ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

ট্রাভেলার্স নোটবুক

বাংলাদেশের পোশাকে বিশ্বকে চমকে দিতে চান কাজী এনায়েত

জাহিদুর রহমান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১১৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৫, ২০১৬
বাংলাদেশের পোশাকে বিশ্বকে চমকে দিতে চান কাজী এনায়েত ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

প্যারিস (ফ্রান্স) থেকে: ভিএফ করপোরেশন, টার্গেট, সিয়ার্স, ক্যারিফোর, জেসি পেনি, গ্যাপ, লিভাইস, টেসকো বা সিলিও'র মতো বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ডের আদলে বাংলাদেশের নিজস্ব ব্র্যান্ডের পোশাক দিয়ে বিশ্বকে চমকে দিতে চান কাজী এনায়েত উল্লাহ ইনু।

পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারকদের সংগঠনের (বিজিএমইএ) সাবেক সভাপতি আতিকুল ইসলামকে সঙ্গে নিয়ে ফ্যাশন রাজধানী ফ্রান্সের প্যারিসে নিয়েছেন অনন্য এক উদ্যোগ।

যে উদ্যোগের লক্ষ্যই হবে বিদেশি ব্র্যান্ডের নামে নয়, নিজস্ব ব্র্যান্ডের মাধ্যমেই পরিচিত করা বাংলাদেশকে।

ইউরোপীয় নিত্য নতুন ফ্যাশনকে ধারণ করে আধুনিক প্রযুক্তি আর পোশাকের নিজস্ব মডেলিং, মার্কেটিং, ব্র্যান্ডিংয়ের সমন্বয়ে বিশ্ববাসীর কাছে অন্য এক বাংলাদেশকে তুলে ধরতে চান তিনি।

কেবল দর্জি হিসেবেই নয়, সুতা থেকে কাপড় তৈরি, সেলাই, মডেলিং, ব্র্যান্ডিং, মার্কেটিং সবকিছুর নেতৃত্বে রাখতে চান বাংলাদেশকে।

প্যারিসের উপকণ্ঠ প্লাস দু ক্লিশি এলাকায় বাংলানিউজের সঙ্গে একান্ত আলাপকালে এ উদ্যোগের কথা জানান ফ্রান্স-বাংলাদেশ ইকনোমিক চেম্বার্সের প্রেসিডেন্ট ও বাংলাদেশের বনানী গ্রুপের চেয়ারম্যান কাজী এনায়েত উল্লাহ ইনু।

প্যারিস প্রবাসী বাংলাদেশি উদ্যোক্তা ও সামাজিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে ইনুর রয়েছে স্বতন্ত্র পরিচয়।

রেস্টুরেন্ট, রিয়েল এস্টেট ও এয়ারলাইন্সের ব্যবসা আছে তার। ইউরোপের ৩০টি দেশে বসবাসরত বাংলাদেশিদের সম্মিলিত সংগঠন অল ইউরোপিয়ান বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশনের (আয়েবা) সেক্রেটারি জেনারেল কাজী এনায়েত। প্রবাসে থাকলেও ভাবেন দেশের কথা। স্বপ্ন দেখেন দেশের মানুষের কল্যাণ ও ভাগ্য উন্নয়নের।

ঢাকার বনানী চেয়ারম্যান বাড়ির ঐতিহ্যবাহী চেয়ারম্যান পরিবারের এ সন্তান ১৯৭৮ সালে পাড়ি জমান ফ্রান্সে। উচ্চ শিক্ষার জন্য এসেছিলেন রাজধানী প্যারিসে। সরবোন বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা সম্পন্ন করেন তিনি। পড়াশোনার ফাঁকেই পাড়াকোলোর নামের একটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানে চাকরি নেন। বেতন ছিলো নামমাত্র। নিজের অর্জিত অর্থ দিয়েই শিক্ষা ব্যয় নির্বাহ করতেন তিনি। পরে শিক্ষা জীবন শেষে একই প্রতিষ্ঠানে অধিষ্টিত হন দায়িত্বশীল পদে। পান মোটা অংকের বেতন।

কঠিন পরিশ্রম, সততা, সমন্বিত জীবনযাপনের মাধ্যমে সঞ্চিত অর্থ দিয়ে শুরু করেন ব্যবসায়িক উদ্যোগ। ১৯৮৬ সালে প্যারিসের আইফেল টাওয়ারের কাছে গড়ে তোলেন রেস্টুরেন্ট। নাম বন‍ানী। তারপর আর পিছে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে।

সেই রেস্টুরেন্ট থেকে রিয়েল এস্টেট কিংবা এয়ারলাইন্স ব্যবসা যেখানেই হাত দিয়েছেন সেখানেই সোনা ফলেছে।

তাহলে এসব রেখে তৈরি পোশাকে শিল্পে জড়িত হচ্ছেন কেন?

দেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির অন্যতম চালিকাশক্তি আমাদের তৈরি পোশাক খাত। তবে আমরা পাই কেবল দর্জির মজু‍রি। সেটাও আহামরি নয়। বিরতিহীন ভাবে কথাগুলো বলে যান কাজী এনায়েত।

তিনি বলেন, এই ফ্রান্সের কথাই ধরেন। পোশাক রপ্তানিতে এখানে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। তবে ক্রেতাদের কাছে পোশাকগুলো কিন্তু পৌঁছে নিজ নিজ ব্র্যান্ডের নামে। বাংলাদেশের নামে না। অথচ কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে সব দায় চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলে আমাদের কাঁধে।

কাজী এনায়েত বলেন, আমার মনে হলো, আমাদের হাত ছুঁয়ে বিশ্বব্যাপী এতো পোশাক যাচ্ছে। অথচ আমাদের কোনো নাম নেই। ক্রেতারা সংশ্লিষ্ট দেশ থেকে পোশাক তৈরির সিদ্ধান্ত নেয়। ধরেন হংকং অফিস থেকে পোশাকের ডিজাইন গেলো, কোরিয়া থেকে গেলো কাপড়। তাদের তদারকিতেই করা হলো ব্র্যান্ডিং বা বিপণন। ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তা করলেই বোঝা যায়, এসব প্রক্রিয়ার কারণে লাভের সিংহভাগ চলে যায় বিদেশি ক্রেতাদের পকেটে।

যারা এসব প্রক্রিয়ায় যুক্ত, আমরা যদি প্রাথমিক পর্যায়ে তাদের সহায়তা নিয়েই যাত্রা শুরু করতে পারি এবং ইউরোপীয় নিত্য নতুন ফ্যাশনকে ধারণ করে আধুনিক প্রযুক্তি আর পোশাকের নিজস্ব মডেল, মার্কেটিং, ব্র্যান্ডিংয়ের সমন্বয়ে পোশাক তৈরি করে বিশ্ববাসীকে চমকে দিতে পারি তবেই নতুন ব্র্যান্ডের পরিচয়ে পরিচিত হবে বাংলাদেশ। একইসঙ্গে এতে যে মুনাফা হবে তার একটি অংশ আমরা পোশাক শ্রমিকদের দিতে পারি। এতে শ্রমিকদের উৎসাহ বাড়বে। বিদেশি ব্র্যান্ডের প্রতিযোগীদের সঙ্গে টেক্কা দিতে পারবে দেশি ব্র্যান্ডের পোশাক। যোগ করেন তিনি।

এসব চিন্তা থেকেই এ খাতের সফল ব্যবসায়ী বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি আতিকুল ইসলামকে পরিকল্পনায় যুক্ত করেন তিনি। সিদ্ধান্ত নেন দু’জন মিলে ফ্যাশন রাজধানী প্যারিসে একটি কোম্পানি খোলার।

বছরে তাদের ব্র্যান্ড নিয়ে চারটি বড় আন্তর্জাতিক মেলায় রাজকীয়ভাবে অংশ নিয়ে পৃথিবীকে দেখিয়ে চান বলে জানান এনায়েত।

ইনু বলেন, আসলে স্বপ্ন দেখাটাই আসল। স্বপ্নই এগিয়ে নেয় একটি জাতিকে। আর সেটা বাস্তবায়নের জন্য এখন থেকেই কাজ শুরু করতে হবে। আমার আরও লক্ষ্য রয়েছে এদেশে ব্যবসায়িক কমিউনিটি তৈরি করা। সেই চেষ্টাটাই করছি জোরেশোরে। সাগর পাড়ি দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কেন ভিনদেশে যেতে হবে। পরিবেশ পরিস্থিতি গড়ে তুলতে পারলে আমাদের ব্র্যান্ডের পোশাকের পরিচয়েই আমাদের তরুণরা এ দেশে আসবে। তৈরি হবে নতুন উদ্যোক্তা শ্রেণী।

পোশাক শিল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে তিনি বলেন, ধরেন কোনো কারণ বা অজুহাতে যদি ক্রেতারা মুখ ফিরিয়ে নেয় তখন আমাদের কি হবে! সেখানে আমরা সব প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত থেকে যদি নতুন ব্র্যান্ড নিয়ে অগ্রসর হতে পারি তাহলে দেশেরই অগ্রগতি হবে। দেশের তরুণ উদ্যোক্তাদের বলতে চাই, পরিবার নিয়ে ভালো থাকতে হলে প্রয়োজন অর্থের। সেটা কেবল আসে ব্যবসা বা চাকরি করে। তবে চাকরিতে রয়েছে নানা সীমাবদ্ধতা। তাই তরুণদের যদি এই খাতে আমরা উদ্যোক্তা সৃষ্টি করতে পারি, তবেই টেকসই হবে আমাদের প্রবৃদ্ধি। তৈরি পোশাককে নিয়ে যেতে পারবো বহুদূর।

সবশেষে তিনি বলেন, কেবল পোশাকশিল্প নিয়েই নয়, সম্ভাবনার আরও অনেক খাত অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য। এখন সময় এসেছে আমাদের তৈরি হওয়ার। নতুন বাংলাদেশ গড়ে তোলার এই তো সময়।

বাংলাদেশ সময়: ১৩১১ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৫, ২০১৬
এএ

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।