ঢাকা, বুধবার, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ০১ মে ২০২৪, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫

আগরতলা

টগা, গাড়ই সংক্রান্তি, কাতি বিহুতে মেতেছে ত্রিপুরা-আসাম

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২০২ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৮, ২০১৭
টগা, গাড়ই সংক্রান্তি, কাতি বিহুতে মেতেছে ত্রিপুরা-আসাম টগা, গাড়ই সংক্রান্তি, কাতি বিহুতে মেতেছে ত্রিপুরা-আসাম

আগরতলা: বাংলা ক্যালেন্ডার অনুসারে ৩১ আশ্বিন ১৪২৪ বাংলা বুধবার (১৮ অক্টোবর)। এখন মাঠে মাঠে সবুজ ধানের সমাহার ও ধানক্ষেত থেকে ধানের শিষ বের হচ্ছে। 

হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মতে ধনসম্পদ ও অর্থের অধিষ্ঠাত্রী দেবী লক্ষ্মী। মাঠের ধান যাতে ভালো ফলে তাই এদিন ত্রিপুরাসহ আসাম রাজ্যের মানুষ লক্ষ্মী দেবীর আরাধনায় মেতে উঠে।

ত্রিপুরায় লোকাচার ভেদে নাম ভিন্ন ভিন্ন কিন্তু উদ্যেশ্য একই।  

বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চল থেকে আসা মানুষ ও তাদের উত্তর পুরুষরা এই দিনটিকে ‘টগা সংক্রান্তি’ নামে পালন করছেন। এদিন চালতা পাতা নানা ফুলসহ লক্ষ্মী দেবীর পূজা করা হয়। সেই সঙ্গে কমপক্ষে আটটি সবজি দিয়ে নিরামিষ তরকারি রান্না করে লক্ষ্মী দেবীর পূজায় ভোগ দেওয়া হয়। পূজা শেষে চালতা পাতাসহ লক্ষ্মী দেবীর পূজার ফুল, ধান, সবজি ক্ষেতে ছিটানো হয়। আর এদিন থেকে পুরো কার্তিক মাসজুড়ে প্রতিদিন সন্ধ্যায় ধান ক্ষেতের মধ্যে একটি বাঁশের ওপর আকাশ প্রদীপ জ্বালানো হয়। আশ্বিনের সংক্রান্তি উপলক্ষ্যে রান্না করা আটটি সবজি তরকারির কিছু অংশ রেখে দেওয়া হয় পরদিন অর্থাৎ কার্তিক মাসের প্রথম দিন খাওয়ার জন্য। এ বিষয়ে একটি প্রচলিত প্রবাদ আছে ‘আশ্বিনে রান্দি কার্তিকে খাই, যে বর মাঙ্গি তা পাই’।

অপর দিকে বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়া অঞ্চলের মানুষ এ সংক্রান্তিকে ‘গাড়ই’ বলেন। তারাও আটটি সবজি দিয়ে তরকারি রান্না করেন। তবে সামন্য টক হওয়ার জন্য তার সঙ্গে চালতা দেওয় হয়। তেল ও পাঁচ ফোড়ন ছাড়া এ তরকারি রান্না করা হয়। এদিন কলা জুমের চালসহ অন্যান্য সামগ্রী দিয়ে তুলসি তলায় পূজা করা হয়।  

নোয়াখালি অঞ্চল থেকে আসা মানুষজন আশ্বিন মাসের শেষ দিন আতপ চাল রান্না করে তাতে পানি দিয়ে রাখে। কার্তিক মাসের সকালে পান্তা ভাত নারকেল, কলা, গুড় দিয়ে খেয়ে থাকে তারা।
টগা, গাড়ই সংক্রান্তি, কাতি বিহুতে মেতেছে ত্রিপুরা-আসাম
এদিন আসাম রাজ্যজুড়ে পালিত হয় ‘কাতি বিহু’ একে আবার কাঙ্গালি বিহু বলা হয়। বাড়ির গৃহিনী ও মেয়েরা সন্ধ্যায় ধানক্ষেতে গিয়ে আকাশ বাতি জ্বালিয়ে লক্ষ্মী পূজা করেন। পাশাপাশি অধিক ফসলের আশায় বাড়ির বয়োজেষ্ঠ নারীরা তুলসি তলায় প্রদীপ জ্বালিয়ে লক্ষ্মী দেবীর আরাধনা করেন। আসামের কিছু কিছু অঞ্চলে এই উপলক্ষ্যে পিঠে তৈরি করে নিজেদের পাশাপাশি বাড়ি গৃহপালিত গরুদেরও এ পিঠে খাতে দেয়।

এখন আধুনিক নগর সভ্যতার কারণে গ্রামীণ এই প্রথাগত উৎসবগুলো অনেক কমে আসলেও সমাজতাত্বিকদের মতে প্রথাগত উৎসবের পেছনে অনেক বৈজ্ঞানিক কারণ রয়েছে।

বছরের এই সময় ধানক্ষেতে পোকামাকড়ের প্রচুর আক্রমণ ঘটে। এদের আক্রমণে ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়। ফলে অনেক সময় উৎপাদন কমে আসে। তাই এক মাসজুড়ে মাঠে সন্ধ্যায় আকাশ বাতি জ্বালালে পোকামাকড় প্রদীপের আগুনে ঝাঁপিয়ে মারা পড়ে। এতে রক্ষা পায় জমির ধানসহ বিভিন্ন ফসল। এভাবে প্রাচীনকালে বালাই নাশক ছাড়াই জমিতে পোকামাকড়ের আক্রমণ প্রতিহত করা হতো।

একইভাবে গরুকে পিঠা খাওয়ানোর পেছনেও রয়েছে কিছু বৈজ্ঞানিক কারণ। আগে জমি চাষের জন্য গরুই ছিলো একমাত্র অবলম্বন। তাই চাষের মৌসুমে গরুর অস্বাভাবিক খাটুনি খাটতে হতো। কার্তিক মাস এলে মানুষের পাশাপাশি গরুরও কয়েক দিনের জন্য বিশ্রাম ও ভালো খাবার খাইয়ে সবল করে তোলতে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হতো। কয়েক দিন বিশ্রামের পর মাঠ থেকে পাকা ধান উঠলে গরুকে লাগানো হতো মাড়াইয়ের কাজে।

শহরাঞ্চলে এ সব অনুষ্ঠান এখন আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে থাকলেও এখনো ত্রিপুরাসহ আসামের গ্রামীণ এলাকায় এ উৎসগুলো পূর্ণ ঐতিহ্য মেনে পালন করা হয়ে থাকে।

বাংলাদেশে সময়: ১৮০২ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৮, ২০১৭
এসসিএন/জিপি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।