ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ আশ্বিন ১৪৩১, ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ০০ রবিউস সানি ১৪৪৬

ট্রাভেলার্স নোটবুক

সুন্দরী জলকন্যা ‘সন্দ্বীপ’

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫৩৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৮, ২০১৭
সুন্দরী জলকন্যা ‘সন্দ্বীপ’ সন্দ্বীপ সৈকতে বিকেলে সোনালী আভা। ছবি: সোলায়মান হাজারি ডালিম

সন্দ্বীপ (চট্টগ্রাম) থেকে ফিরেঃ পশ্চিমে জেগে উঠছে বিশাল চর, পূর্বাঞ্চলে ভাঙ্গন। ভাঙ্গা-গড়ার এ খেলায়ও তার রূপ একটু কমেনি। যেন চির যৌবনা সে। সাগর আর নদীর অথই জলপথ পেরিয়ে দ্বীপের ভূখণ্ডে নামলেই শরীর যেন শিহরিত হয়ে ওঠে। চারিদিকে এক পলক চেয়ে মুহূর্তে মুগ্ধ হতে হয়। এমন সৌন্দর্য চট্টগ্রামের দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপের। এমন রূপ নিয়ে বঙ্গোপসাগরের মোহনায় জেগে ওঠা হাজার বছরের পুরনো দ্বীপটি হাতছানি দিয়ে ডাকছে সৌন্দর্য পিপাসু পর্যটকদের।

নির্দিষ্ট কোন স্থান নয়-পুরো দ্বীপটিই দেখার মত। সাগর পেরিয়ে জনপদে প্রবেশ করলেই চোখে পড়বে সবুজের সমারোহ, ম্যানগ্রোভ বন।

রাস্তার পাশে দেখা মিলবে কারুকার্যে খচিত বাড়ি-ঘর, সুদৃশ্য শানবাঁধানো ঘাট। কোনো কোনো বাড়ির পাশে দেখা যাবে পানের বরজও।

দ্বীপের সৌন্দর্য দেখতে দেখতে যখন ক্লান্ত-তৃষ্ণার্ত হয়ে পড়বেন তখন রাস্তার পাশেই  স্বস্তায় পাবেন ডাব-নারকেল।   সন্দ্বীপের ডাব দেশের অন্য অঞ্চলের চেযে স্বাদে আলাদা। ডাবের মিষ্টি জল মুহূর্তেই চাঙ্গা করে দেবে ক্লান্ত শরীর। আর এ কারণেই ডাব-নারিকেলের জন্য বিখ্যাত জনপদ।

মূল ভূখণ্ড থেকে পৃথক একটি জনপদ হলেও বেশ সমৃদ্ধ এখানকার মানুষের জীবনাচার ও আতিথেয়তার ধরন। বাড়ি-ঘর নির্মাণেও রয়েছে জৌলুশ। সন্দ্বীপের পৌর শহরের পাশেই রয়েছে প্রায় ১০ কিলোমিটার আয়তনের সমুদ্র সৈকত। কক্সবাজার আর কুয়াকাটার মত না হলেও এ সৈকতের রয়েছে আলাদা আকর্ষণ। খুব ভোরে আর শেষ বিকালে এ সৈকতটি রুপবতী হয়ে ওঠে। বিকেলে সূর্যের আলোয় দ্বীপে আছড়ে পড়া জল ছড়ায় সোনালী আভা।   সন্দ্বীপের গুপ্তছড়া ঘাটের দীর্ঘ জেটি ।  ছবি: সোলায়মান হাজারি ডালিমদ্বীপটির নামের ব্যাপারে কথা হয় উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার এবিএম সিদ্দিকুর রহমানের সঙ্গে। তিনি জানান, দ্বীপের নামকরণ নিয়ে প্রচলিত রয়েছে নানা কথা। অনেকের মতে, এ দ্বীপটি বহু বছর আগে জন মানবহীন ছিল। সেই শূন্য থেকেই দ্বীপটির নাম ছিল শূন্যদ্বীপ।  

দ্বীপের মাটির উর্বরতার কারণে কেউবা দ্বীপটিকে ডাকতো স্বর্ণদ্বীপ নামে। আবার প্রচলিত আছে, ইউরোপীয় পর্যটকরা বাংলাদেশে আসার সময় দূর থেকে এই দ্বীপের বালির স্তুপ দেখে এর নাম দিয়েছিল স্যান্ড-হীপ! ভাষার বিবর্তনে সব নাম হারিয়ে আজ এ জনপদের নাম সন্দ্বীপ। দেশের অন্যতম প্রাচীন দ্বীপ এটি। হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে এ দ্বীপের বুকে মানুষের বসবাস।

নাম যাই হোক, বিভিন্ন প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ, শামুক, ঝিনুক, প্রাকৃতিক দৃশ্যাবলী পর্যটকদের আকৃষ্ট করে আসছে যুগ যুগ ধরে। সময় সুযোগ করে ঘুরে আসতে পারেন আপনিও। তবে সন্দ্বীপ ঘুরে দেখার সবচেয়ে উৎকৃষ্ট সময় হলো শীতকাল। কারণ এ সময় এখানে পাওয়ায় যায় খেজুরের রস দিয়ে তৈরি পায়েস ও বিভিন্ন ধরনের পিঠা-পুলি।

অথই সাগর পাড়ি দিয়ে সন্দ্বীপবাসী যাচ্ছে চট্টগ্রামের কুমিরা ঘাটে।  ছবি: সোলায়মান হাজারি ডালিমযাওয়ার পথ
সন্দ্বীপ যেতে হলে দুই রুট ব্যবহার করা যায়, একটা নৌ পথ, আরকেটা আকাশ পথ। আকাশ পথ ব্যয় বহুল হওয়ায় বেশীর ভাগ পর্যটকই ব্যবহার করে নৌ পথ। চট্টগ্রাম সদরঘাট থেকে সপ্তাহে তিন দিন পাওয়া যাবে সন্দ্বীপের লঞ্চ। তবে সন্দ্বীপ যাওয়ার সব  চেয়ে নিরাপদ রুট হলো চট্টগ্রামের কুমিরা ঘাট থেকে সন্দ্বীপের গুপ্তছড়া জেটি। রাজধানী থেকে ঢাকা-চট্টগ্রামের যে কেনো বাসে উঠে চট্টগ্রামের ছোট কুমিরা নামতে হবে। এরপর সেখান থেকে সিএনজি চালিত অটোরিকশায় যেতে হবে ঘাটে। ঘটে রয়েছে দ্রুতগতি সম্পন্ন স্পিড বোট। জনপ্রতি ৩০০ টাকা ভাড়া দিয়ে মাত্র ২৫ মিনিটে পৌছে যেতে পারবেন সন্দ্বীপের গুপ্তছড়া ঘাটে। চাইলে যেতে পারেন স্টিমার, মালবোট, ট্রলারে করেও। সেক্ষেত্রে ভাড়া পড়বে ১শ’ থেকে দেড়শ’ টাকা। তবে সময় লাগবে ঘণ্টা দেড়েকের মতো।  

থাকা খাওয়া
থাকার জন্য সবচেয়ে নিরাপদ স্থান সন্দ্বীপ উপজেলা সদর। এখানে আপনি পাবেন বিলাসবহুল  হোটেল রয়েল ইন ও জামান গেস্ট হাউজ। এছাড়া দলে যদি বেশী লোক থাকে তাহলে তাঁবু গেঁড়ে থাকা যাবে দ্বীপের যে কোনো স্থানে।

উপজেলা সদরে রয়েছে বেশ কয়েকটি হোটেল। এসব হোটেলেই খেতে পারবেন তাজা মাছ, শুটকি ও সাদা ভাত। শিবের হাট এলাকায় গেলে পাবেন প্রায় ৮০ বছরের ঐতিহ্য বিনয় সাহার ছানা মিষ্টি।

বাংলাদেশ সময়: ১১১৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৮, ২০১৭
এসএইচডি/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।