ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

আগরতলা

‘বাঁশের কোঁড়ল’ দিয়ে বিস্কুট বানালো ভারতের বিসিডিসিআই

সুদীপ চন্দ্র নাথ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২০
‘বাঁশের কোঁড়ল’ দিয়ে বিস্কুট বানালো ভারতের বিসিডিসিআই বাঁশের কোঁড়লের বিস্কুট। ছবি: বাংলানিউজ

আগরতলা (ত্রিপুরা): ‘বাঁশের কোঁড়ল’ দিয়ে বিস্কুট বানিয়ে সবাইকে তাক লাগিয়েছেন আগরতলাস্থিত ভারত সরকারের বাঁশ এবং বেত উন্নয়ন গবেষণা কেন্দ্রের (বিসিডিসিআই) প্রধান ড. অভিনব কান্ত। তিনি বিস্কুটের নাম দিয়েছেন ‘মুলি ব্যাম্বো স্যুট কুকিজ’।

 

ত্রিপুরায় বিভিন্ন জনজাতি গোষ্ঠীর মানুষ ‘বাঁশের কোঁড়ল’ দিয়ে বিভিন্ন ধরনের খাবার বানায়। কিন্তু এটি দিয়ে বিস্কুট বানানো ইচ্ছা কীভাবে এলো? জানতে চাইলে তিনি বাংলানিউজকে জানান, ভারতের বিসিডিসিআইয়ের প্রধান কাজ হচ্ছে বাঁশ ও বেত দিয়ে নতুন পণ্যসামগ্রী বানানো। পাশাপাশি এ সংস্থার উদ্ভাবিত বাঁশ ও বেত দিয়ে নতুন পণ্যসামগ্রী তৈরি করে। ত্রিপুরা ও ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে বসবাসরত বাঁশ ও বেতকারিগরকে প্রশিক্ষণ ও তাদের আরও একটি অন্যতম প্রধান কাজ।  কিন্তু করোনার কারণে গত মার্চ মাসে ভারতজুড়ে লকডাউন শুরু হয়। এর ফলে তাদের প্রতিষ্ঠানে ত্রিপুরাসহ অন্যান্য রাজ্য থেকে আসা প্রশিক্ষণার্থীদের প্রশিক্ষণ কর্মসূচি বন্ধ রয়েছে। তাই তিনি কিছুটা অবসর সময় কাটাচ্ছিলেন। এ সময় তিনি বাঁশ নিয়ে আরও গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা করার সময় পান। বাঁশের কোঁড়লের মধ্যে কিছু ভালো বৈশিষ্ট্য রয়েছে যেমন এগুলোতে চিনির পরিমাণ কম, নেই কোলেস্টেরল। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার । তাই এটি বিভিন্ন বয়সের মানুষ খেতে পারবে। কিন্তু ত্রিপুরা ও উত্তর-পূর্ব ভারতের কয়েকটি রাজ্য ছাড়া দেশের অন্যান্য জায়গায় বাঁশের কোঁড়ল খাওয়ার প্রচলন নেই। তাই যদি ভিন্নভাবে বাঁশের কোঁড়ল দিয়ে খাদ্য তৈরি করা যায় তবে, সারাদেশের মানুষ এগুলো খেতে পারবে। এটি চিন্তা করে তার মাথায় কোঁড়ল দিয়ে বিস্কুট বানানোর ভাবনা আসে। এটিকে তিনি বাস্তবে রূপ দেন।  ত্রিপুরার ২০ প্রজাতির বাঁশ রয়েছে। যেকোনো প্রজাতির বাঁশের কোঁড়ল দিয়ে কি বিস্কুট তৈরি সম্ভব না, এজন্য বিশেষ কোনো প্রজাতির বাঁশ কোঁড়লের প্রয়োজন হয়? এ প্রশ্নের জবাবে ড. অভিনব বলেন, যেকোনো প্রজাতির বাঁশের কোঁড়ল দিয়েই বিস্কুট তৈরি করা সম্ভব। এজন্য তিনি বিস্কুট তৈরি করতে ‘মুলি’ বাঁশের কোঁড়লকে বেছে নিয়েছেন।  

এর কারণ হিসেবে তিনি আরও জানান, অন্য প্রজাতির বাঁশের কোঁড়ল হালকা তিতা স্বাদের হয়। কিন্তু ‘মুলি’ বাঁশে তিতা স্বাদ নেই এবং খুব সুস্বাদু, খাবার তৈরি করার জন্য ‘মুলি’ বাঁশের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। এছাড়া সমগ্র উত্তর-পূর্ব ভারতের মধ্যে একমাত্র ত্রিপুরার ‘মুলি’ বাঁশ পাওয়া যায়। এসব বিষয়গুলো চিন্তা করে তিনি বিস্কুট তৈরির জন্য ‘মুলি’ বাঁশকে বেছে নিয়েছেন।

বিস্কুট তৈরির প্রক্রিয়া সম্পর্কে তিনি জানান, প্রথমে বাঁশের কোঁড়লকে মিক্সার গ্রাইন্ডারে পিষে নিতে হবে। পরে এর সঙ্গে পরিমাণ মতো ময়দা, চিনি, ঘি, সুগন্ধির জন্য সামান্য পরিমাণ মসলা নিয়ে এগুলোকে আবার একসঙ্গে মিশিয়ে মণ্ড তৈরি করতে হবে। পরে ছাঁচে বা হাতে বিভিন্ন আকারে করে নিতে হয়। সর্বশেষে সেঁকে নিলেই বাঁশের কোঁড়লের বিস্কুট তৈরি হয়ে যায়। তবে তিনি বিস্কুটের মধ্যে কোনো ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করেননি বলেও জানান। স্বাদের ভিন্নতার জন্য মসলার ও চিনিসহ অন্যান্য আনুষাঙ্গিক সামগ্রী পরিমাণ বাড়িয়ে এবং কমিয়ে নিলেই হবে। কোনো ধরনের কেমিক্যাল ছাড়া বিস্কুটগুলো কত দিন পর্যন্ত খাবার উপযোগী থাকবে? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, সেঁকে নিলে কোঁড়লের স্থায়িত্ব এমনিতেই অনেকদিন বেড়ে যায়। তিনি বিস্কুটগুলোকে প্যাকেট করে রেখেছেন। যাতে দুই মাসেরও বেশি সময় ভালো অবস্থায় থাকে।  

তিনি আরও জানান, তার মূল উদ্দেশ্যে হচ্ছে ত্রিপুরার বিশেষ এ প্রজাতির বাঁশ দিয়ে এমন একটি মৌলিক সামগ্রী তৈরি করা, যাকে ভিত্তি করে ত্রিপুরাবাসীর অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি ঘটাতে পারে। এ বিস্কুট পুরোপুরি হাতে তৈরি করে কয়লা অথবা বৈদ্যুতিক চুল্লিতে সেঁকে তৈরি করা সম্ভব। গ্রামবাসী যাতে বিসিডিসিআই থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে এগুলো তৈরি করে বিক্রি করতে পারে।  

বাঁশের কোঁড়ল হচ্ছে একটি মৌসুমি সামগ্রী, মূলত মার্চ-এপ্রিল মাসে প্রথম বৃষ্টি হওয়ার পর থেকে বাঁশ-বাগানে কোঁড়ল গজানো শুরু হয়। সেপ্টেম্বরের শেষ অথবা অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহ নাগাদ পাওয়া গেলেও এরপর আর পাওয়া যায় না। এক্ষেত্রে বছরের বাকি সময়টা বিস্কুট তৈরি করা কঠিন হয়ে পড়বে।

এ সমস্যা সমাধানের কোনো চিন্তা-ভাবনা করেছেন কি? এর উত্তরে ড. অভিনব জানান, ত্রিপুরাসহ উত্তর-পূর্ব ভারতে বাঁশের কোঁড়লকে একটি মৌসুমি খাবার হিসেবে বিবেচনা করা হয়। চীন, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনামসহ অন্যান্য দেশে বাঁশের কোঁড়ল খাওয়ার প্রচলন রয়েছে। এসব দেশগুলোতে মৌসুমি এ পণ্যটিকে বছরের অন্যান্য সময়ের জন্য প্রক্রিয়াজাত করে রাখা হয়। ত্রিপুরায় এ ধরনের প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র চালু হলে সারাবছর ধরে বিস্কুট তৈরির কাঁচামাল হিসেবে বাঁশের কোঁড়ল পাওয়া যাবে।

গত ১৮ সেপ্টেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে বাঁশের কোঁড়লের বিস্কুট তৈরি করার কথা প্রথম ঘোষণা করা হয়েছে বিসিডিসিআইয়ের পক্ষ থেকে। মাত্র কয়েকদিনে দেশব্যাপী সাড়া পড়েছে বাঁশের কোঁড়লের বিস্কুটের। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ নতুন উদ্ভাবিত এ বিস্কুট নিয়ে প্রচুর আগ্রহ দেখাচ্ছেন। তাই বাঁশের বিস্কুটের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের বিষয়ে তিনি আশাবাদী।

ভারত সরকারের অর্থায়নের প্রতিষ্ঠিত আগরতলার বাঁশ ও বেত গবেষণা কেন্দ্রটি দেশের একমাত্র প্রতিষ্ঠান। দেশের অন্য কোথাও এ ধরনের প্রতিষ্ঠান এখনো স্থাপিত হয়নি।

বাংলাদেশ সময়: ১৮২৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২০
এসসিএন/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।