ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

ট্রাভেলার্স নোটবুক

ইতালি ভ্রমণ-৩

ভেনিসে দেখা নৌকাবাইচ

মুনশী আরিফ রশীদ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭১৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০১৬
ভেনিসে দেখা নৌকাবাইচ

[পূর্ব প্রকাশের পর]

যাওয়ার পথে পড়লো চায়না ফ্রেন্ডশিপ প্রজেক্টের উদ্যোগে আয়োজিত মর্ডান আর্টের প্রর্দশনী। কিছু সময় কাটালাম সেখানে।

ওখান থেকে বের হয়ে ব্রিজে না দাঁড়িয়ে হাঁটতে থাকলাম রিয়ালতো মার্কেটের দিকে। মার্কেটের পাশে জেটিটা বসার ভালো একটা জায়গা। নৌকাবাইচ ওখান থেকে দেখার আশা নিয়ে বসে পড়লাম একদম পানির পাশে, জেটির ওপর। খেয়াল করে দেখলাম জেটির ভিড়ে পর্যটক থেকে ভেনিটিয়ানেরা বেশি।

একটু পরেই বুঝতে পারলাম কারণটা। এখান থেকে নৌকাবাইচ দেখা যায় একদম কাছ থেকে। আর দৃষ্টিসীমা অনেকদূর পর্যন্ত ব্যাপ্ত হওয়ায় দেখাও যায় অনেকক্ষণ। বেশ ভালোই উপভোগ করলাম ভিনদেশি নৌকাবাইচ। প্রায় সবকিছুই আমাদের দেশের নৌকাবাইচের মতো। তবে সবচেয়ে বড় পার্থক্য প্রতিযোগিতায় পুরুষের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নারীদের অংশগ্রহণ। একটি নৌকাতেতো দেখলাম বাদক থেকে শুরু করে চালক সবাই নারী। বুঝলাম সম অধিকার আসলে আদায় করে নিতে হয় কীভাবে।

নৌকাবাইচ শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও জেটিতে বসেছিলাম অনেকক্ষণ, সন্ধ্যারও পর পর্যন্ত। এর মাঝে আমদের সামনে গন্ডোলা এনে রাখলেন এক বৃদ্ধা ও বৃদ্ধ। বৃদ্ধা নৌকা থেকে নেমে গেলেও বৃদ্ধ নৌকা নিয়ে রয়ে গেলেন। গল্পে গল্পে জানা গেলো বৃদ্ধা ওনার বেটার হাফ, যদিও উনি রসিকতা করে বললেন বিটার হাফ। তবে সবচেয়ে মজার তথ্য উনি সেই পরিবারের সদস্য যারা প্রায় ৪০০ সাল থেকে ভেনিসে বসবাস করছেন।
 
এরমধ্যে পানীয় কিনে বৃদ্ধা ফিরে আসায় উনি বিদায় জানিয়ে নৌকা ছেড়ে দিলেন। আমরাও উঠে পড়লাম জেটি থেকে। কিছুক্ষণ ঘোরাফেরা করে পা বাড়ালাম পিয়াতছালে রোমার দিকে, উদ্দেশ্য হোস্টেলের দিকের বাসে ওঠা।
 
যেহেতু বাজেট ট্রিপ তাই ট্রিপ প্ল্যানের সময় হোটেল না খুঁজে ইয়ুথ হোস্টেল খুঁজেছি। হোস্টেলওয়ার্ল্ড.কম থেকে খুঁজে পাই ক্যাম্পিং ভিলেজ জলি। কিছু ট্রাভেল ব্লগেও এটার রিভিউ ভালো দেখলাম, আর খরচ অসম্ভব রকম কম। আমরা দু’জনই যেহেতু ব্যাকপ্যাকার তাই ওখানের তিন বেডের শেয়ার্ড তাবুতে দুটি বেড বুক করে রেখেছিলাম।

রিসিপশন থেকে চাবি বুঝে নিয়ে তাবুতে ব্যাগ রেখে ফ্রেশ হয়ে চলে গেলাম ক্যাম্পিং ভিলেজের রেস্টুরেন্টে রাতের খাবার খেতে। ওখান থেকে খেয়ে রুমে ফিরে পরিচয় হলো আমাদের তাবুর আরেক বাসিন্দার সঙ্গে। ছেলেটা জার্মান, তবে আর দশটা জার্মানের মতো কনজার্ভেটিভ না একদম, উল্টো চরম আড্ডাবাজ। আর আমরা বাঙালিরা যেহেতু আড্ডা দেওয়ায় বিশেষভাবে পারদর্শী তাই আড্ডা চললো দেড় ঘণ্টা। ততক্ষণে নাড়ির খবরও আদান-প্রদান শেষ। যেহেতু পরদিন সকালে আমাদের আবার ফ্লোরেন্সের বাস ধরতে হবে তাই রাত ১২টার দিকে ওকে শুভরাত্রী জানিয়ে ঘুমাতে গেলাম।

ভেনিসে গিয়ে সবচেয়ে বেশি যেটা ভালো লেগেছে তা হলো প্রতি দশ কদম পরপর একজন করে বাংলাদেশির দেখা পাওয়া। জনৈক বাংলাদেশি ভাইয়ের তথ্য মতে, বৈধ-অবৈধ মিলিয়ে এই মুহূর্তে কয়েক হাজার বাংলাদেশি ভেনিস ও এর আশপাশে থাকেন। তবে একজন দু’জন করে আস্তে আস্তে যখন তাদের সঙ্গে কথা বলা শুরু করলাম ভালোলাগাটা কষ্টে পরিণত হওয়া শুরু করলো।

কিছু কিছু বাংলাদেশি আছেন যারা রেস্টুরেন্টের সামনের দিকে বা পেছনের দিকে কাজ করছেন, আর কিছু কাজ করছেন দোকানে। তারা হয়তো কিছুটা ভালো আছেন। তবে ভেনিসে বেশিরভাগই অবৈধ অভিবাসী, যাদের থাকার অনুমতি থাকলেও কাজ করার অনুমতি নেই। তারা পার করছেন অত্যন্ত মানবেতর জীবন।

তাদের কাজের অন্যতম বা হয়তো একমাত্র ব্যবস্থা রাস্তায় হকারি করা। তাতেও ঝামেলা। তাদের কাজের অনুমতি না থাকায় পুলিশ তাদের দেখলেই সঙ্গে থাকা মালামাল নিয়ে যায়। আগে পুলিশের পোশাক দেখলেই ওনারা সরে পড়তেন। কিন্তু ইদানীং পুলিশো নাকি চালাক হয়ে গেছে। সিভিল ড্রেসে টহল দেওয়া শুরু করেছে। তাই ওনারা সকালে মালামাল নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় কিছু কিছু করে লুকিয়ে রেখে অল্প অল্প করে জিনিস নিয়ে বের হন, বিক্রি শেষ হয়ে গেলে আবার কিছু বের করেন।

এভাবে ঘোরার ফলে পুলিশ যদি ধরেও তাহলে অল্পের ওপর দিয়ে যায়। ওনারা দেশে থাকলে এর থেকে হয়তো বেশি কামাই করতে পারতেন, কিতু ১০/১২ লাখ টাকা খরচ করে এসে এখন তাদের আর ফিরে যাওয়ার উপায় নেই, তাই শুধুই দীর্ঘশ্বাস ফেলেন।

চলবে...



বাংলাদেশ সময়: ০৭১৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০১৬
এএ

** ইতালি ভ্রমণ-২: খাল-জল-নৌকার ভেনিসের পথে

** ইতালি ভ্রমণ-১: ভেরোনো শহরে জুলিয়েটের বাড়ি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।