ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

ভারত

কলকাতায় আগের তুলনায় কমেছে ডেঙ্গুর প্রকোপ

ভাস্কর সরদার, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৩২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৩, ২০২১
কলকাতায় আগের তুলনায় কমেছে ডেঙ্গুর প্রকোপ

কলকাতা: ভরা বর্ষা, সময়টা ডেঙ্গুর মৌসুম বটে। গত এক মাসে বৃষ্টিতে শহর কলকাতাসহ বিভিন্ন জায়গায় কম বেশি পানি জমেছে।

কিন্তু শহরবাসীর ঘুম উড়িয়ে দেওয়া ডেঙ্গু ভাইরাস ঘটিত রোগী আশ্চর্যজনকভাবে কম। এমনকি বিগত বছরগুলোর তুলনায় এ বছরে মশার উৎপাত অনেকটাই কমেছে। কলকাতা পৌরসভার পরিসংখ্যান বলছে, গত বছরের তুলনায় এবার ডেঙ্গু কমেছে প্রায় ৫০ শতাংশের মতো। আবার ২০১৯ সালের তুলনায় কমেছে ৬৬ শতাংশ। পৌরসভার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২২ আগস্ট পর্যন্ত শহর কলকাতায় ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ছিল ৩১৬ জন। ২০২০ সালে ওই একই সময়ে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত ছিল ২৩৬ জন। এ বছর সেই একই সময়ে ডেঙ্গু রোগী পাওয়া গেছে ১২০ জন।

শহরের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করছেন, এর পেছনে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে রয়েছে সেই করোনা ভাইরাসের অবদান। এ যেন শাপে বর! ইচ্ছা থাক বা না থাক, করোনার ভয়ে আগের তুলনায় অনেক বেশি স্বাস্থ্যবিধি মানছেন শহরবাসী। বাসার চারপাশ পরিষ্কার-পরিছন্নতা আগের থেকে অনেকটাই বেড়েছে। পাশাপাশি শহরের সবক’টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। এমনকী করোনার কড়া বিধিনিষেধ ও নাইট কারফিউ থাকায় শহর কলকাতা আগের থেকে অনেক বেশি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। ফলে কিছুটা হলেও ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব কমেছে। তবে বিশেষজ্ঞদের অপর অংশ মনে করছেন, জনস্বাস্থ্যের 'হোস্ট কম্পিটিশন' বলে একটি বিষয় আছে। যে কারণে একই সময়ে একটি ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বেশি হলে অন্যটি দাপাদাপি কিছুটা হলেও কমে যায়।

তবে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল এ বছর মশার উৎপাত শহরে অনেক কম। কিন্তু হঠাৎ এভাবে মশার বংশ বাড়া কেন কমে গেল সেই রহস্যভেদ করারই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে রাজ্যে স্বাস্থ্য দফতর। ‘মসকুইটো ডেনসিটি’ বা মশার ঘনত্ব, অর্থাৎ কোন এলাকায় এক ঘণ্টায় কতগুলো পূর্ণ বয়স্ক মশা পাওয়া গেছে সেই পরীক্ষা করতে গিয়ে দেখা গেছে গত বছরের তুলনায় এ বছরে মশার প্রাদুর্ভাব অনেকটাই কম।  

এ বিষয়ে কলকাতা পৌরসভার স্বাস্থ্য বিভাগের উপদেষ্টা ডক্টর তপন কুমার মুখোপাধ্যায় বলেছেন, শুনতে আশ্চর্য লাগলেও বাস্তব ঘটনা হলো করোনার জন্য শহরের মানুষের সার্বিক পরিচ্ছন্নতা আগের থেকে অনেকটা বেড়েছে। তাই ডেঙ্গুর উৎপাত কমেছে।

বিশিষ্ট মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডক্টর আশিস মিত্র বলেছেন, এবার ডেঙ্গুর ঘটনা আশ্চর্যজনকভাবে কম। তবে সেজন্য গাছাড়া ভাব দেখালে বিপদ বাড়বে। জমে থাকা পানি নিয়মিত ফেলে দেওয়া, মশা তাড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া ইত্যাদি যেমন চলছে তেমন চালিয়ে যেতে হবে। একই মত অন্যান্য চিকিৎসকদেরও। তাদের বক্তব্য, ডেঙ্গুর মৌসুম মানেই জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর এ ধারণা এখন প্রাগৈতিহাসিক পর্যায়ে চলে গেছে। গত কয়েক বছর শহর কলকাতায় এপ্রিল মাসের পর থেকেই ডেঙ্গু সংক্রমণের ঘটনা ঘটতে শুরু করে। তা সেপ্টেম্বর হয়ে ডিসেম্বর এমনকি জানুয়ারিতেও ডেঙ্গু রোগীর দেখা মিলেছে। তাই শহরে ‘ডেঙ্গু কম’ বলে গা এলিয়ে দিলে শহরবাসী ও পৌরসভা দুই পক্ষেরই দুশ্চিন্তা আগামী দিনে বাড়বে।

বাংলাদেশ সময়: ২০৩০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৩, ২০২১
ভিএস/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।