ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

আগরতলা

মাশরুম চাষ করে ভাগ্য বদলালেন ত্রিপুরার মিঠু

সুদীপ চন্দ্র নাথ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৪৩ ঘণ্টা, মার্চ ১২, ২০২১
মাশরুম চাষ করে ভাগ্য বদলালেন ত্রিপুরার মিঠু

আগরতলা (ত্রিপুরা): আগরতলা থেকে প্রায় ১২১ কিমি দূরে ঊনকোটি জেলার ফটিকরায় এলাকার গকুলনগর গ্রামের এক গৃহবধূ মিঠু চক্রবর্তী। মাশরুম চাষ করে নিজের পরিবারের অভাব-অনটন দূর করেছেন এ নারী উদ্যোক্তা।



মিঠু চক্রবর্তীর পরিবারে স্বামী, শ্বশুর ও দুই ছেলে রয়েছে। পরিবারের আর্থিক অনটন দূর করার জন্য তিনি সেলাইয়ের কাজ শুরু করেন। সেলাই করে যা রোজগার হতো, তাতে পরিবার চলতো না। পরে ২০১৮ সালে ত্রিপুরা সরকারের এক উদ্যোগ তার জীবনের চাকা ঘুরিয়ে দেয় এবং এখন তিনি একজন সফল নারী উদ্যোক্তা।

২০১৮ সালের ৭ ডিসেম্বর ত্রিপুরা সরকারের তরফে ঊনকোটি জেলার কুমারঘাটে মাশরুম চাষের ওপর ১৩ দিনের এক প্রশিক্ষণ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে প্রশিক্ষণ নেন মিঠু।

প্রশিক্ষণ শেষে তার হাতে মাশরুম বীজের দু’টি প্যাকেট তুলে দেওয়া হয়। এরপর তিনি বাড়িতে মাশরুম চাষ করতে শুরু করেন। প্রথমবারেই সফলভাবে মাশরুম উৎপাদন করতে পারায় নিজের সঞ্চিত প্রায় পাঁচ হাজার রুপি বিনিয়োগ করে আরেকটু বড় আকারে চাষ শুরু করেন তিনি।

তারপর তাকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। প্রথমদিকে উৎপাদিত মাশরুম স্থানীয় বাজারে বিক্রি করলেও তা এখন আগরতলার বাজারে বিক্রি করেন মিঠু। এখন প্রতিদিন তার খামারে গড়ে ৩৫ থেকে ৪০ কেজি মাশরুম উৎপাদিত হয় এবং প্রতি কেজি মাশরুম ১৫০ থেকে ১৫৫ রুপি করে পাইকারের কাছে বিক্রি হয়। প্রতিদিন গড়ে তার ছয় হাজার রুপি আয় হয়, অর্থাৎ মাসিক আয় অন্তত ১ লাখ ৮০ হাজার রুপি।

মিঠু বাংলানিউজকে জানান, প্রথমে বাড়িতে ছোট একচালা ঘরে মাশরুম চাষ শুরু করলেও এখন এর জন্য আলাদা ঘর তৈরি করেছেন। এখন তার খামারে ছয়জন কাজ করেন। তাদের মধ্যে তিনজন নারী এবং তিনজন পুরুষ।


মিঠুর পরিবারে এখন আর্থিক সচ্ছলতা এসেছে। তার বড় ছেলে কলেজে পড়ছেন এবং ছোট ছেলে এ বছর মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে।

এদিকে, মাসে দুয়েকদিন মাশরুম তেমন বিক্রি হয় না বলে সেগুলো দিয়ে আচার তৈরির পরিকল্পনা নিয়েছেন মিঠু। তিনি জানান, ‘ত্রিপুরা লাইভলিহুড মিশন’ থেকে তিনি বিভিন্ন ধরনের আচার তৈরির প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। ফলে এখন নানা ধরনের আচার তৈরি করতে পারেন তিনি। সম্প্রতি তার মাশরুমের খামার পরিদর্শন করেন ত্রিপুরা লাইভলিহুড মিশনের কর্মকর্তারা। তাদের পরামর্শেই বিক্রি না হওয়া মাশরুম দিয়ে আচার তৈরি শুরু করেন তিনি।

তার লড়াই ও সাফল্যের কথা শুনে গত ৫ মার্চ ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব মিঠুর মাশরুম আচারের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। এতে ভীষণ খুশি মিঠু। মুখ্যমন্ত্রী পরিদর্শনের পর তার মাশরুম ও এর আচারের চাহিদা অনেক গুণ বেড়েছে। তবে, এখনো আচারের বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু না করলেও খুব দ্রুত সে লক্ষ্যে আগাবেন তিনি। মাশরুমের খামারটি আরও বড় করার পরিকল্পনাও নিয়েছেন তিনি। তার সাফল্য দেখে গ্রামের আরও কয়েকজন মাশরুম চাষের বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।

বাংলানিউজকে মিঠু জানান, তিনি তার সাফল্যের কৃতিত্ব দিতে চান মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেবকে। কারণ তিনি মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর থেকেই রাজ্যের সব মানুষের উদ্দেশে বলছেন, সরকারি চাকরির চিন্তা না করে নিজে উদ্যোগী হতে।

অন্যদিকে, সেলাইয়ের কাজটিও ছেড়ে দেননি মিঠু। গ্রামের মেয়েদের দিয়ে সেলাইয়ের কাজ করাচ্ছেন বলেও জানান সফল এ নারী উদ্যোক্তা।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৪৩ ঘণ্টা, মার্চ ১২, ২০২১
এসসিএন/এফএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।