

ফারহানা: মেয়ে উদ্যোক্তাদের জন্য বেশ ভাল সুবিধা তৈরি করেছে সরকার। কিন্তু এখনও ভেতরে অনেক ব্যুরোক্রেসি আছে যেগুলো অতিক্রম করা সহজ হয় না। এই সরকার কখনও না করেনি। যাদের জন্য সুবিধাগুলো তৈরি করা হচ্ছে তারা যেন সুবিধাগুলো নিতে পারে।

বাংলাদেশ সময়: ১২৩০ ঘণ্টা, মার্চ ০৮, ২০১৯
এমআইএইচ/এনটি/এসআইএস
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad