ঢাকা, মঙ্গলবার, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২১ মে ২০২৪, ১২ জিলকদ ১৪৪৫

তথ্যপ্রযুক্তি

স্মার্ট ব্র্যান্ডিংয়ের মাধ্যমে বেসিসকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে চাই: রফিক উল্লাহ

তথ্যপ্রযুক্তি ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৪৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ৩০, ২০২৪
স্মার্ট ব্র্যান্ডিংয়ের মাধ্যমে বেসিসকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে চাই: রফিক উল্লাহ

স্মার্ট ব্র্যান্ডিংয়ের মাধ্যমে বেসিসকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন কনটেন্ট ম্যাটার্স লিমিটেডের সহ প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এ এস এম রফিক উল্লাহ।

দেশের তথ্যপ্রযুক্তি ও সফটওয়্যার খাতের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস)-এর নির্বাচনে ‘টিম স্মার্ট’-এর হয়ে পরিচালক পদে লড়ছেন তিনি।

প্রযুক্তি বিষয়ক একটি অনলাইন সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় তিনি বলেন, আমরা বিভিন্নভাবে দেশীয় তথ্যপ্রযুক্তি ইন্ড্রাস্ট্রিকে ব্যাখ্যা করি। অনেক সময় তথ্য বিভ্রান্তির শিকার হয় গোটা ইন্ড্রাস্ট্রি। এটা বড় ভাবনার বিষয়। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সঙ্গে আমাদের ইন্ডাস্ট্রির তথ্যউপাত্ত মিলছে না। তেমনি আমাদের সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানসহ এর ব্যবহারকারী গ্রাহকদের কাছেও আমাদের ইন্ড্রাস্ট্রির সঠিক অবস্থা পরিষ্কার নয়।

তিনি মনে করেন, দেশের তথ্যপ্রযুক্তি ইন্ড্রাস্ট্রিকে সঠিকভাবে উপস্থাপন বা ব্র্যান্ড ইমেজ তৈরি করা যায়নি। ইন্ডাস্ট্রির উন্নয়নে স্মার্ট ব্র্যান্ডিং তাই খুবই জরুরি।

তথ্য বিভ্রান্তির উদাহরণ টেনে এ এস এম রফিক উল্লাহ বলেন, গত ৪-৫ দিনে বিভিন্ন গণমাধ্যমে দেশীয় সফটওয়্যার রপ্তানির আয় কোথাও লেখা হয়েছে ১৫ থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা, কোথাও ২০ থেকে ২৫ হাজার কোটি টাকা। তথ্যের এই গরমিল ছোট করে দেখার অবকাশ নেই। এই তথ্য কোথা থেকে আসছে? যথাযথ তথ্য বা দলিলাদি কি আমাদের কাছে আছে? ইন্ডাস্ট্রির ব্র্যান্ডিংটা আসলে কী? সেখানে এই তথ্যউপাত্ত কতটা গুরুত্বপূর্ণ, এসব নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে।  

ইন্ডাস্ট্রির ব্র্যান্ডিং বোঝাতে গিয়ে তিনি বলেন, ব্র্যান্ডিং একটি ইন্ডাস্ট্রির অনন্য একটি পরিচয়, যা তার প্রতিযোগীদের থেকে নিজেকে আলাদা করতে পারে। একইসঙ্গে পণ্য ব্যবহারকারীদের মনে খ্যাতি, বিশ্বাস ও আস্থা অর্জন করতে পারে। তাই সফলতার জন্য বেসিস সদস্যদের ব্যক্তিগত ব্যবসার ব্র্যান্ডিং যেমন প্রয়োজন তেমনি দেশের সফটওয়্যার ও আইসিটি খাতের উন্নয়নে বেসিসের ব্র্যান্ডিংও গুরুত্বপূর্ণ।

বেসিস এখনও জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক বাজারে সঠিক ব্র্যান্ডিংয়ে পিছিয়ে আছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, স্থানীয় ও আন্তজার্তিক বাজারে নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ় করতে গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমকে কাজে লাগাতে হবে। নিজেদের সফলতা ও অর্জনের গল্পগুলো সঠিকভাবে গণমাধ্যমে প্রচার করতে হবে। গণমাধ্যামসহ বিভিন্ন সামাজিক মিডিয়া যে কোন ইন্ড্রাস্ট্রির শক্তিশালী অবস্থানের ব্র্যান্ডিং তৈরিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।  

স্থানীয় বাজারে দেশীয় সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা নিয়ে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে তিনি  বলেন, ২০১৭ সালের শেষের দিকে যখন বেসিসে সক্রিয়ভাবে কাজ শুরু করি, তখন একটা কথা প্রায়ই শোনা যেত যে, আমাদের দেশে ভালো কাজ হয় না। আমাদের প্রোগ্রামারদের দক্ষতা বা পেশাদারিত্বের কমতি রয়েছে। তবে আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ভিন্ন। গ্রামীণফোনে কাজ করার সময় নিজেদের প্রয়োজনে বিদেশি প্রতিষ্ঠানের পরিবর্তে আমি কাজ করেছি স্থানীয় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে পৃথিবীর প্রথম সারির কোম্পানির চেয়েও তারা ভালো সেবা সরবরাহ করতে পেরেছে। এটা ক্রেতা হিসাবে আমার দারুণ এক অভিজ্ঞতা।

নিজের প্রতিষ্ঠিত ‘কনটেন্ট ম্যাটার্স’ এর অঙ্গ প্রতিষ্ঠান হিসেবে তিনি চালু করেন ‘র‌্যাবিটহোল’। এটি এখন লাইভ ক্রিকেট, ফুটবল ও বিনোদনের  প্রিমিয়ার ভিডিও স্ট্রিমিং সমাধান। বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়। তিনি বলেন, এটা প্রমাণ করে বিশ্ব বাজারে সেবা সরবরাহের সক্ষমতা আমাদের আছে। আমরা পারি না বলে গ্রাহকদের মধ্যে যে ভ্রান্ত ধারণা আছে, সঠিক ব্র্যান্ডিংয়ের মাধ্যমে তা পাল্টে দিতে হবে।  

রপ্তানি আয়ে পোশাকশিল্পের পরেই সরকার তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, পোশাকশিল্পের সঙ্গে আমাদের তুলনা করলে ভুল হবে না। গণমাধ্যমে আমরা যদি তৈরি পোশাকশিল্পের অবস্থানটা দেখি এবং সেখানে আমাদের অবস্থানকে তুলনা করি, তাহলে বিষয়টি আমাদের কাছে পরিষ্কার হয়ে যাবে। গত কিছুদিন ধরে আমাদের কর অব্যাহতি নিয়ে গণমাধ্যম সোচ্চার। এটা ইতিবাচক এবং সময়োপযোগী। কিন্তু সারাবছর গণমাধ্যমের সঙ্গে আমাদের সম্পৃক্ততা কতটুকু? ২০২৪ সালের জুনে শেষ হচ্ছে আমাদের কর অব্যাহতি। এই ঘোষণা নিশ্চয়ই ২০২৩ সালের জুনে দেওয়া হয়নি? তাহলে সচেতনতায় কাজ শুরু করতে হতো আরও আগেই।  

স্থানীয় বাজারে সক্ষমতা অর্জনে মানবসম্পদ উন্নয়ন, অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে উন্নয়নসহ সুযোগ-সুবিধা, প্রতিবন্ধকতা ও নানারকম বিষয়ে সচেতনতার বিষয়ে গণমাধ্যমে সারা বছর উপস্থিতি থাকার ওপর গুরুত্ব দেন তিনি।  

২০২৬ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশে থেকে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় উঠলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও ঋণে সুযোগ-সুবিধা আর থাকবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, অন্যান্য ইন্ডাস্ট্রি এটা নিয়ে কাজ করছে। কিন্তু আমরা কতটুকু পারছি সেটাও এখন আলোচ্য বিষয়। এগুলো নিয়ে গণমাধ্যমে আমাদের অবস্থান দৃঢ় করা করা প্রয়োজন।

নিজ প্রতিষ্ঠান র‌্যাবিটহোল নিয়ে তিনি বলেন, র‌্যাবিটহোল তার ইনোভেটিভ ব্যবসা সেবার জন্য একাধিবার বেসিস ন্যাশনাল আইসিটি অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে। দুইবার এশিয়া প্যাসিফিক আইসিটি অ্যালায়েন্সের (অ্যাপিকটা) অংশ নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। সবশেষ ২০২৩ সালে দেশীয় কোম্পানি হিসাবে একমাত্র র‌্যাবিটহোলই স্পেশাল এচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে। বেসিসের সদস্য হিসেবে র‌্যাবিটহোল গ্লোবাল মার্কেটিং ফোরামের সিএমও অ্যাওয়ার্ড অর্জন করে। সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে ডিজিটাল অ্যাড প্লেসমেন্ট সফটওয়্যার তৈরি ও ২০১৯ সালের বিশ্বকাপে সেই অ্যাড সার্ভার থেকে ৪০ হাজার ঘণ্টা লাইভ স্ট্রিমে অ্যাড সার্ভ করার অনন্য রেকর্ড অর্জন করে র‌্যাবিটহোল। দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের একটি ডিজিটাল ক্যাম্পেইনের পার্টনার হিসাবে গিনেস বুকেও নাম উঠিয়েছে র‌্যাবিটহোলের মূল প্রতিষ্ঠান কনটেন্ট ম্যাটার্স।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ থেকে এমবিএ ডিগ্রি অর্জন করেন এ এস এম রফিক উল্লাহ। ছাত্রাবস্থায় ভোরের কাগজে জুনিয়র সাব এডিটর হিসেবে কাজ শুরু করেন। পরে এশিয়াটিক মার্কেটিং কমিউনিকেশনে যোগ দেন। টেলিকম খাতের শীর্ষ প্রতিষ্ঠান গ্রামীণফোনে কাজ করেছেন দীর্ঘ ১০ বছর। এরপর তার যাত্রা শুরু হয় দেশের আইসিটি ইন্ড্রাস্ট্রিতে। প্রতিষ্ঠা করেন কনটেন্ট ম্যাটার্স লিমিটেড, যার অঙ্গপ্রতিষ্ঠান র‌্যাবিটহোল। বেসিসে তার সম্পৃক্ততা প্রায় এক দশক।

বাংলাদেশ সময়: ২১৪৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ৩০, ২০২৪
নিউজ ডেস্ক 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।