ঢাকা, শনিবার, ১৯ আশ্বিন ১৪৩১, ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ০১ রবিউস সানি ১৪৪৬

ট্রাভেলার্স নোটবুক

মেঘ ছুঁয়ে যায়...

আবু আফজাল মোহাম্মদ সালেহ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৮, ২০১৪
মেঘ ছুঁয়ে যায়...

কোথাও হয়তো পাহাড়ের সীমানা পেড়িয়ে মাটিতে আছড়ে পড়া ঝরনা, তার নেচে চলা গর্জন। কোথাও শীর্ণকায় খাড়াই পথ আবার কোথাও মাইলের পর মাইল সবুজ উপত্যকা।

হিমালয়ের মাথায় সর্পিল আকারের পথে চলন্ত গাড়ি থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা’র অতুলনীয় মোহনীয় দৃশ্য! আগস্ট মাসের প্রচণ্ড গরমেও পুরো দার্জিলিং যেন শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বিশাল কম্পার্টমেন্ট!

নিউ জলপাইগুড়ি থেকে শিলিগুড়ি। তারপর ক্যান্টনমেন্টের ভেতর দিয়ে স্টেশন পেরোতেই চোখ জুড়িয়ে গেল অপরূপ সৌন্দর্যে। মায়াময় চা বাগানের ভেতর দিয়ে ট্যাক্সি চলছে আপন গতিতে।

আকাশ আর চা বাগান যেনো মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে! যতই পথ এগুই ততই মুগ্ধ হই। ‘ঘুম’ স্টেশন দেখে অবাক! মেঘ কুয়াশায় যেন ঢাকা ঘুম স্টেশনসহ সমগ্র দার্জিলিং।

কার্শিয়াং’র ডাইহিল গার্লস স্কুল, চা বা কমলালেবুর বাগান আর রঙিন আলোয় কাঞ্চনজঙ্ঘার অসামান্য দৃশ্য-এক কথায় অপার্থিব! লম্বা লম্বা গাছ,পাহাড় বেয়ে পড়া স্বচ্ছ সাদা ঝরনা, উচুঁ-নিচু মাইলের পর মাইল সবুজ উপত্যাকা যেন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের  নীলাভূমি। সৃষ্টিকর্তা যেন এসব তৈরি করেছেন আপন মাধুরী দিয়ে।

সড়কের পাশে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর ফাঁকা ফাঁকা আধপাঁকা ঘর বা সুদৃশ্য আবাসিক হোটেল যেন আমাদের দেশের টং (দোকান) ঘর।
এ দৃশ্য সড়ক পথে দিয়েছে নান্দনিকতা। বর্ষা যদিও প্রায় শেষ তবুও ঝরনার পানির পরিমাণ বেশ। এসব দৃশ্য দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়!

পাহাড় কেটে তৈরি আঁকাবাঁকা সড়ক পথ যে মনে করিয়ে দেয় ছবির দৃশ্য। যা দেখে এতোদিন কল্পনা করতাম এমন দৃশ্য কি হতে পারে! হিমশীতল মেঘ ছুঁতে ছুঁতেই সর্পিল পথে যতই যাচ্ছি রোমাঞ্চ ততই বাড়তে থাকে। আর দ‍ূরের কাঞ্চনজঙ্ঘা’র অভূতপূর্ব দৃশ্য না দেখলে বিশ্বাসই হবে না।

মেঘ যে ছোঁয়া যায় বা মেঘের ভেতর দিয়ে যাওয়া যায় তা দার্জিলিং এ না এলে রূপকথা বলে মনে হতো। চিমটি কেটে দেখি বাস্তব না দৃষ্টিভ্রম! কী অপ‍ূর্ব দৃশ্য! ভোলা যাবে না কোনোদিন!
 
অনেকটা দূরত্বে প্রায় সোয়া তিন ঘণ্টা চড়াই পথ অতিক্রম করে আমরা পৌঁছলাম দার্জিলিং পিকে। ওয়াচ টাওয়ার বা সুউচ্চ হোটেল থেকে দার্জিলিং শহর, কাঞ্চঞ্জঙ্ঘা’র দৃশ্য, মেঘ আর মাঝে মাঝে বৃষ্টি’র মধ্যে শহরটা দেখতে খুবই মনোরম। পাহাড়ের গায়ে পরিকল্পিত চা বাগান আর সড়কপথ ধরে হিমালয়ের ট্রয় ট্রেনের লাইন, পাহাড়ের বুক চিরে ছোট ছোট স্টেশন, যেন স্বপ্নময় ভূবনে হারিয়ে যাচ্ছি! পৃথিবীর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উচ্চতায় অবস্থিত ‘ঘুম’ স্টেশন, পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর আপনমনে চলাফেরা বা কাজকর্ম, নির্জন আবাসভূমিতে মাঝে মাঝে পাখির ডাক বা ট্রয় ট্রেনের ধীর গতিতে ঝমঝম শব্দ পরিবেশকে আন্দোলিত করে। সৃষ্টি হয় রোমাঞ্চকর অনুরণন!

পাইনের বন, হাউজিং কমপ্লেক্স, পুরাতন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সুরম্য স্থাপত্য আরো কত কী! ‘টাইগার হিল’ (ওয়াচ টাওয়ার) থেকে দেখা যায় ছোট ছোট জঙ্গল, হিমশীতল মেঘস্তর আর গাছের ডালে ডালে খাবার খুঁজে বেড়াচ্ছে রঙিন বিভিন্ন পাখি, শীত পোশাক পরে কর্মব্যস্ত পাহাড়ি জনগণ! যেন রঙিন দুনিয়া! ‘টাইগার হিল’ থেকে দেখা যায় সূর্যদয়ের অপূর্ব দৃশ্য!

কোলকাতার শিয়ালদহ স্টেশন থেকে নিউজলপাইগুড়ি ৫৮৬ কি.মি.। নিউজলপাইগুড়ি এনজেপি নামেই পরিচিত। এনজেপি থেকে ভাড়ায় বা শেয়ারে ট্যাক্সি করে তিন ঘণ্টার পথ দার্জিলিং। ইচ্ছে করলে যে কেউ ‘হিমালয়ন ট্রয় ট্রেন” এ যেতে পারবেন। সময় লাগবে ৭-৮ ঘণ্টা। শিয়ালদহ বা হাউড়া থেকে এনজেপি বা গোয়াহাটিগামী যে কোনো ট্রেনে চেপে যাওয়া যায়। উত্তরবঙ্গ এক্সপ্রেস, কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস, পদাতিক বা সর্বাধিক পরিচিত ‘দার্জিলিং মেল’ এ নিউজলপাইগুড়ি তারপর দার্জিলিং! রিজার্ভেশন টিকেট করতে হলে আগেই বুকিং দিতে হবে।

এনজেপি, শিলিগুড়ি বা দার্জেলিং এ থাকার জন্য বিভিন্ন মানের আবাসিক হোটেল রয়েছে। তবে আগে থেকেই বুকিং দিলে ভালো হয়। দার্জিলিং এ প্রচণ্ড শীত। তাই শীতের পোমাক নিতে ভুলবেন না। সাথে একটি ছাতাও।

আবু আফজাল মোহাম্মদ সালেহ
উপজলো পল্লী উন্নয়ন অফিসার
জীবননগর, চুয়াডাঙ্গা
 
প্রিয় পাঠক, ভ্রমণ যাদের নেশা, বেড়ানোর সুযোগ এলে যারা উড়িয়ে দেন সব বাধা, কাজের অংশ হিসেবে যারা ভ্রমণ করেন কিংবা যাদের কালেভদ্রে সুযোগ হয় ভ্রমণের তারা সবাই হতে পারেন ট্রাভেলার্স নোটবুক’র লেখক। আপনার ভ্রমণের অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে পারেন বাংলানিউজের পাঠকদের সঙ্গে।

আর একটা কথা লেখার সঙ্গে ছবি পাঠাতে ভুলবেনই না, সেই সঙ্গে বাতলে দিন সেখানে যাওয়ার পথঘাটের বিবরণও।  

প্রিয় পাঠক, আপনার ভ্রমণ আনন্দ বিশ্বজুড়ে বাঙালির কাছে ছড়িয়ে দিতে আমাদের ই-মেইল করুন-

বাংলাদেশ সময়: ১৭১০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৮, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।