ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

আগরতলা

ভেজালমুক্ত সরিষার তেলের জন্য আগরতলায় কারখানা গড়লেন নির্ধন

সুদীপ চন্দ্র নাথ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯২৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৪, ২০২০
ভেজালমুক্ত সরিষার তেলের জন্য আগরতলায় কারখানা গড়লেন নির্ধন

আগরতলা (ত্রিপুরা): ত্রিপুরাবাসীকে ভেজালমুক্ত তেল খাওয়ানোর উদ্দেশ্যে আগরতলায় প্রথম সরিষার তেল প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র স্থাপন করলেন ব্যবসায়ী নির্ধন দেবনাথ।  

ত্রিপুরা রাজ্যের চাহিদার প্রায় সব সরিষার তেল আসে রাজস্থান থেকে।

এরমধ্যে নানা ব্র্যান্ডের তেল রয়েছে।  

অবশেষে প্রথম বারের মতো ব্যক্তিগত উদ্যোগে নির্ধন দেবনাথ এই কারখানাটি স্থাপন করেন ২০১৯ সালের মার্চ মাসে। তার সরিষার তেল উৎপাদন শুরু হওয়ার পর থেকে সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে এই তেলের প্রতি।  

অন্য সকল কারখানা থাকতে সরিষার তেল কারখানা স্থাপনের পরিকল্পনা মাথায় এলো কী করে? বাংলানিউজের তরফে করা এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, একবার পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলায় আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলেন। সেখানে গিয়ে একাধিক কাচ্চি ঘানি দেখেন। যেখানে সরিষা থেকে তেল উৎপাদন করা হচ্ছে এবং মানুষ কারখানা থেকেই ভেজালমুক্ত তেল নিয়ে যাচ্ছে। তখনই তিনি পরিকল্পনা করেন ত্রিপুরায় এমন একটি সরিষার তেল প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র স্থাপন করবেন।  

তিনি আরো জানান, এই প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্রটি স্থাপন করতে ২০ লাখ রুপির বেশি খরচ হয়েছে। তবে ত্রিপুরা সরকারের শিল্প ও বাণিজ্য দফতর থেকে আর্থিক সহায়তা পেয়েছেন। এছাড়াও কারখানাটি চালানোর জন্য যে বিদ্যুৎ প্রয়োজন হয় তাতেও সরকারি তরফে ২৫ শতাংশ ছাড় দেওয়া হচ্ছে।  

এই কারখানাটির দৈনিক ৪শ' লিটার সরিষার তেল উৎপাদন করার ক্ষমতা রয়েছে। তবে বর্তমানে তিনি গড়ে দৈনিক ১শ' লিটার তেল উৎপাদন করছেন। তবে চাহিদা বেশি থাকলে উৎপাদন কিছুটা বেশি করে থাকেন। বর্তমানে একটি শিফটে কারখানায় উৎপাদন হচ্ছে। এটি পরিচালনা করার জন্য মোট তিনজন কারিগরের প্রয়োজন হয়।  

ত্রিপুরা রাজ্যে খুব বেশি পরিমাণে সরিষা উৎপাদন হয় না, কারখানার প্রয়োজনীয় সরিষা কোথা থেকে সংগ্রহ করছেন? এই প্রশ্নের উত্তরে নির্ধন জানান, পশ্চিমবঙ্গে প্রচুর পরিমাণে সরিষা উৎপাদন হয়ে থাকে। সেই রাজ্য থেকেই প্রয়োজনীয় সরিষা আমদানি করে থাকেন।

রাজ্যে উৎপাদিত এই তেলের চাহিদা ব্যাপক রয়েছে। উৎপাদিত তেল প্রতিদিনই শেষ হয়ে যায়। মানুষ নিজেরাই এসে কারখানা থেকে তেল নিয়ে যায়। কারণ এখানে তাদের চোখের সামনেই সরিষা থেকে তেল বের করে দেওয়া হয়। এই তেলে কোন ভেজাল থাকে না ফলে মানুষ খুব উৎসাহের সঙ্গে নিয়ে যান।  

নির্ধন দেবনাথ আরো জানান, বাজারে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ১ লিটার সরিষার তেলের দাম যেখানে ১৪০ থেকে ১৫০ রুপি সেখানে তিনি মাত্র ১২০ রুপি করে প্রতি লিটার তেল বিক্রি করছেন। তিনি তার কারখায় উৎপাদিত তেলে কোন ভেজাল মেশান না। তাছাড়া বড় বড় ব্রান্ডের তেলের মতো তিনিও দুই দফায় ফিল্টার করে তেল বের করছেন। এরপরও তার প্রচুর লাভ থাকে বলেও জানান। তেলের পাশাপাশি সরিষার নির্যাস গুলিকে খৈল বলা হয়ে থাকে। এই খৈলের চাহিদাও প্রচুর রয়েছে। পশুখাদ্য হিসেবে বিশেষ করে দুগ্ধবতী গরুকে খৈল খাওয়ানো হলে দুধের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। তাই গো-পালকরা এই খৈল নিয়ে যান। ১ কেজি সরিষা প্রক্রিয়াকরণ করলে তেল ও খৈল মিলিয়ে ৯শ' গ্রাম উৎপাদন হয়।

আগামী দিনের পরিকল্পনা কি? এ কথা জানতে চাইলে এই উদ্যোক্তা বলেন, কারখানাকে আরও বড় করার পরিকল্পনা রয়েছে। যাতে করে প্রতিদিন আরও বেশি পরিমাণে তেল উৎপাদন করা যায়। এই কারখানাকে দুটি শিফটে কাজ করালে উৎপাদন দ্বিগুন হবে বলেও জানান। পাশাপাশি প্যাকেটজাত করার পরিকল্পনাও রয়েছে। করোনা ভাইরাসের কারণে কাজ অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছে বলেও জানান তিনি।  

তবে রাজ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণ সরিষা উৎপাদন করা হলে সাধারণ মানুষকে আরো কম দামে ভেজালমুক্ত তেল খাওয়ানো যাবে। অপরদিকে সরিষা চাষিরাও আর্থিকভাবে লাভবান হবেন বলেও জানান তিনি। ত্রিপুরা রাজ্যের মাটি সরিষা চাষের উপযোগী। এখানে সঠিকভাবে সরিষা চাষ করা হলে এমন আরও বহু কারখানা গড়ে তোলা সম্ভব হবে। যাতে নতুন করে কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে বলেও জানান নির্ধন দেবনাথ।

বাংলাদেশ সময়: ১৯২৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর, ২০২০
এসসিএন/এমকেআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।