ঢাকা, শুক্রবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

ট্রাভেলার্স নোটবুক

বিভীষিকাময় সুন্দরে-৩

ভরাযৌবনা শঙ্খ নদী হয়ে বগা লেকের পথে

রিয়াসাদ সানভী | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৩৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২৭, ২০১৫
ভরাযৌবনা শঙ্খ নদী হয়ে বগা লেকের পথে ছবি: শামীমা মিতু

পূর্ব প্রকাশের পর
বান্দরবান থেকে ফিরে: রুমা বাজারে হলো আমাদের সকাল। আগের দিন রাতে পরিকল্পনা করা হয়েছিলো খুব ভোরে উঠে রওয়ানা দেওয়ার।

রাতভর যে পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে তাতে রুমা থেকে বের হওয়া যাবে কিনা এ সংশয় নিয়েই বিছানা ছাড়লাম তৌহিদের ডাকে। সে নিয়ে এসেছে দুঃসংবাদ। প্ল্যান ছিলো ল্যান্ড ক্রুজারে করে এগারো মাইল গিয়ে ট্রেকিং শুরু করার।
banglanews24
তৌহিদ জানালো রাতভর ভারী বৃষ্টির কারণে পথের বেশকিছু অংশ পানির নীচে, গাড়ি যাবে না। তবে অভয় দিলো সমস্যা নেই, নৌকার ব্যবস্থা করা যাবে। তার আগে যেতে হবে আর্মি ক্যাম্পে নাম রেজিস্ট্রেশন করতে। সকাল ছয়টায় গেলাম সেখানে। তারা জানালো আটটার আগে এ কাজ হবে না। নাস্তা খেতে হোটেলে ঢুকলাম। পরোটা ডিম ডাল ভাজি পেটে পুরতে পুরতে শুনতে হলো আরেকটি দুঃসংবাদ। বৃষ্টির পানিতে সয়লাব শঙ্খ নদী।
banglanews24
প্রচণ্ড স্রোতে নদী নাকি ফুঁসছে। এমন অবস্থায় উজান ঠেলে কোনো নৌকাই মুনলাই পাড়া পর্যন্ত যেতে রাজি না। তৌহিদ অভয় দিলো। তারপরও ঠিক যেন আশ্বস্ত হতে পারছিলাম না। নৌকা ঘাটে গিয়ে আরেক দফা বাধার মুখোমুখি হলাম। কোনো অবস্থাতেই নৌকা ছাড়বে না। তৌহিদও দেখলাম হাল ছেড়ে দিচ্ছে। এর মধ্যে ক্যাম্পে রেস্ট্রেশন সেরে এলাম সবাই। কোনো আশা নেই। রুমা বাজারে বসে ভ্যারেন্ডা ভাজার মতো অবস্থা। মিতু প্ল্যান করলো কিছু যেহেতু করার নেই তাস খেলা যাক না। কোথা থেকে তাসও জোগাড় করে আনলো। কারও মুখেই কোনো কথা নেই।
banglanews24
অনেক কষ্টে ছুটি ম্যানেজ করে এ পর্যন্ত এসে ফিরে যেতে হলে এর চেয়ে দুঃখের কিছু থাকবে না। কে যেন বললো বগা লেকের দিকে যেতে না পারলে সীতাকুণ্ড মিরসরাইতে একটা অভিযান চালানো যায় কিনা। দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর মতো ব্যাপার আর কি। কিন্তু সীতাকুন্ডের টিলা কি বান্দরবানের পাহাড়ের সমান?
banglanews24
বলেই ফেললাম, ভিতরে ঢুকতে না পারলে সোজা বাড়ি চলে যাবো।   এর মধ্যে এতক্ষণের গোমড়া আকাশটা ফর্সা হতে শুরু করলো। গত তিন চার দিন এ এলাকায় কোনো সূর্য ওঠেনি। আজই প্রথম। আশার আলোও যেন হঠাৎ করেই মেঘ ফুড়ে উদয় হলো। তৌহিদ এক মাঝি ঠিক করেছে যে গোপনে আমাদের মুনলাই পাড়া পর্যন্ত নিয়ে যেতে রাজি। তবে টাকা কিছু বেশি দিতে হবে। আমরাও এক কথায় রাজি।
banglanews24
ঘাট থেকে কিছুটা দূরে রুমা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ঘাটে নৌকা ভিড়লো কিছুক্ষণ পরে। এরমধ্যে রুমার যতজনের সঙ্গে কথা হয়েছে সবাই ভেতরে যেতে মানা করেছে। একেতো নদীর অবস্থা ভালো না। এমন অবস্থায় নৌকায় চড়া নাকি দারুণ ঝুঁকিপূর্ণ। কয়েকজন আবার ভেতরের পাহাড়ের অবস্থার কথা শোনালো। একজন নাকি গতকাল সুংসাং পাড়া থেকে ফিরেছে। সেখানে পাহাড় ধসে বিচ্ছিরি অবস্থা। পথে কোমর সমান কাদার ভয় দেখালো সে। চন্দ্রগ্রস্ত মানুষের দেখা পাওয়া যায় মাঝে মধ্যে। আমরা হয়ে গেছি পাহাড়গ্রস্ত। যেভাবেই হোক আমাদের যেতেই হবে। নৌকায় চড়ার পর ভয় আস্তে আস্তে কাটতে লাগলো। শঙ্খ নদীতে প্রচণ্ড স্রোত। বাকগুলোর মুখে ভয়ংকর ঘুর্ণী। আমাদের অবশ্য তেমন বিপদে ফেলতে পারেনি। নদীর পারের অবস্থাও ভয়াবহ। মাঝি দেখাচ্ছিলো অনেক জায়গায় বসতভিটা বিলীন হয়ে গেছে শঙ্খে।
banglanews24
কিছুক্ষণ পরেই নদীর বিশাল পটভূমিতে ভেসে এলো বান্দরবানের ট্রেডমার্ক, আকাশ ছোঁয়া পাহাড়ের সারি। কি ভয় কীসের কি! এক ঝটকায় ফিরে এলো বিশ্বাস, আমরা বেশ বড় একটা লক্ষ্য নিয়ে এসেছি। প্রায় ৪৫ মিনিট পর নৌকা নামিয়ে দিলো মুনলাই পাড়ার কাছে। ট্রেকিংয়ের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হলো। আগামী কয়েকদিন পা-ই ভরসা। রোদও বেশ তাঁতিয়ে উঠেছে। আমরা পথে পা বাড়ালাম। এগিয়ে চলেছি আরেকটি স্বপ্নের পথে। আগের দিন ২১ কিলোমিটার হেঁটেছি। দলের অন্যরাও হেঁটেছে প্রায় ১১ কিলোমিটার পথ।

মোটামুটি সবাই অ্যাক্লেমাটাইজ। বান্দরবানে ট্রেকিংয়ের প্রথম দিন কিছুটা কঠিন। আমরা মোটামুটি স্বচ্ছন্দ্যেই উঠতে লাগলাম। মুনলাই পাড়ার পরে একটা বেশ খাঁড়া চড়াই আছে। সেখানে কিছুটা থামতে হলো। তাছাড়া মোটামাটু গতি সাবলীল। বর্ষার কারণে এখন কমলাবাজার পর্যন্ত জিপ যায় না। এগারমাইল পর্যন্ত এই কয়েকদিন আগ পর্যন্তও যেত। কিন্তু গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে রাস্তায় পানি উঠে যাওয়ায় এখন পুরো রাস্তাই বন্ধ। কিছুটা যাচ্ছি কিছুটা থামছি অনেকটা ল্যাটানো স্টাইলে। তা ফলো করতে হচ্ছে দু’একজন পেছনে পড়ে যাওযার কারণে। ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি পড়া শুরু হয়েছে। রেইনকোট গায়ে চাপিয়ে হাঁটার কিন্তু বিরাম নেই।


প্রিয় পাঠক, ভ্রমণ যাদের নেশা, বেড়ানোর সুযোগ এলে যারা উড়িয়ে দেন সব বাধা, কাজের অংশ হিসেবে যারা ভ্রমণ করেন কিংবা যাদের কালেভদ্রে সুযোগ হয় ভ্রমণের তারা সবাই হতে পারেন ট্রাভেলার্স নোটবুক’র লেখক। আপনার ভ্রমণের অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে পারেন বাংলানিউজের পাঠকদের সঙ্গে। আর একটা কথা লেখার সঙ্গে ছবি পাঠাতে ভুলবেনই না, সেই সঙ্গে বাতলে দিন সেখানে যাওয়ার পথঘাটের বিবরণও।


প্রিয় পাঠক, আপনার ভ্রমণ আনন্দ বিশ্বজুড়ে বাঙালির কাছে ছড়িয়ে দিতে আমাদের ই-মেইল করুন- 



** ২১ কিমি হেঁটে অবশেষে রুমায়!
** পাহাড়ের আড়ে বিধ্বস্ত বান্দরবানের অবিশ্বাস্য সৌন্দর্যে

বাংলাদেশ সময়: ০১৩০ ঘণ্টা, আগস্ট ২৭, ২০১৫
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।