ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

ট্রাভেলার্স নোটবুক

সান্দাকফু ট্রেক (শেষ পর্ব)

হিমালয়ের কাছে ঋণী হয়ে গেলাম

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৪২ ঘণ্টা, জুন ৬, ২০১৭
হিমালয়ের কাছে ঋণী হয়ে গেলাম সান্দাকফু ট্রেক/ছবি: বাংলানিউজ

আজকে সকালেও যথারীতি কাঞ্চনজঙ্ঘা সপরিষদে দর্শন আরও কাছ থেকে। তবে সান্দাকফু থেকে সম্ভবত পুরো কাঞ্চনজঙ্গা রেঞ্জের ভিউ ভালো দেখা যায়। যদিও ফালুটের ভিউ পয়েন্ট থেকে এ পর্বতের স্বতন্ত্র চূড়াগুলোর অবস্থান ভালো বোঝা যায়। আমাদের লজ থেকে ভিউ পয়েন্ট অনেকটা উচুঁতে। ফলে সকাল সকাল ভালোই কসরত হলো। আজকে আমাদের ট্রেকের শেষ দিনও বটে।

ফালুট থেকে নেমে যাওয়ার বেশ কয়েকটি রাস্তা আছে। সবচেয়ে জনপ্রিয় বোধহয় গোর্খা হয়ে শ্রীখোলা যাওয়া।

তবে সব বিবেচনা করে আমরা সাবারকুম, মলে হয়ে শ্রীখোলা নেমে যাওয়া স্থির করলাম। গতকালের মতোই রৌদ্রজ্জ্বল সকাল। ব্যাক প্যাক গুছিয়ে বাইরে আসতে শুনলাম নাফিজা আপা এবং মোস্থাফিজ ভাইয়ের পোর্টার রজিতের রাতে নাক থেকে রক্তক্ষরণ হয়েছে। এই উচ্চতা হিমালয়ের নিরিখে খুব বেশি না হলেও অসতর্ক হলে যে কেউই অসুস্থ হতে পারে। নতুন পোর্টার ঠিক করে গতকাল যে পথে এসেছি সে পথেই ফিরে গেলাম। বিদায় নিলো গত চার দিন ট্রেকে আমাদের সঙ্গী চেক রিপাবলিকের মাইকেল এবং লিঙ্কা।

ফালুট থেকে সাবারকুম পর্যন্ত বেশিরভাগ রাস্তা চড়াই। শরীর মনের সঙ্গে যুদ্ধ করে সাবারকুমে পৌঁছার পর বেশ একটু বিশ্রাম হয়ে গেলো। কারণ দলের একটি অংশ অনেক পেছনে তখনও। বিশ্রাম খাওয়া-দাওয়া শেষে এবার আমরা শ্রীখোলার পথে। বাকি পনেরো কিলোমিটার রাস্তা শুধু আমাদের নামতে হবে। একটুও চড়াই নেই। ব্যাপারটি প্রাথমিক স্বস্তি দিলেও পাহাড়ে নামাটা একেবারে সোজা কাজ নয়। মূলত পর্বতারোহনে বেশিরভাগ দুর্ঘটনা ঘটে নামার সময়। মাঝখানে মলে এসএসবি ক্যাম্পে শেষ বারের মতো পাসপোর্ট এন্ট্রি। তারপর যে যার মতো নামতে লাগলাম। যতই নামছি বড় গাছের সংখ্যা ততই বাড়ছে। আমাদের নতুন দুই নেপালি পোর্টারের সাথে পাল্লা দিতে এই খাড়া উৎরাই পথে দৌঁড়াতে শুরু করলাম। হাঁটুতে প্রচণ্ড চাপ পড়ছে। মাংশপেশীতে খিল ধরার উপক্রম। এক ঘণ্টার মধ্যে প্রায় অর্ধেক নেমে এলাম। নীচে দেখা যাচ্ছিলো গুর্দুম গ্রাম। পাহাড়ের খাঁজে খাঁজে চাষের জমি, বাসস্থান নিয়ে অনিন্দ্যসুন্দর গ্রাম গুর্দুম। অনেকে এখানেও থাকে। তার অনেক নীচে বয়ে গেছে এক পাহাড়ি নদী যার ধারেই শ্রীখোলা।
সান্দাকফু ট্রেক/ছবি: বাংলানিউজ
এক সময় শ্রীখোলার উপরের অংশ নজরে এলো। পায়ের অবস্থা হাড়ে হাড়ে টের পাওয়া যাচ্ছে ডাউন হিল নামার মজা। কিন্তু আমাদের তো নামতেই হবে। এক সময় আপার শ্রীখোলায় পৌঁছে গেলাম। খোঁড়াতে খোঁড়াতে চলেছি, পেছনে লেজ নাড়তে নাড়তে তিন চারটি লোমশ পাহাড়ি কুকুর। ট্রেক শেষের চিরাচরিত চিত্রনাট্য ভালোই জমলো। শ্রীখোলায় প্রচুর হোটেল এবং হোম স্টে আছে। আমাদের হোম স্টে অবধি যেতে যেতে শেষ পর্যন্ত সন্ধ্যে হলো। অবশ্য মাঝখানে নাটক হলো বেশ। যাক সে কথা। রাতের অসাধারণ চিকেন খিচুরি আর সকালের নাস্তার কথা বলতেই হবে। সাথে উপরি পাওনা শ্রীখোলার অসাধারণ সৌন্দর্য। নিরিবিলি দুটো দিন কাটানোর জন্য এর চেয়ে ভালো জায়গা আর কী হয়?

বিকেলের মধ্যে রিম্বিক, মানেভঞ্জন, সুকিয়াপোকরি, মিরিক হয়ে আমরা চলে এলাম শিলিগুড়ি। মোট ছয় দিনের এ ট্রেকে আমাদের খরচ সাড়ে বারো থেকে তের হাজার রুপির মতো। ইচ্ছে করলে এ খরচ আরও কমানো যায়। অবশ্য এর চেয়েও বেশি পকেট খসলেও কোনো আফসোস থাকতো না। যে অভিজ্ঞতা ঝুলিতে ঢুকিয়ে দিলো হিমালয় তাই সঞ্চয় আগামীর পথ চলায়। কাঞ্চনজঙ্ঘা নিজেকে উন্মোচন করে যে অনুপ্রেরণার ঢেউ তুলে দিলো এ নবিশের মনে কে জানে হয় তার বদৌলতেই এক দিন হতে পারি হিমালয়ের স্বার্থক অভিযাত্রী। হিমালয়ের কাছে অনেক ঋণ রেখে এলাম। শোধ করতে আবার যেতে হবে, বারংবার বারংবার।

** সিঙ্গালিলা পার্ক ছেড়ে অবশেষে ফালুটে
**পশ্চিমবঙ্গের সর্বোচ্চ শৃঙ্গের চূড়ায়
**পাহাড়ি নেপালি গ্রাম কালাপোকরিতে

** ১০ হাজার ফুট উচ্চতায় খিচুড়ি-ডিমে ভোজ
** যে শহর অর্ধেক নেপাল, অর্ধেক ভারতের
** পিচঢালা রাস্তার ওপারেই নেপাল
** ভালোয় ভালোয় পার বাংলাবান্ধা সীমান্ত


বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৫ ঘণ্টা, জুন ০৬, ২০১৭
এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।