ঢাকা, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

আগরতলা

শেখ হাসিনার ভারত সফরে উপকৃত হবে ত্রিপুরা, আশা ব্যবসায়ীদের

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৬, ২০২২
শেখ হাসিনার ভারত সফরে উপকৃত হবে ত্রিপুরা, আশা ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশের দিকে স্থলবন্দরের সংযোগকারী রাস্তা বেহাল অবস্থায় রয়েছে

আগরতলা (ত্রিপুরা): বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর ঘিরে আশার আলো দেখতে পাচ্ছেন ত্রিপুরা রাজ্যের ব্যবসায়ীরা। রাজ্য ও বাংলাদেশের মধ্যে আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে গতি আসবে এ আশা করছেন তারা।

ত্রিপুরার সঙ্গে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে, যা কূটনৈতিক বাঁধনের ঊর্ধ্বে বলেও অনেকের অভিমত। এই সম্পর্ক বাংলাদেশের জন্মলগ্ন থেকে। ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় ত্রিপুরা রাজ্যের মানুষ আন্তর্জাতিক বিধি নিষেধের গন্ডি ভুলে বাংলাদেশের উদ্বাস্তু মানুষদের জায়গা করে দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক গাঢ় থেকে গাঢ়তর হয়েছে, সেই সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক এগিয়ে গিয়েছে। যার ফল পশ্চিমবঙ্গসহ দেশের অন্যান্য রাজ্যের ব্যবসায়ী মহল পেয়েছেন।  

ত্রিপুরা রাজ্যের সঙ্গে বাংলাদেশের আত্মিক সম্পর্ক থাকলেও সেই তুলনায় ব্যবসায়িক সম্পর্ক সারা দেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগোয়নি। যার ফলে অপেক্ষাকৃত পিছিয়ে রয়েছেন রাজ্যের ব্যবসায়ী ও শিল্প উদ্যোগী মহল। এই নিয়ে তাদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ রয়েছে। তবে বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতাপূর্ণ মনোভাব, রাজ্যের আমদানি-রফতানি বাণিজ্যর সঙ্গে যুক্ত ব্যবসায়ীদের চেষ্টা এবং বর্তমান কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের উদ্যোগের ফলে ধীরে ধীরে এ ব্যবধান কমছে।  

ত্রিপুরার ব্যবসায়ীদের বক্তব্য, বিষয়টিতে আরও একটু গুরুত্ব দিলে রাজ্যের ব্যবসায়ী মহল যেমন উপকৃত হবেন তেমনি বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীরা লাভবান হবেন। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরকে ঘিরে আশায় বুক বাঁধছেন রাজ্যের ব্যবসায়ী মহল।  

ইন্ডিয়ান চেম্বার্স অব কমার্স এবং ইন্দো-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজর ত্রিপুরা চ্যাপ্টারের সাধারণ সভাপতি সুজিত রায়, শেখ হাসিনার ভারত সফরে রাজ্য উপকৃত হবে বলে আশাবাদী। তিনি এ বিষয়ে বাংলানিউজের সঙ্গে নিজের অভিমত ব্যক্ত করতে গিয়ে মঙ্গলবার (৬ সেপ্টেম্বর) বলেন, ত্রিপুরা এবং বাংলাদেশের মধ্যে আমদানি-রফতানি বাণিজ্য রয়েছে। বাংলাদেশ থেকে যে পরিমাণ পণ্য প্রতি বছর আমদানি হয় তার তুলনায় খুব সামান্য পরিমাণ পণ্যই বাংলাদেশে রফতানি হয় ত্রিপুরা থেকে। রাজ্যের ব্যবসায়ী মহল বিভিন্ন ধরনের পণ্য রফতানি করতে আগ্রহী, একই ভাবে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরাও ত্রিপুরা রাজ্য থেকে পণ্য আমদানি করতে আগ্রহী। কিন্তু তা করা সম্ভব হচ্ছে না বাংলাদেশের দিক থেকে বেশ কিছু প্রতিবন্ধকতার জন্য।  

এ পরিস্থিতিতে তিনি আশা করছেন উভয় দেশের প্রধানমন্ত্রীসহ অন্যান্য উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে যে আলোচনা হবে, তখন রাজ্যে ও বাংলাদেশের মধ্যে আমদানি-রফতানি সরলীকরণের বিষয় গুরুত্ব সহকারে আলোচনায় আসবে।  

ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে ব্যবসায়ী সংক্রান্ত বিভিন্ন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এর ফলে একদিকে যেমন ভারতীয় শিল্পগোষ্ঠী বাংলাদেশে গিয়ে শিল্প কারখানা স্থাপন করছেন, তেমনি বাংলাদেশের বেশ কিছু শিল্পগোষ্ঠী ইতোমধ্যে ভারতে তাদের কারখানার ইউনিট স্থাপন করেছেন। বাংলাদেশের শিল্প উদ্যোগীরা ভারতের অন্যান্য রাজ্যে তাদের ইউনিট স্থাপন করতে পারলেও ত্রিপুরায় ইউনিট স্থাপনে অনুমোদন পাচ্ছেন না। এজন্য তাদের বিশেষ অনুমতি নিতে হয়, সব ক্ষেত্রে অনুমতি দেওয়া হয় না। এক্ষেত্রেও সরলীকরণ হওয়া প্রয়োজন।  

আখাউড়া সীমান্তসহ বেশ কয়েকটি জেলা সীমান্তের স্থলবন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি-রফতানি হচ্ছে। কিন্তু স্থলবন্দরগুলোর বেশিরভাগের পরিকাঠামো খুব খারাপ। বিশেষ করে বাংলাদেশের দিকে স্থলবন্দরের সংযোগকারী রাস্তা বেহাল অবস্থায় রয়েছে। এগুলোর পরিকাঠামোর উন্নয়ন করা অত্যন্ত জরুরি।

ভারতের মূল ভূখণ্ড থেকে যে সব পণ্য সামগ্রী ত্রিপুরায় আসে তা সারা উত্তর পূর্বাঞ্চল ঘুরে আসে। এর ফলে একদিকে যেমন সময় অনেক বেশি লাগে, পরিবহন খরচ অনেক বেশি হয়। তাই বাংলাদেশের উপর দিয়ে ত্রিপুরায় নিয়মিত ভাবে পণ্য পরিবহনের ট্রানজিট দিলে লাভবান হবে সবাই।  

ত্রিপুরা রাজ্যের ব্যবসায়ী মহল এই বিষয়গুলো নিয়ে শেখ হাসিনার ভারত সফরে আলোচনা হবে এবং দ্রুত সমাধান সূত্র বেরিয়ে আসবে বলে আশা করছেন। বিষয়গুলো ইতোমধ্যে রাজ্যের ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর তরফে ত্রিপুরা সরকারের মাধ্যমে কেন্দ্রের কাছে প্রস্তাব আকারে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন সুজিত রায়। সব মিলিয়ে তারা আশাবাদী শেখ হাসিনার এবারের ভারত সফর ত্রিপুরা এবং বাংলাদেশের মধ্যে ব্যবসায় গতি আনবে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৬, ২০২২
এসকেএন/এসএ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।