ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

ভারত

কলকাতায় রমজানের কেনাকাটার ভিড়, নজরজারিতে ড্রোন

ভাস্কর সরদার, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯২৮ ঘণ্টা, মে ১, ২০২০
কলকাতায় রমজানের কেনাকাটার ভিড়, নজরজারিতে ড্রোন

কলকাতা: করোনার এ পরিস্থিতিতে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে রমজান মাসের রোজা রাখছেন পশ্চিমবঙ্গের মুসলমানরা। চলমান লকডাউনে প্রত্যেক রোজাদার যেন, শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে সুষ্ঠুভাবে কেনাকাটা করতে পারেন সেদিকে নজর রেখেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। তাই রমজান মাসে শহর কলকাতায় বিভিন্ন বাজারে ড্রোনের মাধ্যমে বিশেষ নজরদারি চালাচ্ছে কলকাতা পুলিশ। বাজারে কেনাকাটার ক্ষেত্রে যেন কোথাও কোনো ভিড়ভাট্টা না হয় এবং নির্দিষ্ট শারীরিক দূরত্ব অবলম্বন করা হয়, তার জন্যই বিশেষ নজরদারি।

ভাইরাস সংক্রমণের ক্ষেত্রে আক্রান্তের সংস্পর্শে আসা অত্যন্ত বিপজ্জনক। চিকিৎসকদের মতে, এই পরিস্থিতিতে শারীরিক দূরত্ব মেনে চলা অত্যন্ত আবশ্যক।

তাই শহরের বিভিন্ন মার্কেটে রমজানের কেনাকাটার পাশাপাশি শারীরিক দূরত্ব মানা হচ্ছে কি-না আকাশপথে নজরদারি করে তা খতিয়ে দেখছেন পুলিশের কর্তারা।

এ নিয়ে পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মা বলেছেন, যে সমস্ত মানুষ রমজান মাসে রোজা রাখছেন, তাদের কেনাকাটার ক্ষেত্রে যেন কোনো অসুবিধা না হয়। তবে কেনাকাটার সময় প্রত্যেককে অবশ্যই পারস্পরিক দূরত্ব মেনে চলতে হবে। তাই এই নজরদারি। তবে শর্মা এও বলেছেন, বেশিরভাগ বাজারের হাল স্বাভাবিক থাকলেও, বেশ কিছু ব্যতিক্রমী চিত্র ফুটে উঠেছে ড্রোন ক্যামেরার নজরে।

কলকাতার পার্কসার্কাস এলাকার বাজারে সামাজিক দূরত্ব লঙ্ঘনের ছবিও ধরা দিয়েছে। এই ছবিতে আতঙ্ক বেড়েছে পুলিশকর্তাদের। শহরের বেশ কিছু বড় বাজার ঘিরে নজরদারি করা সম্ভব হলেও ছোটখাট অনেক বাজারই পুলিশের নজরদারির বাইরে থেকে যাচ্ছে। সেখানে ড্রোন দিয়ে ছবি তুলে প্রমাণ সংগ্রহ করছে পুলিশ।

ড্রোন দিয়ে নজরদারি।  ছবি: বাংলানিউজঅপরদিকে রাজ্য সরকারের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ রোজাদার যেন ন্যায্যমূল্যে কেনাকাটা করতে পারে। লকডাউনের অজুহাতে কোথাও যেন কালোবাজারি না চলে। নিত্যদিন রাজ্য সরকারের প্রতিনিধিরা নজর রাখছে বাজারের উপর। শুধু রোজাদার কেন প্রায় দেড়মাসের উপর চলা লকডাউনে অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলেছে। ফলে সবাই যেন ন্যায্যমূল্যে কেনাকাটা করতে পারে সেদিকেই এখন নজর সরকারের।

শহরে কোনো উৎসবের মৌসুমে কিছুটা হলেও মূল্য বাড়িয়ে নেয় বিক্রেতারা। তবে চলমান লকডাউনে সাধারণ মানুষের জীবন যাপন গত বছরের মতো নয় বলে অনেকটাই নজর রেখেছে রাজ্য সরকার। ফলে খুব এটা দাম বাড়েনি। প্রতিবছর রমজানের শুরু থেকেই ফলের বাজারে দাম ধীরে ধীরে বাড়তে শুরু করে। কিন্তু এ বছরটা ব্যতিক্রম কলকাতার ক্ষেত্রে। বৃহস্পতিবার( ৩০ এপ্রিল) কলকাতার বিভিন্ন বাজার থেকে যে তথ্য পাওয়া গেলো তা হলো। এ বছর এখনও অবধি ফলের যোগান যথেষ্ট আছে। দামও নিয়ন্ত্রণে।

শুধু পাকা ফল নয়, প্রায় একই আছে শুকনো ফলের দাম। কাজুবাদাম ৭শ রুপি, ভালোটা ১ হাজার। কিসমিস ৪৫০ থেকে ৬শ রুপির মধ্যে। এছাড়া তরমুজ, পেয়ারা, পাকা পেঁপে যথাক্রমে ২০, ১০০ ও ৬০ রুপি কিলোপ্রতি বিক্রি হচ্ছে। আপেল, আনার, আঙুর যথাক্রমে কিলো প্রতি বিক্রি হচ্ছে ১৫০, ১২০, ও ১০০ রুপি। হালি প্রতি কলকাতায় কলার দাম ১০ থেকে ১৫ রুপির মধ্যে। আর আম কিলো ১২০ থেকে ২শ রুপির মধ্যে। ফলে রোজাদার ফলাহারে কোনো সমস্যায় পড়ছেন না বলেই জানাচ্ছেন তারা।

ইফতার সামগ্রী কিনছেন এক ক্রেতা।  ছবি: বাংলানিউজযেহেতু পণ্যবাহী যানচলাচল বন্ধ, তাই ভিন রাজ্যের ফল খুব কম চোখে পড়ছে। তবে এবার বাজার থেকে উধাও বিদেশি ফল। এইসময় বাজার ছেয়ে থাকে বিদেশি ফলে। অবশ্য শুধু ফলই তো থাকে না ইফতারির পাতে। সাধ্যমতো থাকে নানা অয়োজন। যেহেতু মার্কেটগুলো বন্ধ। তাই সম্পূর্ণভাবে ভাজাপোড়া প্রত্যেককেই বানাতে হচ্ছে বাসায়। তবে অলি-গলিতে পুলিশের চোখ এড়িয়ে গোপনে খোলা আছে কয়েকটি দোকান। এছাড়া নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারদর স্বাভাবিক আছে কলকাতায়। এমনকী সবজির বাজারও বলতে গেলে স্বাভাবিক।

কলকাতার যেখানে যেখানে করোনার কারণে রেডজোন। সেখানে খোলা নেই কোনো দোকানপাট। এমনকী বাসা থেকে বের হওয়াই মুশকিল। তবে কল করলে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পৌঁছে দিচ্ছে কলকাতা পুলিশ। অবশ্য রেডজোনে এবং অরেঞ্জ জোন এলাকাগুলোতে গরিবের কথা ভেবে পুলিশ বিনামূল্যে বিতরণ করছে ইফতারি।

তবে স্তব্ধ কলকাতার প্রাণকেন্দ্র নিউমার্কেট। প্রতিবছর রমজান শুরু হলেই এই মার্কেট চলে যায় পুরোপুরি বাংলাদেশিদের দখলে। কার যেন কালো নজর লেগেছে নিউ মার্কেট চত্বরে। মনে হচ্ছে শহরের এক কোণে বকা খাওয়া দুষ্টু ছেলের মতো দাঁড়িয়ে আছে কলকাতার একাকী নিউমার্কেট।

বাংলাদেশ সময়: ০৯১৭ ঘণ্টা, মে ০১, ২০২০
ভিএস/এইচএডি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।