ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

ট্রাভেলার্স নোটবুক

অবশেষে দেশ থেকে বিদেশে

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৪৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ১, ২০১৭
অবশেষে দেশ থেকে বিদেশে কলকাতা শহর-ছবি-রুম্পা রায়

কলকাতা থেকে ফিরে: ইচ্ছে ছিল কিন্তু কখনো ভাবিনি দেশের বাইরে যাওয়া হবে। ২০০৪ ও ২০০৫ সালে ইউকে ভিসার জন্য আবেদন করেছিলাম কিন্তু পাইনি। এরপর থেকে দেশের বাইরে যাওয়ার আশা আর করিনি। তাই সুযোগ থাকা সত্ত্বেও কোথাও যাওয়া হয়ে ওঠেনি।

হঠাৎ করেই চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি অফিস থেকে বলা হলো একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য আমাদের (নারী সহকর্মীদের) কলকাতায় নিয়ে যাওয়া হবে। তখনও জানতাম না ৮ মার্চ নারী দিবসে এটা এডিটর ইন চিফের চমকপ্রদ এক গিফট।

মনে মনে অনেক খুশি হলাম। কিন্তু পাসপোর্ট, ন্যাশনাল আইডি কার্ড ও জন্ম নিবন্ধন কোনোটাই ছিল না আমার।

যাহোক একে একে সবকিছুই হলো। যাওয়ার দিনও ঠিক হলো সোমবার (২০ মার্চ) রাত পৌনে ১১টায় বাস।

ধীরে ধীরে এলো সেই দিন। কলকাতা যাওয়ার আগের রাতে নাইট ডিউটি ছিল। যথারীতি নাইট করে বাসায় গিয়ে এক ঘণ্টা ঘুমিয়ে শুরু করলাম ব্যাগ গোছানো।

২০ মার্চ রাত সোয়া ৮টায় বাসা থেকে বের হয়ে অফিসে এলাম। তারপর সবাই মিলে কলাবাগান বাসস্ট্যান্ড। জানলাম গাড়ি আসতে দেরি হবে। কি আর করা শুরু হলো অপেক্ষা।

যাত্রা শুরু-ছবি-রুম্পা রায়রাত ১১টা ৫৩ মিনিট। শ্যামলী বিআরটিসি পরিবহনে উঠে বসলাম। গাড়ি চলতে শুরু করলো বেনাপোলের উদ্দেশে। মনের ভেতরে এক অজানা আশা এবং ভয়। দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে মঙ্গলবার (২১ মার্চ) সকাল সাড়ে ৭টার দিকে পৌঁছালাম বেনাপোল বন্দরে। বুঝতেই পারিনি কী রাজকীয় আতিথেয়তা অপেক্ষা করছিল আমাদের জন্য। বাংলানিউজের বেনাপোলের স্টাফ করেসপন্ডেন্ট আজিজ‍ুল হক ভাই আমাদের যথেষ্ট আপ্যায়ন করলেন।

আমাদের সঙ্গে খুলনার ব্যুরো চিফ মাহাবুবুর রহমান মুন্না, যশোরের স্টাফ করেসপন্ডেন্ট উত্তম ঘোষও ছিলেন।

বেনাপোল স্থলবন্দরের এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেন মজুমদারের সঙ্গে আলাপ হলো। নাস্তা সেরে ইমিগ্রেশন শেষ করে আবার বাসে চড়ে বসলাম। অবশেষে বিকেল ৫টার দিকে কলকাতার মৌলালি যুবকেন্দ্রে পৌঁছালাম। রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়েই বেরিয়ে পড়লাম মোবাইল ফোনের সিম ও বাংলাদেশের টাকা রুপি করতে। এরপর  রাত ১০টার দিকে ফিরে এলাম।

ক্যাবলকার-ছবি-রুম্পা রায়বুধবার (২২ মার্চ) সকালে সবাই গেলাম সায়েন্স সিটি দেখতে। ৮৫ রুপি দিয়ে টিকিট কেটে ক্যাবলকারে চড়ে ভেতরে ঢুকলাম। ক্যাবলকার যতো উপরে উঠতে থাকলো ততই ভালো লাগতে শুরু করলো। উপর থেকে উপভোগ করলাম সায়েন্স সিটির সৌন্দর্য। উত্তম দাদা তো ভয়ে চোখ বন্ধ করে রাখলেন। তিনি ছাড়া আরো কয়েকজনের একই অবস্থা।

সায়েন্স সিটির জাদুঘর-ছবি-রুম্পা রায়সেখানে ৪০ রুপি দিয়ে টিকিট কেটে ট্রেনে চড়ে ডাইনোসরের গুহায় গেলাম বিবর্তন দেখতে! এরপর মিউজিয়াম দেখে আমরা একদল চলে গেলাম নিউমার্কেটে শপিং করার জন্য। আর একদল গেলো ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালসহ কয়েকটি স্থান ঘুরতে। কিছু শপিং করে রাতে ফিরে এলাম যুবকেন্দ্রে।

কলকাতায় নতুন এবং বহুতল ভবন খুব একটা চোখে পড়ে না। তবে এখানে ঢাকার মতো অসহনীয় যানজট নেই। রিকশা এবং প্রাইভেটকার তেমন একটা চোখে পড়ে না। রয়েছে সব জায়গায় যাওয়ার জন্য বাস, ট্রাম, ট্যাক্সি এবং মেট্রো সার্ভিস। এখানকার মানুষ অনেক ভালো। যেহেতু এখানকার মানুষ বাস, ট্রাম এবং হেঁটেই বেশি যাতায়াত করে, তাই কারো কাছে যদি জানতে চাওয়া হয় ‘দাদা ওই জায়গাটা কোথায়। তারা বলেন, সামনে দিদি। কিন্তু ওই সামনেটাই হয়ে যায় প্রায় এক-দেড় কিলোমিটার!’

বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় এডিটর স্যারের সঙ্গে দেখা করার জন্য কলকাতার সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ভাস্কর দাদার সঙ্গে গেলাম কাশ্মিরী শালের দোকান ‘পামপোশ’এ। সেখানে জানতে পারলাম বাংলানিউজের স্টাফরা যে যা (শাল, থ্রি-পিস এবং টু-পিস) কিনবেন তার উপর ৫০% ডিসকাউন্ট থাকবে। তবে সেদিন এডিটর স্যারের সম্মানে মালিক শেহজাদ ডিসকাউন্ট দিলেন ৫৪%। জেনে রাখা ভালো বাংলানিউজের স্টাফদের জন্য সবসময় পামপোশে ৫০% ডিসকাউন্ট থাকবে। বাংলানিউজের পাঠকদের জন্যও ৯২ বছরের পুরনো এই দোকানে থাকে বিশেষ ছাড়।  

স্যার চলে যাওয়ার পর আমরা যে যার মতো শপিং করতে চলে গেলাম। শাড়ি, থ্রি পিস, স্যান্ডেল, কসমেটিকসসহ বেশ কিছু কেনাকাটা করলাম। একপর্যায়ে হঠাৎ দেখা হলো ঢাকার নাট্য অভিনেত্রী দীপা খন্দকারের সঙ্গে। তিনিও আমাদের মতো শপিং করছেন। কলতাকায় জিনিসপত্রের দাম তুলনামূলক কম থাকায় শপিং করে অনেক মজা। শপিং সেরে আবার গন্তব্যে ফিরে এলাম।

হাওড়া ব্রিজ-ছবি-রুম্পা রায়যেহেতু তেমন কোথাও ঘোরা হয়নি তাই শুক্রবার (২৪ মার্চ) সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে আমি সহকর্মী বৃষ্টি, রুম্পা,লামিয়া ও মারিয়া চলে গেলাম হাওড়া ব্রিজ ও গঙ্গার তীর দেখতে। সেখান থেকে আবার বাকি কেনোকাটার জন্য নিউমার্কেট।
 
পরে সন্ধ্যায় যে অনুষ্ঠানের জন্য আমাদের কলকাতা আসা সেখানে যোগ দিতে রবীন্দ্র সদনে গেলাম। সেখানে একাডেমি অব ফাইন আর্টসে কলকাতার সাংবাদিক, স্কুল শিক্ষক, কবি, শর্টফিল্ম মেকার ও ফটোগ্রাফারদের সঙ্গে ঘরোয়া আড্ডা হলো বাংলানিউজ পরিবারের সঙ্গে।

বাংলানিউজের ঘরোয়া বৈঠক-ছবি-সোহেল সারওয়ারআবারো এ ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে বলে জানালেন এডিটর স্যার। খুব সুন্দর একটি ঘরোয়‍া অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শেষ হলো আমাদের আয়োজন।

শনিবার (২৫ মার্চ) সকাল ৬টায় আমরা শ্যামলী বিআরটিসি পরিবহনে করে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হলাম।

বাংলাদেশ সময়: ০৭৪১ ঘণ্টা, এপ্রিল ০১, ২০১৭
আরআর/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।