ঢাকা, শনিবার, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ভারত

পূজার ছুটিতে পশ্চিমবঙ্গবাসী ছুটছে দার্জিলিং-সিকিমে

ভাস্কর সরদার, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৪৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ৬, ২০১৮
পূজার ছুটিতে পশ্চিমবঙ্গবাসী ছুটছে দার্জিলিং-সিকিমে -

কলকাতা: মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপে অশান্তির মেঘ সরে যাওয়ায় পশ্চিমবঙ্গের সুইজারল্যান্ড অর্থাৎ দার্জিলিংয়ে এবার দুর্গাপূজায় পর্যটকদের ঢল নামবে। এমনই খুশির খবর শোনাচ্ছে কলকাতার ট্যুর অ্যান্ড ট্রাভেল কোম্পানিগুলো। পাহাড়ের প্রতিটি হোটেল এমনকি প্রতিটি ‘হোম স্টে’-গুলো পূজার দিনগুলোয় ফুল বুকিং। সর্বত্র একই অবস্থা। অনেকটা ঈদের আগে শপিংয়ের সময় কলকাতার মারক্যুই স্ট্রিটের মতো অবস্থা। 

এমনিতেই প্রতিবছর পূজার মৌসুমে পর্যটকদের আগাম বুকিং না করে দার্জিলিং গেলে হোটেল পাওয়া খুবই মুশকিল। ২০১৭ -তে আন্দোলনের জেরে পাহাড়ে পর্যটক আসা থমকে গিয়েছিল।

এবার রাজনৈতিক অশান্তির মেঘ না থাকায় দার্জিলিং-কালিম্পংয়ে পর্যটকদের বুকিংয়ের চাপ অসম্ভব বেড়ে গিয়েছে। এমনই জানাচ্ছিলেন রয়েল বেঙ্গল ট্যুর অ্যান্ড ট্রাভেলসের কর্ণধার মানস খান।
 
তবে পূজার মৌসুমে পাহাড়ে বিদেশি পর্যটকদের উপস্থিতি কম থাকে। হোটেল ছাড়া দার্জিলিং ও কালিম্পং মিলিয়ে ১৫০০ এর মতো হোম স্টে আছে। দার্জিলিং শহরেই আছে ১শ’ থেকে-দেড়শ। এরমধ্যে ৮০ শতাংশ হোম বুকিং হয়ে গিয়েছে।  

‘পর্যটক ট্যুর অ্যান্ড ট্রাভেলস’র সিইও মনোজ গাঙ্গুলী বলেন, আর কয়েকদিন পর পাহাড়ে পর্যটকদের ঢল নামবে। পাহাড়ের সব হোটেল ১০ অক্টোবর থেকে ২০ নভেম্বর পর্যন্ত বুকিং হয়ে গিয়েছে। যা ২০১৭ সালে হয়নি। আমাদের আশা ২০১৫ এবং ২০১৬ সালের রেকর্ড এবার ছাপিয়ে যাবে। শুধু হোটেল নয় এবছর পূজায় হোম স্টেগুলির অধিকাংশেরই বুকিং হয়ে গিয়েছে। পাহাড়ের পর্যটন ও পর্যটকদের স্বার্থে আমাদের অ্যাসোসিয়েশনকে রাজ্য সরকার যথেষ্ট সহযোগিতা করেছে। শহরের পাশাপাশি, পাহাড়ের গ্রামীণ এলাকার হোম স্টেগুলিও সব বুকিং হয়ে গিয়েছে। এখন হোটেলের থেকে হোম স্টেগুলির চাহিদা বেশি। হোটেলের থেকে এগুলি খুবই সস্তা। হোম স্টে অর্থাৎ পাহাড়ের স্থানীয় বাসিন্দারা নিজেদের বাড়ির একাংশ ভাড়া দেয়। যেখানে লজিংয়ের সঙ্গে ফুডিংয়ের বন্দোবস্তও থাকে।
 
এদিকে ৪ অক্টোবর থেকে সিকিম-কলকাতা বিমান পরিষেবা চালু হতেই পাকইয়ং বিমানবন্দরকে ঘিরে সিকিমবাসীরাও স্বপ্ন দেখা শুরু করেছে। যেখানে ট্রেনে কলকাতা থেকে শিলিগুড়ি(এনজিপি) যেতে সময় লাগতো ১১ ঘণ্টার মতো। সেখান থেকে গ্যাংটক প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টার মতো। সব মিলিয়ে ১৬ ঘণ্টা। এখন বিমানে কলকাতা থেকে সিকিমে পৌঁছাতে সময় লাগছে মাত্র ১ ঘণ্টা ২৫ মিনিট। বিমানবন্দর চালু হওয়ায় এখন থেকে সারাবছরই পর্যটকের ব্যাপক ঢল থাকবে বলে আশা করছেন সিকিমবাসী।  

শুধু পর্যটন না আকাশপথে যোগাযোগ চালু হওয়ায় শিল্প বিকাশের আশা দেখছেন সিকিমের বণিকমহল। সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী পবন চামলিং বলেন, বিমানবন্দর চালু হওয়াটা আমাদের কাছে মাইলস্টোন। এতে পর্যটন শিল্পের প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে বিনিয়োগকারীরাও এখন সিকিমে আসবেন। কর্মসংস্থানের সুযোগ দ্বিগুণ বেড়ে যাবে। এতদিন উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় অনেকেই মুখ ফিরিয়েছিলেন। পর্যটক আসাও কয়েকগুণ বেড়ে যাবে। যার প্রভাব আসন্ন দুর্গাপূজা, দীপাবলিতে পড়তে শুরু করেছে।
 
কলকাতা থেকে চালু হওয়ার কিছুদিনের মধ্যে সিকিম-গৌহাটি, সিকিম-দিল্লি বিমানও চালু হয়ে যাবে। ভুটান ড্রুক এয়ারতো পূজার পরই পরিষেবা চালু করবে।  

ট্রাভেল এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশন অব সিকিমের উপদেষ্টা সতীশ বরদেওয়া বলেন, দীর্ঘদিনের স্বপ্নপূরণ হয়েছে। বিমানবন্দর পর্যটকদের কাছে নতুন দিশা দেখাবে। এখন সহজেই সিকিমে পৌঁছে যাওয়া যাবে। এতে পর্যটনের আরও প্রসার ঘটবে।
 
কলকাতা থেকে পরিবারের সঙ্গে পূজায় সিকিমে বেড়াতে যাবেন শর্মিষ্ঠা সরকার। তার কথায়, পাহাড়ের টানে এর আগে ছুটিতে সিকিম গেছি। বোরিং জার্নি কাটিয়ে এবার দেড় ঘণ্টার মধ্যে কলকাতা থেকে সিকিমে পৌঁছে যাওয়া যাবে এটা ভাবতেই পারছি না। খুবই ভালো হলো। সিকিম পর্যটকদের কাছে অন্যতম আকর্ষণ।  

তাই শীত পড়ার আগে পূজার মৌসুমে পশ্চিমবঙ্গবাসীর ট্যুর ডেস্টিনেশন এখন দার্জিলিং-সিকিম।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩২ ঘণ্টা, ৬ অক্টোবর, ২০১৮
ভিএস/আরআর

** 
প্রথম ফ্লাইট নামলো সিকিমে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।