ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

ভারত

হাইভোল্টেজ বাংলা, কলকাতাজুড়ে শাসক-বিরোধীর ধরনা, বিক্ষোভ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫১ ঘণ্টা, মার্চ ৩০, ২০২৩
হাইভোল্টেজ বাংলা, কলকাতাজুড়ে শাসক-বিরোধীর ধরনা, বিক্ষোভ

কলকাতা: কেন্দ্রীয় সরকারের বঞ্চনা এবং একনায়ক মনোভাবের বিরুদ্ধে টানা ৩০ ঘণ্টা ধরনায় বসেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কলকাতার রেড রোডের আম্বেদকর মূর্তির সামনে বুধবার (২৯ মার্চ) দুপুর ১২টা ৫ মিনিটে ধরনায় বসেন মুখ্যমন্ত্রী।

চলবে বৃহস্পতিবার (৩০ মার্চ) সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত। এদিন ভারতের সংবিধান প্রণেতা আম্বেদকারের মূর্তিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করে ধরনায় বসেন মমতা। ধরনা চলার সময় অফিসিয়াল কাজ যাতে ব্যহত না হয় তার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে।  

মূলত একাধিক ইস্যুকে সামনে রেখে ধরনা প্রতিবাদে শামিল হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। ইস্যুগুলি হল- তৃণমূল সরকারের সাফল্যে প্রতিহিংসাপরায়ণ বিজেপি সরকার বাংলাকে ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করছে। কেন্দ্রের কাছে রাজ্যের প্রাপ্য প্রায় ১ লাখ কোটি রুপি। ১০০ দিনের কাজে কেন্দ্র সরকারের কাছে বকেয়া সাত হাজার কোটি রুপি। প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে এই প্রকল্পের টাকা দেওয়া পশ্চিমবঙ্গকে দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে কেন্দ্র। রাজ্য সরকারের দাবি, কাজ করেও ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত প্রায় পশ্চিমবঙ্গের ১৭ লাখ পরিবার।

এছাড়া আবাস যোজনায় (বাড়ি প্রকল্প) কেন্দ্রের কাছে রাজ্যের প্রাপ্য ৮ হাজার ২০০ কোটি রুপি। মমতার দাবি, এতে ১১ লাখ ৩৬ হাজার পরিবার বঞ্চিত হচ্ছে পাকা বাড়ি থেকে। এছাড়া ইস্যুগুলির মধ্যে রয়েছে, কেন্দ্রীয় এজেন্সির (সিবিআই , ইডি ইত্যাদি) দ্বারা বিরোধীদের হেনস্থা। আদানির স্বার্থে এলআইসি (জীবন বীমা), রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে গচ্ছিত জনগণের অর্থ তছরূপ তদন্তের দাবি। জ্বালানি তেলের দাম আকাশছোঁয়া। লাভজনক সরকারি সংস্থাগুলিকে বিক্রি করে দেওয়া কারণে কাজ হারাবে লাখ লাখ মানুষ। ধর্ম ও জাতপাতের বিভাজনের রাজনীতি করে সবার মধ্যে বিভেদ তৈরি করার চেষ্টা চলছে। স্বাধীন ভাবনা-চিন্তা মত প্রকাশের অধিকার কমে এসেছে ফলে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ভিত্তিতে আঘাত আসছে।

মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর এই নিয়ে দ্বিতীয়বার ধরনায় বসলেন মুখ্যমন্ত্রী। এর আগে ২০১৯ এপ্রিলে সারদা ঘুষ কাণ্ডে পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারের সন্ধানে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা দল যখন কলকাতায় হানা দিয়েছিল তখনও তার গ্রেফতার ঠেকাতে রাজীবের বাড়ির সামনে তিনদিন ধরনা দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তারও আগে বিরোধী নেত্রী থাকাকালীন সিঙ্গুর আন্দোলনে টানা ২২ দিন ধরনা দিয়েছিলেন মমতা।

অপরদিকে, কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বঞ্চনার প্রতিবাদে মুখ্যমন্ত্রী যেমন ধরনায় বসেছেন তেমন একই ইস্যুতে কলকাতার শহিদ মিনারের সামনে সমাবেশে ভাষণ দেবেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, মমতার ধরনার মঞ্চ থেকে ছ’শ মিটার দূরে অভিষেকের সভা। আবার অভিষেকের সভা থেকে ১০০ মিটার দূরে আদালতের রায়ে মমতার সরকারের বিরুদ্ধে ধরনা চলছে রাজ্য সরকারি কর্মীদের ডিএ বকেয়ার বিরুদ্ধে। সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে ডিএ কর্মীদের অভিমত, আমার আমাদের অবস্থান থেকে সরে আসবো না।

তবে বুধবার শাসক-বিরোধী দু’পক্ষই রাজপথে নামছে। এদিন সকাল থেকে কলকাতার শ্যামবাজার পাঁচমাথার মোড়ে মমতার সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে ধরনায় বসেছে রাজ্য বিজেপি। আবার দুপুর আড়াইটে মমতা এবং মোদী -দুই শাসকের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও বঞ্চনা ইস্যুতে কলকাতার রামলীলা ময়দান থেকে পার্ক সার্কাস মোড় পর্যন্ত মিছিলের রয়েছে বামেদের। বাদ নেই কংগ্রেসও। রাহুল গান্ধী ইস্যুতে দুপুর ৩টা নাগাদ মৌলালি থেকে পার্ক সার্কাস মোড় পর্যন্ত হাঁটবেন কংগ্রেস নেতা-নেত্রীরা। যার জেরে গোটা শহরে তীব্র যানজটের আশঙ্কা রয়েছে। কলকাতা পুলিশের অনুমান, শহরজুড়ে যানজটের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এখন দেখার হাইভোল্টেজ বাংলায়, কলকাতাজুড়ে আজ শাসক-বিরোধীর ধরনা-বিক্ষোভে কোন দল রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে পারে। কারণ, সামনেই পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত ভোট এবং বছর পেরোলেই ভারতে লোকসভা নির্বাচন।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৮ ঘণ্টা, মার্চ ৩০, ২০২৩
ভিএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।