ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

আগরতলা

লকডাউনের সময় আখ চাষ করে সফল ২ দিনমজুর

সুদীপ চন্দ্র নাথ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯২৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২১
লকডাউনের সময় আখ চাষ করে সফল ২ দিনমজুর লকডাউনের সময় আখ চাষ করে সফল ২ দিনমজুর

আগরতলা (ত্রিপুরা): বাংলায় একটি প্রবাদ আছে 'ইচ্ছা থাকলে উপায়'। এই প্রবাদকে আবারও সত্য প্রমাণ করলেন ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলা থেকে প্রায় ২১৪ কিমি দূরে উত্তর জেলার কদমতলা এলাকার প্রত্যন্ত গ্রামের দুই দিনমজুর।

করোনা কালে লকডাউনের জন্য কাজ হারিয়ে মানুষ যখন দিশেহারা, তারা তখন আখ চাষ শুরু করেন।

২০২০ সালের মার্চ মাসে ভারত জুড়ে যখন করোনা ভাইরাস বাড়ন্ত, তখন সারাদেশের সঙ্গে ত্রিপুরা রাজ্যেও লকডাউন ঘোষণা করা হয়। লকডাউনের ফলে কাজ হারান লাখ লাখ মানুষ। তাদের মধ্যে ছিলেন উত্তর জেলার কদমতলা ব্লকের কালাগাঙ্গেরপার গ্রাম পঞ্চায়েতের বাসিন্দা ইচাক আলী এবং আলা উদ্দিনও।

পেশায় দিনমজুর এই দুইজন প্রথম কদিন দিশেহারা হয়ে এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করে ছিলেন। তারপর পরিকল্পনা করেন বাড়ির পাশের পরিত্যক্ত তিন বিঘা জমিতে আখ চাষ করার। এরপরই তারা এই জমি পরিষ্কার করে আখের চারা রোপণ করেন। ১১ মাস পর তাদের এই জমির আখ কাটার উপযুক্ত হয়েছে এবং ইতোমধ্যে তারা আখের রস দিয়ে গুড় তৈরি করে বিক্রি করছেন।

এক সময় ত্রিপুরা রাজ্যে প্রচুর পরিমাণে আখ চাষ হত এবং তা থেকে গুড় তৈরি হত। তখন আখ থেকে রস বের করার জন্য গরু ব্যবহার হত কিন্তু তাদের গরু নেই, তাই তারা পাওয়ারটিলার ভাড়া করে আখের রস বের করার মেশিনের সঙ্গে বাঁশ দিয়ে বেঁধে স্বংক্রিয় যন্ত্র তৈরি করে ফেলেছেন। পাওয়ারটিলার চালিয়ে দিলে এটি গরুর মত নিজে থেকে বৃত্তাকার ভাবে ঘুরছে এবং আখের রস বের হচ্ছে। গত একমাস ধরে এভাবে তারা রস বের করে তা জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করছেন বলে জানান। প্রতিদিন গড়ে প্রায় ২৮ কেজি করে গুড় উৎপাদন করছেন বলেও জানান তারা।

আখ চাষিরা জানান ইতোমধ্যে তারা তাদের খরচ বাদ দিয়ে প্রায় ৫০ হাজার রুপি মুনাফা করেছে। আরও কিছু জমিতে আখ রয়েছে। এগুলো বিক্রি করলে আরও মুনাফা আসবে। ইতোমধ্যে তারা নতুন করে আরও ১১ বিঘা জমি চিহ্নিত করে রেখেছেন আখ চাষের জন্য। তাদের এই উদ্যোগে সরকার যদি আর্থিক সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয় তবে আগামী দিনে আরও বড় ও সফল ভাবে আখ চাষ করতে পারবেন বলেও জানান তারা।
 

সরকারি সাহায্যের আহ্বান জানিয়ে আখ চাষিরা কদমতলা পঞ্চায়েত সমিতির চেয়ারম্যান সুব্রত দেবের কাছে গিয়েছিল। তিনি তাদের বাগান পরিদর্শন করেন এবং তাদের আশ্বাস দিয়েছেন সরকারি স্কিমের মাধ্যমে আর্থিক সহায়তা প্রদান।

একটা সময় ছিল যখন তারা কাজের জন্য মানুষের বাড়িতে বাড়িতে ঘুরতেন আর এখন তাদের আখ চাষের জমিতে বেশ কয়েকজন মানুষ কাজ করছেন। ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেছেন যে করোনা কালে ত্রিপুরার মানুষের আর্থিক অবস্থা খারাপ হয়নি। এই দুই দিনমজুর মুখ্যমন্ত্রীর দাবির জ্বলন্ত উদাহরণ।

বাংলাদেশ সময়: ০৯২৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২১
এসসিএন/কেএআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।