ঢাকা, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

ভারত

মহালয়ার মধ্য দিয়ে শারদোৎসব শুরু

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৪, ২০২৩
মহালয়ার মধ্য দিয়ে শারদোৎসব শুরু

কলকাতা: শরৎকালের আশ্বিন মাস মানেই শারদীয়া। মাতৃপক্ষের সূচনা।

দেবী দুর্গার আরাধনা। যার জন্য বছরভর অপেক্ষা করে থাকেন হিন্দু সম্প্রদায়ের আপামর বাঙালি। পশ্চিমবঙ্গের বাঙালির প্রধান উৎসব দুর্গাপূজা। শাস্ত্র মতে মহালয়া পূন্য লগ্নে সূচনা হয় শারদোৎসবের। যদিও মহালয়ার ক্রিয়া-আচারের সঙ্গে সরাসরি দুর্গাপূজার কোনো সংযোগ নেই। শাস্ত্র মতে, চন্ডী পাঠ এবং দেবী দুর্গার আগমনী বার্তা। সেই আবহেই জারিত হয় গোটা দুর্গাপূজার সন্ধিক্ষণ। এক নতুন রূপে সেজে ওঠে কলকাতা।

শনিবার (৮ অক্টোবর) মহালয়া। দিনটি মানেই দুর্গাপূজার সূচনা। বলা চলে, দুর্গাপূজার ঢাকে কাঠি পড়া শুধু সময়ের অপেক্ষা। ২০ অক্টোবর পালিত হবে মহাষষ্ঠী। মহাসপ্তমী পালিত হবে ২১ অক্টোবর। অষ্টমী ২২ অক্টোবর। মহানবমী পালিত হবে ২৩ অক্টোবর এবং  ২৪ অক্টোবর বিজয়া দশমী। দেবীদুর্গার আরাধনার মধ্য দিয়ে জাগ্রত করা হয় মাতৃশক্তিকে। এই সময় বাঙালি হিন্দুরা যেমন চারদিনের দুর্গাপুজায় মেতে ওঠেন। তেমন অবাঙালিরা নয়দিনের বিশেষ দুর্গাপূজা পালন করে থাকেন। যাকে বলা হয় নবরাত্রি, যা শুরু হবে রোববার (১৫ অক্টোবর) থেকে। নবরাত্রি পালন করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

মহলয়ার ভোরের আলো ফুটতেই ‘তর্পণ’-এর উদ্দেশে গঙ্গার পাড়ে ভিড় জমায় মানুষ। তর্পণ ক্রিয়াচারে মধ্যদিয়ে স্মরণ করা হয় পূর্বপুরুষদের। অপরদিকে, মহালয়ার দিন থেকে শুরু হয় প্রমিতার চক্ষুদান। অর্থাৎ শিল্পীর তুলির টানে জেগে ওঠে প্রতিমার ত্রিনয়ন। বলা যায়, দুর্গাপূজোর সূচনাই হয় এই চক্ষুদানের মাধ্যমে।

এ দিনই কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমের উদ্যোগে বিগত কয়েক বছর ধরে হয়ে চলা দুগোর্ৎসবের উদ্বোধন করেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ওই পূজার প্রতিমার ত্রিয়নয় আঁকেন মমতা। যদিও এবার মুখ্যমন্ত্রী সশরীরে উপস্থিত থাকতে পারছেন না। তাঁর পায়ে চোট লাগায় দীর্ঘদিন বাসায় বন্দি। চিকিৎসকের পরামর্শে চিকিৎসা চলছে। সমস্ত পূজার উদ্বোধোন তিনি ভার্চ্যুয়ালি করছেন।

তবে মহালয়ার মূল আকর্ষণ বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রের কণ্ঠে দেবী বন্দনা ও চণ্ডীপাঠ। মহালয়ার ভোরে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের উদাত্ত কণ্ঠের ‘চণ্ডীপাঠ’ ছাড়া দিন শুরুর কথা ভাবতেই পারে না আপামর বাঙালি। ১৯৩১ সাল থেকে মহলয়ার দিনে ঠিক ভোর চারটায় আকাশবাণী বেতারকেন্দ্র একই ভাবে সম্প্রচার করে আসছে। যা শুনতে আজও জেগে ওঠেন বাঙালিরা। তবে একবারই নিয়ম ভেঙে পরপর দুদিন মহালয় সস্প্রচার করতে হয়েছিল আকাশবাণীকে।

১৯৭৬ সাল। বাংলা সিনেমার একচ্ছত্র মুকুটহীন সম্রাট তখন উত্তম কুমার। পঞ্চাশ পেরোলেও নায়ক হিসেবে তখনও খ্যাতির চূড়ায়। সেই সময় বীরেন্দ্রর বদলে মহালয়া পাঠ করেছিলেন উত্তম কুমার। মহালয়ার ভোরে উত্তম কুমার-এর কণ্ঠে চণ্ডীপাঠ শুনে রেগে আগুন হয়েছিল বাঙালি। এককথায় ক্ষেপে লাল হয়ে গিয়েছিল। ‘মহিষাসুরমর্দিনী’র বদলে সেবার সম্প্রচারিত হয়েছিল, ‘দেবীং দুর্গতিহারিণীম’। উত্তমের গলায় তা শোনার পরপরই ফোনে বহু অভিযোগ গিয়েছিল বীরেন্দ্র কৃষ্ণর কাছে। আকাশবাণীর সামনে সেই সময় জড়ো হয়েছিল কাতারে কাতারে বিক্ষুব্ধ মানুষ। রীতিমতো বিপাকে পড়েই এবং বাধ্য হয়ে ফের অনুষ্ঠান পুনরায় সম্প্রচার করতে হয়েছিল আকাশবাণীকে।

প্রসঙ্গত, সেই সময় আকাশবাণী চালানো হতো দিল্লি থেকে। তারা ভেবেছিল, একঘেয়ে বীরেন্দ্রকে বাদ দিয়ে নতুন কিছু করার। গায়ক কিশোর কুমারকে গানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। তিনি সরাসরি না করে দিয়েছিলেন। এরপর থেকে কিশোরকুমার কোনদিন সরকারি অনুষ্ঠান পাননি। তবে তিনি বাঙালির কিশোর কুমার। তাই তাকে কোনোদিন তা নিয়ে আক্ষেপ করতে হয়নি। সেই ঘটনা চাপা পড়ে গিয়েছিল প্রতিভার কারণে।

এরপর সঙ্গীতশিল্পী হেমন্তু কুমারের ওপর দায়িত্ব পড়ে। তিনিই উত্তমকে এনেছিলেন। সেবার উত্তমের মহালয়ে বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়লে অনুষ্ঠান পুনরায় সম্প্রচার করতে হয়েছিল আকাশবাণীকে। এ প্রসঙ্গে একবার উত্তম কুমার বলেছিলেন, এটা আমার হার নয়, পরম শান্তির বিষয়। দিল্লির চাপ অস্বীকার করতে পারিনি। কিন্তু বীরেন্দ্র কৃষ্ণের কণ্ঠে মহালয়া না শুনলে বাঙালির দুর্গাপূজা সম্পূর্ণ হয় না।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৪, ২০২৩
ভিএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।