ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

ট্রাভেলার্স নোটবুক

সান্দাকফু ট্রেক-৫

পাহাড়ি নেপালি গ্রাম কালাপোকরিতে

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৪২ ঘণ্টা, মে ২৮, ২০১৭
পাহাড়ি নেপালি গ্রাম কালাপোকরিতে পাহাড়ি নেপালি গ্রাম কালোপোকরিতে- ছবি: বাংলানিউজ

ভোর পাঁচটা বাজারও আগে জুয়েল ভাইয়ের ডাক শুনে ঘুম ভাঙলো। যত উত্তেজনা নিয়ে এই মহা ঠান্ডায় ঘর থেকে বের হলাম ততোটাই গেলাম দমে। কাঞ্চনজঙ্ঘা শ্রেণীর আবছা অববয় দেখা যাচ্ছে। মন ভরলো না একেবারে। অবশ্য নিচের জমাট মেঘের সমুদ্র সান্ত্বনা হিসেবে পেলাম। সকালের জল বিয়োগ সেরে এদিক-ওদিক ঘুরে ফিরে আবার বিছানায়।

এর মধ্যে সকালের রোদ ঝলসে উঠলো। মাথার উপরে পরিষ্কার আকাশ।

অনেক দূরে পাহাড়ের গায়ে কালাপোকরির উপস্থিতি চিনিয়ে দিলো গাইড ডম্বর। তারও অনেক উপরে কাঙ্ক্ষিত সান্দাকফুর বাড়িঘরের খুবই ঝাপসা উপস্থিতি টের পাওয়া গেলো। আমাদের বের হতে হতে দশটার উপরে বেজে গেলো। কিছুটা হাঁটলেই পার্কের চেকপোস্ট। সেখানে টিকিট দেখাতে হবে। এখান থেকে আমাদের গন্তব্য গাইরিবাস।

অবশ্য যাওয়ার দু’টি পথ আছে। আমরা নেপালি গ্রাম জোও বাড়ি হয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। অনেকটা দূরে গ্রামটি দেখা যাচ্ছিলো। কিন্তু পাহাড়ের নিয়ম মেনে যতো হাঁটতে লাগলাম গ্রামটি যেন তত দূরে সরে যাচ্ছে। এই প্রথম চোখে পড়লো উড়ন্ত ঈগল। তুলোর মতো মেঘ উড়ে বেড়াচ্ছে পথের পাশের গভীর শূন্যতায়। অনেক দূরে পাহাড়ের খাঁজে খাঁজে মানুষের বসতি। এখানে বড় গাছের উপস্থিতি নেই। আমরা আসলে যে উচ্চতায় আছি তার আরও প্রায় সাত আটশো মিটার উপর থেকে ট্রি লাইনের শেষ হয়। কিন্তু এই উচ্চতাতেই মোটামুটি বড় গাছ আর দেখছি না তেমন।
পাহাড়ি নেপালি গ্রাম কালোপোকরিতে- ছবি: বাংলানিউজ
এক সময় জোও বাড়ি এসে উপস্থিত হলাম। গ্রামের পারিপার্শ্বিকতা দেখেই বোঝা যায় এটি নেপালি গ্রাম। লোকজন নেপালি টুপি পরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কয়েকজনকে দেখলাম ঘোড়ার পায়ে ক্ষুর লাগাচ্ছে। আর বেশিরভাগ লজের নামই হয় এভারেস্ট নয়তো কাঞ্চনজঙ্ঘা। এখানে বেশিক্ষণ বসা হলো না। এবার পুরো রাস্তাটিই ডাউনহিল। নামছি তো নামছিই। একটুও ওঠা নেই। অনেকের ধারণা নামা ওঠার তুলনায় অনেক সহজ। আমার কাছে ডাউনহিলকেই বেশি বিরক্তিকর লাগে। হাঁটুর উপর চাপ পড়ে।

মেঘ আবার চেপে ধরেছে। বেড়েছে হাওয়ার বেগও। ঠান্ডাও এসে হাজির হয়েছে। অল্প সময়ের মধ্যে আমরা গাইরিবাসে এসে উপস্থিত হলাম। এখানেও এসএসবি অফিসে পাসপোর্ট এন্ট্রি করা হলো। গরম গরম মোমো আর কফি তো খেলাম কিন্তু এখন যে দুই কিলো মতোন ভীষণ এক চড়াই পার হতে হবে। এক একটি বাঁক ধরে ধরে উঠছি তো উঠছিই।
পাহাড়ি নেপালি গ্রাম কালোপোকরিতে- ছবি: বাংলানিউজ
মন ভুলিয়ে দেওয়া বাহারি রঙের রডোডেনড্রনও তার কিছু ভোলাতে পারছে না। সাথীরা অনেক পেছনে পড়ে গেলো। স্থানীয়দের অনেককে দেখলাম কিছুদূর উঠে আবার জিরিয়ে নিচ্ছে। এ যেন অনন্ত এক যাত্রা। এক সময় সম্পূর্ণ একা হয়ে গেলাম। আমি শুধু জানি পথটুকু পেরুতে হবে। কি আশ্চর্য, এক সময় পারও হয়ে গেলাম। জায়গাটুকু পার হলেই কায়াকেটরি। কয়েক ঘরে বসতি আর খাবার হোটেলও আছে এখানে।

গায়রিবাস থেকে ঠিক হয়ে ছিলো এখানে আমরা দুপুরের খাবার খাবো। আমাদের আগেই গাইড ডম্বর এসে অপেক্ষা করে আছে। কিন্তু ভয়ঙ্কর চড়াইটুকু পার হয়ে এসে এমন আত্মবিশ্বাস ভর করেছে যখন জানলাম বাকিটুকু রাস্তা প্রায় সমতল, তখন না খেয়েই কালাপোকরির দিকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম।
পাহাড়ি নেপালি গ্রাম কালোপোকরিতে- ছবি: বাংলানিউজ
এই রাস্তাটুকু মনভোলানো সুন্দর। চারপাশেই রডোডেনড্রনের বাহার। এর মধ্যে পথে পরিচয় হলো কলকাতা থেকে আসা প্রিয়ব্রত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে। কথায় কথায় আলাপ জমে উঠলো। রাজনীতি, অর্থনীতি থেকে হিমালয়, আলাপ যখন তুঙ্গে তখন দাদাই জানালেন আমরা কালাপোকরি চলে এসেছি। অবাক হয়ে দেখলাম সামনে ভাবনার চেয়ে ছোট একটা পুকুর। জল কুচকুচে কালো, তাই নাম কালাপোকরি। একে ঘিরে কিংবদন্তি রয়েছে। শীতে যখন বরফে ঢেকে যায় চারপাশ তখনও নাকি কালাপোকরির জল বরফ হয় না। এখানে পয়সা ফেলে কিছু চাইলে নাকি সে ইচ্ছেও পূরণ হয়। নেপালি গ্রাম কালাপোকরির কাঞ্চনজঙ্ঘা লজে আমাদের থাকার ব্যবস্থা। রাতে ইয়াকের মাংস দিয়ে ভূরিভোজের গল্প আগামী পর্বে।    

বাংলাদেশ সময়: ০৬৪৩ ঘণ্টা, মে ২৮, ২০১৭
এএ

**
১০ হাজার ফুট উচ্চতায় খিচুড়ি-ডিমে ভোজ
** যে শহর অর্ধেক নেপাল, অর্ধেক ভারতের
** পিচঢালা রাস্তার ওপারেই নেপাল
** ভালোয় ভালোয় পার বাংলাবান্ধা সীমান্ত

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।