ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

ট্রাভেলার্স নোটবুক

পাথরকন্যা জাফলং

মো. অহিদ উল্লাহ পাটোয়ারী | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫১৭ ঘণ্টা, আগস্ট ১৮, ২০১৫
পাথরকন্যা জাফলং

তখন ভোর ৬টা। ‘ঘুরে বেড়াই বাংলাদেশ’ দলের বন্ধুরা সিলেট গিয়ে পৌঁছলাম।

গন্তব্য পাথরকন্যা জাফলং। এবারের দলটি ছিল ইব্রাহিম, জাহাঙ্গীর, চঞ্চল, মুকুল, স্বপন ও আমাকে নিয়ে।

শেষ রাতে পথের একটি রেস্তোরাঁয় নাস্তা করায় সকালের নাস্তার প্রয়োজন হলো না। বাস থেকে নেমেই সিএনজি চালিত অটোরিকশা খোঁজা। পেয়েও গেলাম একটা। কিন্তু ভাড়া শুনে তো আমাদের চক্ষু চড়কগাছ! চালক কদমতলী থেকে দরগাহ গেট পর্যন্ত যেতেই চাইল  তিনশ’ টাকা।

ভাবলাম, সবই সিলেটিদের লন্ডনি পয়সার হাওয়া। যাহোক, শেষমেশ আড়াইশ’ টাকায় সিএনজি ঠিক করা গেলো। তবে জাফলং যাত্রার আগে হযরত শাহজালাল (র.) ও শাহপরানের (র.) মাজার জিয়ারত। সবাই চেপে বসলাম সিএনজিচালিত উড়ালপঙ্খীতে।

লোকে বলে, হাওর-বাওড়ের সিলেট। একদম বাড়িয়ে বলা না। কিছু শুকনো হাওরে গরু-ছাগল চরতে দেখলাম। কোনোটিতে আবার উথাল-পাথাল পানি। তাতে ফুটে রয়েছে লাল-সাদা শাপলা।

সবুজ পাহাড়ের ভেতর দিয়ে আমাদের পথ। বৃষ্টি ধোয়া পাহাড়ি ঢালে ‘একটি কুড়ি, দু’টি পাতা’র খাসিয়া জয়ন্তিয়া পাহাড়। উপরে ঝকঝকে নীল আকাশে পেজা তুলোর মতো সাদা মেঘ। আর নিচে পাহাড়ের গা বেয়ে রূপালি ফিতার মতো ঝরনাধারা।

এরকম এক রূপকথার রাস্তার শেষে দেখা মিললো কাঙ্ক্ষিত পাথরকন্যার। যেদিকে তাকাই শুধুই পাথর আর পাথর। স্বচ্ছ পাহাড়ি নদীর পেটভর্তি বর্ণিল পাথর। তখন বুঝলাম-কেন পর্যটকরা জাফলংকে পাথরকন্যা বলে ডাকে।

দেখলাম নদী থেকে পাথর তুলে নৌকা করে তীরে তোলা হচ্ছে। পরে এই পাথর ট্রাকে করে পৌঁছে যাবে দেশের বিভিন্ন শহর-গ্রামে।

খাসিয়া পাহাড়ের কোলে, সারি নদীর পাড়ে অনিন্দ্য সুন্দর জাফলংয়ের অবস্থান। প্রকৃতি যেন নিজ হাতে সাঁজিয়েছে ভারত সীমান্তবর্তী দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের এই জনপদটিকে।

একটি ইঞ্জিনচালিত নৌকা নিয়ে জিরোপয়েন্ট পর্যন্ত গেলাম আমরা। নৌকা কিছুদূর যেতেই পাশের টিলায় দেখলাম ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বিএসএফ-এর ক্যাম্প।

মাঝি হিন্দি-বাংলা মিশিয়ে চিৎকার করে আরেকটু এগোনোর অনুমতি নিয়ে নিলো। নদীর ওপারেই ভারতের ডাউকি এলাকা। পাহাড়ের গায়ে লোকালয়। সাদা, হলুদ, নীল ও সবুজ সব দালান।

সামনেই জাফলংয়ের সেই বিখ্যাত ঝুলন্ত সেতু। নৌকা থেকে স্বর্গীয় স্বচ্ছ জলের আহ্বান যেন কিছুতেই ফেরাতে পারিনি আমরা।

যেভাবে যাবেন:
রাজধানীর সায়েদাবাদ, ফকিরাপুল, গাবতলী, কলাবাগান ও মহাখালী থেকে বিভিন্ন পরিবহনের এসি/নন-এসি বাস চলাচল করে সিলেটের উদ্দেশে।
ভাড়া পড়বে ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা। যেতে পারেন উড়োজাহাজেও। সেক্ষেত্রে ভাড়া পড়বে সাড়ে ৩ হাজার টাকার মতো। ঢাকা-সিলেট রুটে বেশ কয়েকটি আন্তঃনগর ট্রেনও চলাচল করে।

আর সিলেট শহরের কদমতলী, হুমায়ন চত্বর ও আম্বরখানা কিংবা ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে লোকাল বাস, মাইক্রোবাস ও অটোরিকশায় জাফলং যাওয়া যায়।

কোথায় থাকবেন:
সিলেটে ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সংলগ্ন এলাকায় পর্যটন করপোরেশনের মোটেল রয়েছে। সেখানে আবাসন সুবিধার পাশাপাশি আছে রেস্তোরাঁ সুবিধাও।

এছাড়া সিলেটের বিভিন্ন এলাকায় বেশ মান-সম্মত হোটেল-রেস্তোরাঁ পাওয়া যাবে। সামর্থ্যের মধ্যেই এসব সুযোগ-সুবিধা নিতে পারবেন পর্যটকরা।

প্রিয় পাঠক, ভ্রমণ যাদের নেশা, বেড়ানোর সুযোগ এলে যারা উড়িয়ে দেন সব বাধা, কাজের অংশ হিসেবে যারা ভ্রমণ করেন কিংবা যাদের কালেভদ্রে সুযোগ হয় ভ্রমণের তারা সবাই হতে পারেন ট্রাভেলার্স নোটবুক’র লেখক।

আপনার ভ্রমণের অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে পারেন বাংলানিউজের পাঠকদের সঙ্গে। আর একটা কথা লেখার সঙ্গে ছবি পাঠাতে ভুলবেনই না, সেই সঙ্গে বাতলে দিন সেখানে যাওয়ার পথঘাটের বিবরণও।

প্রিয় পাঠক, আপনার ভ্রমণ আনন্দ বিশ্বজুড়ে বাঙালির কাছে ছড়িয়ে দিতে আমাদের ই-মেইল করুন- 



বাংলাদেশ সময়: ০০৪৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১৭, ২০১৫
এসইউ/এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।