ঢাকা, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

ভারত

জমি বিতর্কে অমর্ত্য সেনের পাশে বুদ্ধিজীবীরা, সরব মমতা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৭, ২০২৩
জমি বিতর্কে অমর্ত্য সেনের পাশে বুদ্ধিজীবীরা, সরব মমতা

কলকাতা: নোবেলজয়ী বাঙালি অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের সঙ্গে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের জমি বিবাদে সামনে আসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। তারপর থেকে সরগরম হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি।

বাংলার বিশিষ্টদের অভিমত, কেন্দ্র শাসিত বিজেপি দল ও উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী নোবেলজয়ীকে ক্রমাগত আক্রমণ করে চলছে। সেই পরিস্থিতিতে সরব হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের সমাজকর্মী ও বুদ্ধিজীবী মহল।

ইতোমধ্যে অমর্ত্য সেনের জমি বিতর্কে বিশ্বভারতীর আচার্য তথা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে একটি খোলা চিঠি দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের শতাধিক বিশিষ্টজন। তাতে আর্জি জানানো হয়েছে, তিনি যেন অমর্ত্য সেনের অপমানে নীরবতা ভাঙেন। নোবেলজয়ীকে ইচ্ছাকৃত অপমান করা হচ্ছে এবং তা বন্ধ হওয়া দরকার বলে চিঠিতে দাবি করা হয়েছে।

একই দাবিতে বৃহস্পতিবার (২৭ এপ্রিল) সন্ধ্যায় কলকাতার নন্দনে ৩ সভাঘরে প্রতিবাদে সরব হন বিশিষ্টরা। এদিন সভাঘরে ‘সামাজিক মর্যাদা রক্ষা সমিতি’র উদ্যোগে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক পার্থ মজুমদার, লেখক অনিল আচার্য, নাট্যব্যাক্তিত্ব গৌতম হালদার, দেব শঙ্কর হালদার, রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত, বিভাস চক্রবর্তী, সাহিত্যক স্বপ্নময় চক্রবর্তী, লেখিকা উমা দাশগুপ্তসহ ৭০জন বিশিষ্ট নাগরিক।

সমবেত বক্তব্যে তারা বলেন, ‘আমরা মনে করছি, অমর্ত্য সেনের প্রতি এই আচরণ অতিশয় লজ্জাজনক ও নিন্দনীয়। আইনগত যেকোনো বিতর্কই যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যদিয়ে নিষ্পন্ন হওয়া বিধেয়। কিন্তু, তা কখনোই এই চূড়ান্ত অশোভন আচরণে যুক্তি হতে পারে না। আমরা সমবেতভাবে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় এই অন্যায় আচরণের, এবং এই আচরণে যে মানসিকতার প্রতিফলন ঘটেছে তার তীব্র নিন্দা করছি। ’



‘অধ্যাপক অমর্ত্য সেন কেবল পরম সমাদৃত এবং বিশ্ববিশ্রুত পণ্ডিত নন। যথার্থ বিশ্বভারতী পরিবারের যেসব মানুষ আজও আছেন, তিনি তাদের মধ্যে সর্বাগ্রগণ্য। বিশ্বভারতীর পরিসরেই তার স্কুল জীবন কেটেছে। বস্তুত, এটা অবিশ্বাস্য ব্যাপার যে, এমন একজন মানুষকে যথাযোগ্য সম্মান জানানোর বদলে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি প্রতিষ্ঠানের বর্তমান চালকরা ক্রমাগত তার অপমান এবং বিড়ম্বনা ঘটিয়ে চলেছেন। এর ফলে বিশ্বভারতী নিজের ভাবমূর্তি এবং মর্যাদাতেও বড় রকমের আঘাত করছে। এই ঘটনাবলীতে বঙ্গসমাজেরও অসম্মান ঘটেছে, গোটা দুনিয়ার সামনে বাংলার সচেতন নাগরিকের মাথা হেঁট হয়ে গিয়েছে। ’

বিদ্বৎজনদের দাবি, ‘আমরা মনে করি বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের এমন অন্যায় ও অশোভন আচরণ থেকে অবিলম্বে বিরত হওয়া উচিত এবং, অমর্ত্য সেনের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমাপ্রার্থনা করা উচিত। তার এই অসম্মানের প্রতিবাদে আমরা আগামী ৫ মে শান্তিনিকেতনে বিক্ষোভ দেখাব। ’

তবে শুধু বাংলার বিশিষ্টরা নন, প্রতিবাদে সরব হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার তিনি নবান্ন থেকে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘ওদের আগুন নিয়ে খেলা উচিত নয়। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ চরম ঔদ্ধত্য দেখাচ্ছে। ৬ মে’র মধ্যে অমর্ত্য সেন জমি না ছাড়লে বাড়ি বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেবে? ওরা যদি অমর্ত্য সেনের বাড়ি ভাঙতে আসে আমি গিয়ে সেখানে বসে থাকব। বুক পেতে দেবো। আমিও দেখবো ওরা কীভাবে ওনার বাড়ি ভাঙতে পারে। আমি দেখতে চাই কার শক্তি বেশি মানুষের নাকি বুলডোজারের। ’

প্রসঙ্গত, বিশ্বভারতীর তরফে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদকে জমি ছাড়ার নোটিশ দেওয়া হয়েছে। বিশ্বভারতীর সেই নোটিশে বলা হয়েছে, ১৫ দিনের মধ্যে অমর্ত্য সেনকে বাড়ি ছাড়তে হবে। তার মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ৬ মে। না হলে কর্তৃপক্ষের তরফে বল প্রয়োগ করা হবে। সেই নোটিশের প্রসঙ্গে টেনে গতকাল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পাল্টা হুঁশিয়ারি দিয়েছে বিশ্বভারতীর কর্তৃপক্ষকে। মূলত, বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ অমর্ত্য সেনের বাবাকে কিছু জমি লিজে দিয়েছিল। সেই সূত্রে অমর্ত্য সেন সেই জমিতে রয়েছেন। কিন্তু বিতর্ক মূলত ১৩ শতক জমি নিয়ে। বিশ্বভারতীর দাবি ওই জমি অমর্ত্য বেআইনিভাবে দখল করে রেখেছেন। আগামী ৬ মে’র মধ্যে ওই জমি ছেড়ে দিতে হবে।

তবে অমর্ত্য সেনের নামে জমির কাগজপত্র রয়েছে বলেও খবর। তাই এ বিতর্কের শুরু থেকেই মুখ্যমন্ত্রী পাশে দাঁড়িয়েছেন নোবেলজয়ীর। গত জানুয়ারিতে প্রতীচী-তে গিয়ে অমর্ত্য সেনের সঙ্গে দেখা করে জমির নথি তার হাতে তুলে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী এবং বলেছিলেন, আপনার হাতে যা দিলাম সেটিই জমির আসল নথি। ফলে আগামী ৬ মে অমর্ত্যের বিপরীতে কী প্রতিক্রিয়া দেখায় বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ এবং বিশ্বভারতী আচার্য অবশেষে এ বিষয়ে মুখ খোলেন কিনা? এখন সেটাই দেখার।

বাংলাদেশ সময়: ২০৫৫ ঘণ্টা, মার্চ ২৭, ২০২৩
ভিএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।