ঢাকা, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

আগরতলা

করোনার সংক্রমণ রোধে রোবট বানালেন ত্রিপুরার হরজিত নাথ

সুদীপ চন্দ্র নাথ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৩৯ ঘণ্টা, মে ২০, ২০২০
করোনার সংক্রমণ রোধে রোবট বানালেন ত্রিপুরার হরজিত নাথ

আগরতলা (ত্রিপুরা): করোনার সংক্রমণ রোধে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সহায়তা করার জন্য একটি রোবট বানিয়েছেন ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেমিক্যাল অ্যান্ড পলিমার ইঞ্জিনিয়ারিং শাখার সহকারী অধ্যাপক হরজিত নাথ।

সম্প্রতি বাংলানিউজকে দেওয়া এক একান্ত সাক্ষাতকারে অধ্যাপক হরজিত নাথ বলেন, উন্নত দেশগুলো করোনা রোগীর চিকিৎসায়, চিকিৎসকদের সহায়তায়, বিশেষ করে স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য যাতে রোগীদের সংস্পর্শে কম আসতে হয় তার জন্য নানা ধরনের রোবটের ব্যবহার করছে। টেলিভিশনসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিষয়গুলো দেখে আমি অনুপ্রাণিত হই এবং নিজেই একটি রোবট বানানোর সিদ্ধান্ত নি।

করোনা বিষয়ে সাধারণ মানুষ তাদের সাধ্যমতো ভারত সরকারকে সহযোগিতা করছে এ বিষয়টি আমাকে আরও অনুপ্রাণিত করছে। তাই আমি যেহেতু ইঞ্জিনিয়ারিং শাখার সঙ্গে জড়িত প্রকৌশলগত কোনো যন্ত্র তৈরি করে সহায়তা করার সিদ্ধান্ত নেই।  

ওই চিন্তা থেকেই করোনার সংক্রমণ রোধে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সহায়তা করার জন্য রোবটটি বানিয়েছি। এর সাহায্যে চিকিৎসক রোগীর সংস্পর্শে না এসে সরাসরি কথা বলতে পারবেন। রোগীদের ওষুধ খাবার-পানিসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী পাঠানো সম্ভব। রোবটটি ১৫ কেজি ওজনের বিভিন্ন সামগ্রী নিয়ে চলাচল করতে সক্ষম। একটি জায়গায় বসে রিমোটের মাধ্যমে রোবটটিকে নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়া যাবে।

বাংলানিউজ: এত সুবিধাযুক্ত রোবটটি তৈরি করতে কতদিন লেগেছে?
হরজিত নাথ: রোবটটি মেকানিক্যাল, ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী, সেন্সরসহ বিভিন্ন ধরনের সামগ্রীর সমন্বয়ে তৈরি করেছি। সবমিলিয়ে খরচ হয়েছে প্রায় ২৫ হাজার রুপি এবং আর সময় লেগেছে প্রায় ১৫ দিন। তবে এ কাজে আমাকে সহযোগিতা করেছেন স্ত্রী বিজ্ঞান শিক্ষিকা সবিতা নাথ। বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজের অবসরে বাড়িতে বসেই রোবটটি তৈরি করেছি।

বাংলানিউজ: কিভাবে কাজ করে এবং চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের কি কি সহযোগিতা করবে?
হরজিত নাথ: অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা সংক্রমিত হয়ে পড়েন। এ রোবটটি ব্যবহার করলে রোগীদের কাছ থেকে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা নেই। চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা নিরাপদ দূরত্বে বসে রিমোটের মাধ্যমে রোবটটিকে পরিচালিত করে রোগীদের কাছে নিয়ে যেতে পারেন। এছাড়া রোবটের সঙ্গে থাকা মাইক্রোফোন ও ক্যামেরার সাহায্যে রোগীর শারীরিক অবস্থা জানতে ও দেখতে পারেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। এরপর রোগীর শারীরিক অবস্থা অনুযায়ী রোবটের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ওষুধ এমনকি খাবারও পাঠিয়ে দেওয়া সম্ভব। এ রোবটটি এমন সবসামগ্রী দিয়ে তৈরি করা হয়েছে, যাতে খুবসহজে স্যানিটাইজ করা যায়।

তিনি আরও বলেন, রোবটটি একসঙ্গে ১৫ কেজি ওজনের সামগ্রী নিয়ে চলাফেরা করতে সক্ষম এবং একবার সম্পূর্ণ চার্জ দিলে টানা দেড়ঘণ্টা কাজ করতে পারবে। ব্যাটারিচালিত এ যন্ত্রটির ওজন বহনের ক্ষমতা চাইলে বাড়ানো সম্ভব।

তিনি রোবটটি ত্রিপুরা সরকারের হাতে তুলে দিতে চাইছেন। এর জন্য রাজ্য সরকারের একাধিক আধিকারিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন বলেও জানান হরজিত নাথ।

সবিতা নাথ জানান, স্বামীর এমন একটি অভিনব কাজে তিনি অত্যন্ত খুশি। তাই নিজেও সাধ্যতম সহযোগিতা করেছেন। এটি সমাজের কল্যাণে লাগবে ভেবে তিনি সবচেয়ে আনন্দ বোধ করছেন। সেইসঙ্গে বিশ্ববাসী যাতে দ্রুত করোনা থেকে মুক্তি পায় সেই প্রার্থনা করেন।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৩৭ ঘণ্টা, মে ২০, ২০২০
এসসিএন/ওএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।