ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

ট্রাভেলার্স নোটবুক

সূর্যের আলো বঞ্চিত অন্নপূর্ণা এ কোন মোহনীয় রূপে!

মানসুরা চামেলী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৩৫ ঘণ্টা, মার্চ ১৪, ২০১৭
সূর্যের আলো বঞ্চিত অন্নপূর্ণা এ কোন মোহনীয় রূপে! সূর্যের আলো বঞ্চিত অন্নপূর্ণা এ কোন মোহনীয় রূপে! ছবি: সুলতানা জাহান

নেপাল ঘুরে: ভোর সাড়ে ৫টা। নেপালের পোখারা সারাংকোট চূড়া। পুরো অ‍াকাশ ছেয়ে রয়েছে কালো-সাদা মেঘ। তীব্র শীত, বৃষ্টি নেই। তবে আগের দিনের বর্ষণের ছাপ স্পষ্ট। পাহাড়ি সড়ক বেয়ে প্রায় দুই হাজার ফুট উঁচু সারাংকেট চূড়া। এ পথ বেয়ে ওঠার উদ্দেশ্য হিমালয়ের বুক চিরে সূর্যাদয় দেখা। আর ভোরের সূর্যের অালোয় হিমালয়ের অন্নপূর্ণা, ফিশটেইল ও ধবলগিরি শৃঙ্গের জ্বলে উঠা দেখা। 

সারাংকোট পাহাড়ের চূড়া থেকে ভোরের সূর্যাদয় দেখার সবচেয়ে ভালো স্থান। তবে সূর্য উদয়ের কাঙ্ক্ষিত ক্ষণ নিয়ে যে আশঙ্কা ছিলো সেটাই হলো।

মেঘের আড়ালেই সূর্য। এর মধ্যেই প্রশান্তি, আস্তে আস্তে মেঘের আবরণ সরিয়ে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠা সুন্দরতম অন্নপূর্ণা চূড়া, ফিশটেইল ও ধবলগিরি পর্বত শৃঙ্গ। বরফে ঢাকা পর্বতগুলো কখনও মেঘের ফাঁকে উঁকি দিয়ে, কখনওবা কিছু অংশসহ একেক রূপে হাজির চোখের সমানে। প্রায় দু’হাজার ফুট ওপরের একেকটি ভিউ পয়েন্ট বেছে নিয়ে অস্পষ্ট-স্পষ্ট অন্নপূর্ণা, ফিশটেইলের সৌন্দর্য উপভোগ! ছবি: সোহেল সারওয়ারসূর্যের অালো বঞ্চিত অন্নপূর্ণার এ যেন আরেক মায়া! হিমালয় যেন বিস্ময়! ভোরের আলোয় হিমালয়ের চূড়া স্বর্ণের খনি। তবে ভোরের আলোয় অন্নপূর্ণা পবর্তের সোনার বরণ রূপ দেখতে প্রয়োজন সূর্য দেবতার স্বয়ং কৃপা।  

আপাতত, সূর্যের কৃপা বঞ্চিত হয়ে সারাংকোটের পাহাড় থেকে বহু দূরের পর্বত বরফ ও মেঘে ঢাকা শৃঙ্গ দেখেই চোখ জুড়িয়ে গেল।

পোখারা লেক সাইটের একটি হোটেল থেকে পাহাড়ি পথ বেয়ে ২৫ মিনিটে সারাংকোট। এখানে সূর্যাদয় ও হিমালয়ের অন্নপূর্ণার রূপ দেখতে পাহাড়ের চূড়ায় বেশ কয়েকটি ভবনের ওপর ভিউ পয়েন্ট। কোন ভিউ পয়েন্টে গেলে দেখ‍া পাব সেই মাহেন্দ্র ক্ষণ, এর জন্য পাহাড় ডিঙিয়ে একের পর এক ভিউ পয়েন্ট পার হচ্ছে পযর্টকরা। সবারই হয়ত একই ধারণা, আরেকটু উপরে গেলে ভালো দেখা যাবে হয়তো! দর্শনার্থীরাও কেউ হাত ছড়িয়ে, কেউবা আঙ্গুল নির্দেশ করে, ভি চিহ্ন দেখিয়ে ধারণ করছেন মুহূর্তটাকে।  ছবি: সোহেল সারওয়ারতবে যত উঁচু পাহাড় অতিক্রম হচ্ছে ততই অন্নপূর্ণার চূড়া, ফিশটেইল ফিকে হয়ে আসছে। ওদিকে মেঘ সরিয়ে সূর্য উঁকি দেওয়ার আশা জাগালেও পরক্ষণে মেঘের আড়ালে লুকিয়ে পড়ে। প্রায় দু’হাজার ফুট ওপরের একেকটি ভিউ পয়েন্ট বেছে নিয়ে অস্পষ্ট-স্পষ্ট অন্নপূর্ণা, ফিশটেইলের সৌন্দর্য উপভোগ। মেঘলা আকাশে উড়ে যাওয়া একঝাঁক নাম না জানা পাখির উড়াউড়ি। এই দৃশ্যগুলো সহকর্মীর স্মার্টফোনে পালা করে একের পর এক ক্যামেরাবন্দি হতে থাকলো।

বেড়াতে আসা দর্শনার্থীরাও কেউ হাত ছড়িয়ে, কেউবা আঙ্গুল নির্দেশ করে, ভি চিহ্ন দেখিয়ে ধারণ করছেন মুহূর্তটাকে। আবার যা দেখছেন সেটুকু ধারণ করছেন ভিডিও ক্যামেরায়।  সময় যখন শেষ, তখন সূর্যের এমন হাসি চূড়ান্ত মশকরাই মনে হচ্ছিল।  ছবি: সুলতানা জাহানভোরের অাবেশ কাটিয়ে বৃষ্টিস্নাত সকাল। সময়ের ব্যবধানে মেঘের ফাঁকে সূর্যের মৃদু অালো বিচ্ছুরণ। অালোর অাস্তরণ অন্নপূর্ণার চূড়া ও ফিশটেইলের ওপর পড়ে। সাদা বরফ ঢাকা এই শৃঙ্গগুলো চিক চিক করে স্বর্গীয় রূপ ধারণ করে। সকালের মৃদু অালোয় অন্নপূর্ণা চূড়ার এই রূপ; ঘুছে দেয় যেন সূর্যাদয় না পাওয়ার অাক্ষেপ।  

সকাল ৯টায় মেঘ সরিয়ে পুরো ঝলমল করে ওঠে সারাংকোটের পুরো আকাশ। ততক্ষণে সময় শেষ, স্বর্ণ বরণ অন্নপূর্ণা চূড়ার মাহেন্দ্রক্ষণ দেখার। তাই তো, সূর্যের এমন হাসি চূড়ান্ত মশকরাই মনে হলো হচ্ছিল তখন।  

বাংলাদেশ সময়: ০৬২৫ ঘণ্টা, মার্চ ১৪, ২০১৭
এমসি/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।