ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

আগরতলা

বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের নো ম্যানস ল্যান্ডে চা চাষ

সুদীপ চন্দ্র নাথ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১৭ ঘণ্টা, জুলাই ৩১, ২০১৯
বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের নো ম্যানস ল্যান্ডে চা চাষ চা পাতা সংগ্রহ করছেন একজন শ্রমিক। ছবি: বাংলানিউজ

আগরতলা (ত্রিপুরা): ত্রিপুরা রাজ্যের ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের কাঁটাতারের বাইরে যে ১৫০ মিটার পতিত জমি রয়েছে, এ জমিতে চা চাষ শুরু হয়েছে। ত্রিপুরা সরকারও জমির মালিকদের উৎসাহ-আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে এসব জমিতে চা চাষ করার জন্য।

বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্মের পর দু’দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে কিছু চুক্তি হয়। এ চুক্তি ইন্দিরা-মুজিব চুক্তি নামে পরিচিত।

এ চুক্তির অন্য সব বিষয়ের মধ্যে অন্যতম একটি বিষয় ছিল যে, যদি কোনো দেশ সীমান্ত বরাবর বেড়া দেয়, তবে তা শূন্য পয়েন্ট থেকে নিজ ভূখণ্ডের ১৫০ মিটার ভেতরে নির্মাণ করতে হবে।

এ চুক্তি অনুসারে অনুপ্রবেশ, মাদক পাচারসহ অপরাধীদের অবাদ যাতায়াত বন্ধ করতে ভারত সরকার সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করেছে।

কাঁটাতারের বেড়া থেকে শূন্য পয়েন্ট পর্যন্ত ১৫০ মিটার জায়গা নো ম্যানস ল্যান্ড হিসেবে চিহ্নিত। এ জমিতে ঘন জঙ্গল থাকতে পারবে না। তাই এসব ভূখণ্ডের নিচু জমিতে ধানসহ সবজি চাষ হলেও বাকি জমি পতিত থাকে।

আগরতলা থেকে প্রায় ৩৭ কিলোমিটার দূরে পশ্চিম জেলার কাতলামারা এলাকার অন্তর্গত রাঙ্গামুড়া সীমান্তের নো ম্যানস ল্যান্ডে চা বাগান করার সিদ্ধান্ত নেন স্থানীয় বাসিন্দা অনিমেষ দেব নামে এক ব্যক্তি।

তিনি ২০১৪ সালে ৩৫ বিঘা জমিতে চা বাগান করেন। বর্তমানে বাগানের বয়স ছয় বছর। বাগান করার এক বছর পর অর্থাৎ দ্বিতীয় বছর ৭শ’ কেজি চা পাতা উৎপাদিত হয় এ বাগান থেকে। এর পরের বছর তিন হাজার ৭শ' কেজি, চতুর্থ বছর উৎপাদন হয়েছে ১০ হাজার কেজির বেশি, পঞ্চম বছর ৩১ হাজার কেজির বেশি। এ বছর জুলাই পর্যন্ত ২০ হাজার কেজি চা পাতা উৎপাদিত হয়েছে। ডিসেম্বর পর্যন্ত চা পাতা উৎপাদিত হবে।

এ বাগান করার সময় সরকার থেকে চা চারা তাকে দেওয়া হয়েছে। রাষ্ট্রীয় গ্রামীণ রোজগার যোজনার মাধ্যমে সরকারের তরফ থেকে বাগান তৈরির কাজে সহায়তা করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

বাগান তৈরির জন্য ধাপে ধাপে প্রায় ছয় থেকে সাত লাখ রুপি খরচ হয়েছে বলেও জানান অনিমেষ দেব। চা বাগান তৈরির আগে তিনি বাঁশের ব্যবসা করতেন।  নো ম্যানস ল্যান্ডে চা চাষ।  ছবি: বাংলানিউজ সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়ার বাইরে বাগান তৈরি করেছেন, এক্ষেত্রে কোনো ধরনের সমস্যার পড়তে হয়েছে কি? এর উত্তরে অনিমেষ জানান, বাগানে সেচ দেওয়ার যন্ত্রপাতি রাতেও বাগানে থাকে। তিনি সেচের যন্ত্রপাতি ডিসেম্বর মাসে বাগানে নিয়ে যান এবং মার্চ, এপ্রিলে বৃষ্টি শুরু হলে বাগান থেকে নিয়ে আসেন। রাতে সেচের যন্ত্রপাতি বাগানে পড়ে থাকলেও চুরি বা বাগান নষ্টের কোনো ঘটনা ঘটেনি। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) তরফ থেকে যথেষ্ট সহযোগিতা করে থাকে বলেও জানান তিনি।

তার এ সাফল্য দেখে এলাকার আরও কয়েকজন নো ম্যানস ল্যান্ডে চা বাগান করছেন।

অনিমেষ দেব জানান, তার এ বাগান দেখে উৎসাহিত ত্রিপুরা রাজ্য উন্নয়ন নিগম। নিগমের চেয়ারম্যান সন্তোষ সাহা নিজে তার বাগান পরিদর্শন করে ত্রিপুরা সরকারের কাছে একটি প্রতিবেদন তৈরি করে পাঠিয়েছেন চা বাগান করার জন্য।

সন্তোষ সাহা বলেন, ত্রিপুরা রাজ্যের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রায় ৮৬০ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে। এর বেশির ভাগ জমি খালি পড়ে আছে। এ জমিতে চা বাগান করলে জমির উপযুক্ত ব্যবহার হবে। এতে জমির মালিক লাভবান হবেন, পাশাপাশি অনেক লোক বাগানে কাজ করতে পারবেন। যা থেকে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।

তিনি জানান, তারা রাজ্য সরকারকে যে প্রতিবেদন দিয়েছেন, তাতে তারা উল্লেখ করেছেন, ভারত সরকারের সীমান্ত উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থায়ন অথবা রাষ্ট্রীয় গ্রামীণ কর্মসংস্থান যোজনার মাধ্যমে যেন সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়ার বাইরে চা বাগান করতে দেওয়া হয়। রাজ্য সরকার এ বিষয়ে এগিয়ে আসবে বলে তিনি আশাবাদী।  নতুন চা পাতা।  ছবি: বাংলানিউজ সরকারের পাশাপাশি ত্রিপুরা রাজ্য চা উন্নয়ন নিগম কাঁটাতারের বেড়ার বাইরে চা চাষ করতে আগ্রহী চাষিদের সহায়তা করবে বলেও জানান সন্তোষ। এসব চাষিদের বিনামূল্যে চা চারা বিতরণ, বাগান পরিচর্যার প্রশিক্ষণসহ চা চাষের বিষয়ে যাবতীয় পরামর্শ দেওয়া হবে।

কাতলামারা এলাকার বহু লোকের পতিত জমি পড়ে আছে বেড়ার বাইরে। তারাও খুশি চা উন্নয়ন নিগমের চেয়ারম্যান সন্তোষ সাহার এ উদ্যোগে।   

বাংলাদেশ সময়: ১০১৬ ঘণ্টা, জুলাই ৩১, ২০১৯
এসসিএন/আরবি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।