ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

তথ্যপ্রযুক্তি

বিশেষ সাক্ষাৎকার

বাংলাদেশের অব্যবহৃত ব্যান্ডউইথ রপ্তানির সম্ভাবনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩১ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৭, ২০১০
বাংলাদেশের অব্যবহৃত ব্যান্ডউইথ রপ্তানির সম্ভাবনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে

ল্যাপটপ, নেটবুক, ডেস্কটপ কমপিউটার এবং মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট ব্যবহারের কারণে ক্রমেই বাড়ছে আভ্যন্তরীণ ব্র্যান্ডউইথের চাহিদা। অথচ নেই ব্যান্ডউইথের পর্যাপ্ত বিপণন এবং সরবরাহ।

পরিস্থিতি অনেকটা অর্থনীতির চাহিদা এবং যোগানের বৈপীরত্য সম্পর্কের মতো।

এর মধ্যে আবার অব্যবহৃত ব্যান্ডউইথ রপ্তানির সম্ভাবনা খতিয়ে দেখছে সংশ্লিষ্ট মহল। দেশের আভ্যন্তরীণ চাহিদা থাকা সত্ত্বেও ব্যান্ডউইথ রপ্তানির উদ্দেশ্য আর সম্ভাবনা নিয়ে বাংলানিউজকে বিশেষ সাক্ষাৎকার দিয়েছেন বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবল কোম্পানি লিমিটেডের (বিএসসিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মনোয়ার হোসেন। আর এ সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শরিফুল ইসলাম এবং মনোয়ারুল ইসলাম

এ মুহূর্তে দেশীয় ইন্টারনেট গতির প্রশ্নে বিএসসিসিএল ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মনোয়ার হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, সিমিউইফোর সাবমেরিন কেবলের সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় দেশের ইন্টারনেট গতি তুলনামূলক বেড়েছে। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ২০০৫ সালের ২২ মে আন্তর্জাতিক সাবমেরিন কেবলের সঙ্গে যুক্ত হয়। বর্তমানে বিপুল পরিমাণ ব্যান্ডউইথ অব্যবহৃত থাকায় ব্যান্ডউইথ রপ্তানির পরিকল্পনা করা হচ্ছে বলে তিনি জানান।

প্রকৌশলী মনোয়ার হোসেন জানান, এ মুহূর্তে বাংলাদেশের জন্য ক্রয়কৃত সর্বমোট ব্যান্ডউইথ হচ্ছে ৪৪.৬ জিবিপিএস (গিগাবিটস পার সেকেন্ড)। এর মধ্যে ব্যবহৃত হচ্ছে মাত্র ১৫ জিবিপিএস। যা শতকরা প্রায় ৩০ ভাগ। অবশিষ্ট ৭০ ভাগ ব্যান্ডউইথ অব্যবহৃতই থেকে যাচ্ছে। আর এ অব্যবহৃত ব্যান্ডউইথ রপ্তানী করার পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে।

ব্যান্ডউইথ রপ্তানি প্রসঙ্গে তিনি জানান, বাংলাদেশ ব্যান্ডউইথ লিজও দিতে পারে। কিন্তু ব্যান্ডউইথ লিজ দেওয়াটা স্বল্প সময়ের ব্যাপার নয়। কারণ যে দেশ লিজ নেবে তাদের ন্যূনতম পাঁচ বছরের জন্য লিজ নিতে হবে। সুতরাং পাঁচ বছরের জন্য যদি ব্যান্ডউইথ ছেড়ে দিতে হয়, তাহলে নিজের দেশের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ ব্যান্ডউইথ রেখে তারপর দিতে হবে। কারণ যেভাবে দেশের আনাচে-কানাচে ব্রডব্যান্ড ছড়িয়ে যাচ্ছে এবং যেভাবে থ্রিজি লাইসেন্স দিতে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে, এর ফলে দেশের আভ্যন্তরীণ ব্যান্ডউইথের চাহিদা দিন দিন বাড়ছেই।

সম্প্রতি সাবমেরিন কেবল সম্প্রসারণ সংক্রান্ত নতুন প্রযুক্তি গ্রহণের ফলে বাংলাদেশ আগের চেয়ে চার গুণ বেশি ব্যান্ডউইথ পাচ্ছে বলে জানান প্রকৌশলী মনোয়ার হোসেন। এ প্রযুক্তির ফলে বাংলাদেশ আগামী আট থেকে ১০ মাসের মধ্যে অতিরিক্ত ৪০ লাখ মিউ কিলোমিটার ব্যান্ডউইথ পাবে।

উল্লেখ্য, এরই মধ্যে বিএসসিসিএল তার নিজস্ব তহবিল থেকে ৫০ কোটি টাকা (৭০ লাখ ডলার) বিনিয়োগ করেছে বলে তিনি জানান। তাই দেশের চাহিদা মিটিয়ে বাড়তি কিছু ব্যান্ডউইথ রপ্তানি করার সম্ভাবনা তৈরি করেছে।

মনোয়ার হোসেন বাংলানিউজকে জানান, সাবমেরিন কেবলের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার আগে বাংলাদেশের ব্যান্ডউইথ আপলিঙ্কের গতি ছিল সেকেন্ডে ১৬ মেগাবিটস (এমবিপিএস) আর ডাউনলিঙ্কের গতি ছিল ২৪ এমবিপিএস। অর্থাৎ মোট ব্যান্ডউইথ ছিল ৪০ এমবিপিএস।

উল্লেখ্য, বিটিসিএল এবং ম্যাঙ্গোর মোট আমদানি করা ১৫ জিবিপিএস (গিগাবাইট পার সেকেন্ডে) ব্যান্ডউইথের ৭ জিবিপিএসই হচ্ছে ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ।

অন্যদিকে আগে বিটিসিএল এর মোট সার্কিট ছিল ৭ হাজারের বেশি। যা কেবল স্যাটেলাইটের মাধ্যমে পরিচালিত হতো। কিন্তু এখন ইন্টারন্যাশনাল সার্কিটের সংখ্যা ৬৬ হাজার এবং ৫৫টি দেশের সঙ্গে ডাইরেক্ট সার্কিট আছে। সুতরাং সাবমেরিন কেবল আসার পর উল্লেখযোগ্য হারে ব্যান্ডউইথের যোগান হয়েছে।

ফলে এখন অনেক দেশের সঙ্গে খুব সহজেই টেলিযোগাযোগ করা যাচ্ছে। সঙ্গে দেশে বিপুল পরিমাণ উচ্চগতিসম্পন্ন ব্যান্ডউইথ অব্যবহৃতই রয়ে যাচ্ছে। যা রপ্তানি করলে বাংলাদেশের রাজস্ব আয়ের একটি নতুন এবং সম্ভাবনাময় উৎস খুঁজে পাওয়া যাবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

অব্যবহৃত ব্যান্ডউইথ রপ্তানি প্রসঙ্গে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে ব্যান্ডউইথ বিক্রি করার আগে বিএসসিসিএল আবারও সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে সরকারের সঙ্গে কৌশলগত বৈঠক করবে। এ বিষয়ে এরই মধ্যে ইন্টারন্যাশনাল টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। আগামী ৭ নভেম্বর এ দরপত্র জমা দেওয়ার শেষদিন বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

দরপত্র প্রসঙ্গে বিএসসিসিএল ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনোয়ার হোসেন জানান, এ মুহূর্তে কী পরিমাণ দরপত্র জমা পড়েছে তা বলা সম্ভব নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় দেশগুলো এ দরপত্র জমা দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। যদি দরপত্রের মাধ্যমে প্রত্যাশিত সাড়া না পাওয়া যায়, তবে বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে ব্যান্ডউইথ রপ্তানির বিষয়ে আলোচনা করা হবে।

এ তালিকায় নেপাল, ভূটানসহ প্রতিবেশী দেশগুলো অন্তর্ভুক্ত আছে। উল্লেখ্য, এ দুটি দেশের দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা এরই মধ্যে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

তিনি আরও জানান, যদি এ দেশগুলোর কাছে ব্যান্ডউইথ রপ্তানি করা হয়, তাহলে ব্যান্ডউইথ রপ্তানিতে এ দেশগুলোর সঙ্গে সরাসরি একটি ফাইবার অপটিক্যাল লাইন যুক্ত করতে হবে। এজন্য সাসেক্স নামে একটি প্রকল্প তৈরি করা হবে। যারা এ লিঙ্ক স্থাপনে সহায়তা করবে। এ প্রকল্পে চারটি সদস্য অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এ দেশগুলো হচ্ছে বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল এবং ভূটান।

ব্যান্ডউইথ রপ্তানির নীতিগত সিদ্ধান্তের প্রশ্নে মনোয়ার হোসেন জানান, আগামী ৪ নভেম্বর ব্যান্ডউইথ রপ্তানি প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্ট সংসদীয় কমিটির সঙ্গে বিএসসিসিএল কর্তৃপক্ষ বৈঠক বসবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হাসানুল হক ইনু। এ সভায় ব্যান্ডউইথ রপ্তানি বিষয়ে নীতিগত আলোচনা এবং সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ স্থানীয় সময় ১৯৩৫, অক্টোবর ২৭, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।