ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

ট্রাভেলার্স নোটবুক

আদি-আধুনিক কালের টানে কলকাতার ‘সায়েন্স সিটি’

আয়শা আক্তার তৃষ্ণা, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২৫৬ ঘণ্টা, মে ১০, ২০১৭
আদি-আধুনিক কালের টানে কলকাতার ‘সায়েন্স সিটি’ আদি-আধুনিক কালের টানে কলকাতার ‘সায়েন্স সিটি’-ছবি: আয়শা আক্তার তৃষ্ণা

কলকাতা থেকে ফিরে: এইতো সেদিন বাংলানিউজের একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে নারী সহকর্মীদের পাঁচদিনের জন্য কলকাতায় যেতে হবে। সব ধরনের প্রস্ততি দ্রুত শেষ হলো। এরপর এলো রওয়ানা দেওয়ার পালা। যেতে হবে বৃহত্তম বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে। আমি তো ভীষণ খুশি! প্রথমবার কলকাতা ভ্রমণ, সেইসঙ্গে ভ্রমণসঙ্গী হিসেবে সব নারী সহকর্মীরা— ভেবেই দারুণ লাগছিল।

যাত্রাদিবস এসে পড়ে। গত ২০ মার্চ রাতে সবাই হাজির হই রাজধানীর কলাবাগান বাসস্ট্যান্ডে।

ঢাকা-কলকাতা শ্যামলী-বিআরটিসি পরিবহন এসে হাজির হয় রাত ১১টা ৫৩ মিনিটে। শুরু হলো বেনাপোলের উদ্দেশে যাত্রা।

ঢাকা ছাড়তেই কানে হেডফোন গুঁজে ভারতীয় শিল্পী ঊষা উত্থুপের গাওয়া ‘কলকাতা কলকাতা ডোন্ট ওরি কলকাতা আমরা তোমারই কলকাতা...’ গানটি শুনতে শুনতে ২১ মার্চ সকাল সাড়ে ৭টার দিকে পৌঁছে গেলাম বেনাপোল বন্দরে। ইমিগ্রেশনের আনুষ্ঠানিকতা সেরে কলকাতার উদ্দেশে আবার বাস যাত্রা। আদি-আধুনিক কালের টানে কলকাতার ‘সায়েন্স সিটি’বিকেলে পৌঁছে গেলাম কলকাতার মৌলালি যুবকেন্দ্রে। শিয়ালদহ স্টেশনের ঠিক পাশেই। সেখানেই থাকার ব্যবস্থা। রাতে সবাই ভারতীয় সিম কিনতে বেরুলাম। সেখানেই  আলোচনা হলো, কোথায় কোথায় যাওয়া যায়। আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছিলাম, 'সায়েন্স সিটি' ও  কফি হাউজে যাবোই যাবো!

গুগল ঘেঁটে জানা গেলো, পূর্ব কলকাতার ইস্টার্ন মেট্রোপলিটান বাইপাস ও জে বি এস হ্যালডেন অ্যাভেনিউর সংযোগস্থলে ৫০ একর জমির উপর সায়েন্স সিটি।

সক্কাল সক্কাল বাস ধরে সোজা কাঙ্ক্ষিত গন্তব্য। ঢুকেই ৮৫ রুপি টিকেট কেটে ক্যাবল কারে চড়ে বসলাম। রেলপথে আসা মালতির সঙ্গে দেখা হলো। তিনি বাংলাদেশের চট্টগ্রাম থেকে বেড়াতে এসেছেন কলকাতায়। বুঝলাম, সায়েন্স সিটির প্রতি প্রেম কেবল আমার একার নয়!আদি-আধুনিক কালের টানে কলকাতার ‘সায়েন্স সিটি’ক্যাবলকারে চেপে পুরো সায়েন্স সিটি দেখে মন ভরে গেলো। এরপর তিন হাজার বছর আগের আদি মানুষের বিবর্তনের থিয়েটার শো দেখতে টিকিট কাটলাম ৪০ রুপি দিয়ে।

শো শুরু হলো অন্ধকার আর ডায়নোসরে চিৎকারে, মনের মধ্যে কেমন জানি ভয় কাজ করছিল। একপাশ থেকে একটি ডায়নোসর চিৎকার দিয়ে মাথা বের করে আসে, অন্যপাশ দিয়ে বিশাল ভাল্লুকের চিৎকারে লোম একদম খাড়া হয়ে গেলো। বের হওয়ার উপায় নেই। পেছনে তাকিয়ে দেখি আমার মতো অন্যরাও ভয় পাচ্ছেন। শক্ত হয়ে বসে থাকলাম।

পরে মিউজিয়ামের ঘুরে দেখলাম- পুরনো দিনের চিকিৎসা শাস্ত্র, চিকিৎসা উপকরণ, নানা ধরনের বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি, রোবটসহ আরও কতো কিছু। আরও রয়েছে দোলনা, স্লাইড, ট্রেন রাইড, মিউজিক্যাল ফোয়ারা এবং অন্যান্য বহু বিনোদনমূলক সুবিধা।

কলকাতায় সায়েন্স সিটি পরিবার ও শিশুদের কথা মাথায় রেখেই নির্মিত হয়েছে। বাইরে থেকে খাবার নেওয়া যায়, রয়েছে গাড়ি পার্কিংয়ের বন্দোবস্ত।

শিশুদের জন্য চমৎকার একটি জায়গা। রয়েছে খেলার জায়গা, পানির ফোয়ারা, বিভিন্ন রাইড। সবুজ বাহারি গাছ ও বিভিন্ন ধরনের ফুলে সাজানো সায়েন্স সিটি হাঁটার জন্যও খুব ভালো জায়গা। পুরো পরিবেশটিই ভীষণ মনকাড়া। কলকাতায় বেড়াতে গেলে সায়েন্স সিটি ঘুরে আসা যায় চোখ বুজে। আদিকাল থেকে আধুনিক কালের মেলবন্ধন যেনো ঘটেছে এখানে।

কলকাতার যেকোনো পয়েন্ট থেকে বাসে চেপে দিব্যি যাওয়া যায় সায়েন্স সিটি। ভাড়া জনপ্রতি ১০/১৫ রুপির বেশি নয়। যে কাউকে জিজ্ঞেস করলেই বাস দেখিয়ে দেবে। আদি-আধুনিক কালের টানে কলকাতার ‘সায়েন্স সিটি’সেখানে এতো কিছু রয়েছে দেখার মতো যে, আপনার একটুও ক্লান্ত লাগবে না। চাইলে আপনি বটবৃক্ষের ছায়ায় সকাল ৯টা থেকে রাত অব্দি সময় কাটাতে পারেন অনায়েসে। সবমিলিয়ে আমার কাছে অপূর্ব লেগেছে সায়েন্স সিটি।

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।