ঢাকা, শনিবার, ১৯ আশ্বিন ১৪৩১, ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ০১ রবিউস সানি ১৪৪৬

ট্রাভেলার্স নোটবুক

ভ্রমণপিপাসুদের কাছে টানে তুলাতলীর সৌন্দর্য

ছোটন সাহা, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৪৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ৭, ২০১৪
ভ্রমণপিপাসুদের কাছে টানে তুলাতলীর সৌন্দর্য ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ভোলা: চারদিকে জলরাশি, সবুজ গাছপালা আর বাঁধে বিছানো সিসি ব্লক, নির্মল বাতাস আর মেঘনার উত্তাল ঢেউ। নেই শহরের যানজট-কোলাহল।

প্রকৃতির এ অপরূপ সৌন্দর্য ভোলা সদরের তুলাতলী বাঁধ এলাকার।

শহর থেকে তিন কিলোমিটার দূরের এ জনপদেই বিনোদনের আশায় ছুটে আসছেন শত শত মানুষ। অন্যদিনের তুলনায় ছুটির দিনগুলোতে সেখানে ভ্রমণপিপাসু মানুষের উপছে পড়া ভীড় থাকে।

তুলাতলীকে আরো বেশি আকর্ষণীয় করতে সাজানো হয়েছে নতুনভাবে। বিনোদনপ্রিয় মানুষকে মুগ্ধ করার যেন যাদু রয়েছে তুলাতলীতে।

ভোলা সদর উপজেলার ধনিয়া ইউনিয়নের এক খণ্ড সবুজ তুলাতলী। মেঘনার ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা করতে সেখানে সিসি ব্লক স্থাপন করেছে পাউবো। শক্তিশালী ওই ব্লক এখনও রক্ষা করে আসছে তুলাতলীকে।
 
শহরে উল্লেখযোগ্য বিনোদন কেন্দ্র না থাকায় সবার দৃষ্টি তুলাতলীতে। তাই প্রকৃতির সৌন্দর্য কাছ থেকে উপভোগ করতে ছুটে আসছেন তরুণ-তরুণী, শিশু-কিশোরসহ সব বয়সের মানুষ।
 
তুলাতলী ঘুরে দেখা গেছে, পরিবার-পরিজন নিয়ে ছুটে এসেছেন বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ। বাঁধে বিভিন্ন সৌন্দর্যমণ্ডিত এলাকায় কেউ প্রিয়জনের ছবি তুলছেন, কেউ নৌকায় ঘুরছেন, কেউ মনের আনন্দে গান গাইছেন। কেউবা বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডায় মেতে উঠেছেন।

স্থানীয় কয়েকজন উদ্যোক্তা পর্যটকদের জন্য বসার স্থান তৈরি করেছেন। রয়েছে কুড়ে ঘর। সেখানে অবসর সময় পার করছেন মানুষ।

স্থানীয়রা জানালেন, সপ্তাহের শুক্র ও শনিবার সকাল থেকে রাত ৮/৯টা পর্যন্ত মানুষের ভীড় থাকে। অন্যদিনগুলোতে শুধু বিকেলে ঘুরতে আসে মানুষ। তবে এসব দিনে তুলানামূলক ভীড় কম।

ঘুরতে আসা কলেজ শিক্ষক মনিরুল ইসলাম জানান, কক্সবাজার কিংবা কুয়াকাটার মত ততটা সুন্দর না হলেও তুলাতলীতে এলেই যেন মনে হয় সেখানেই আছি। কারণ এখানকার সৌন্দর্য মানুষকে মুগ্ধ করে। একটু বিনোদনের আশায় ছুটে আসছেন মানুষ।

সম্প্রতি ঢাকা থেকে ঘুরতে আসা সংবাদকর্মী হাসান জাভেদ জানান, ভোলাতে এলেই তুলাতলী না এসে থাকতে পারি না। কারণ এমন সৌন্দর্য সব স্থানে মেলে না, বার বার যেন আকর্ষণ করে তুলাতলী যেতে।

ঘুরতে আসা ঢাকার আরেক সংবাদকর্মী রিপন জানান, ভোলায় এসে এরআগে তুলাতলীর নাম শুনেছি, কিন্তু কখনও যাওয়া হয়নি। কিন্তু অবশেষে এবার এসেই মুগ্ধ হলাম। এখানে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠতে পারে।

এলাকাবাসী জানায়, গত কয়েক বছর ধরে তুলাতলীতে মানুষ আসতে শুরু করে। কিন্তু এ বছরই সবচেয়ে বেশি মানুষ আসছে। তবে শীতের আগমন হওয়াতে আরো বেশি পর্যটক আসবে বলে মনে করছেন তারা।
 
এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেলো, গত দু’বছর ধরে শীতের সময় তুলাতলী বাধের কাছেই মেঘনার বুক চিরে জেগে উঠে ছোট ছোট চর। সেখানে মানুষ খুব কাছ থেকেই নদীর ঢেউ উপভোগ করেন। তবে বেশি আকর্ষণ করে সূয্য ডোবার দৃশ্য। রাত পর্যন্ত মানুষের ভীড় থাকে সেখানে। তবে জোয়ার আসার আগেই সবাই চর থেকে বাধে উঠে আসেন।

এদিকে, তুলাতলীর সৌন্দর্য ও বিনোদন কেন্দ্রের খবর এখন জেলা ছাড়িয়ে মফস্বলের উপজেলাগুলোতেও ছড়িয়ে পড়েছে। মাঝে মধ্যেই ওই সব উপজেলা থেকে শত শত নারী-পুরুষ ঘুরতে আসেন। অন্য কোথাও না গিয়ে আগে ছুঠে আসছেন তুলাতলীতে।
এখন মাঝে মধ্যে দেখা যায় পিকনিক, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বিভিন্ন সংগঠনের অনুষ্ঠান হয়ে হচ্ছে। এসব অনুষ্ঠানে স্থানীয় বাসিন্দাদের মুগ্ধ করে।

তুলাতলীতে উপভোগ করা যায় মেঘনার বুবে জেগে উঠা কয়েকটি সবুজ দ্বীপ, নদীর উত্তাল ঢেউ, সূয্য ডোবার দৃশ্য, জেলেদের মাছ ধরা, নৌকায় ঘুরে বেড়ানো, নির্মল বাতাস, বাহারি রংয়ের বৃক্ষরাজী ও প্রকৃতির সৌন্দর্য।
 
তুলাতলীতে অবসর সময় কাটানোর জন্য উত্তম স্থান। এছাড়াও পিননিকসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান করা যায়। রয়েছে ফুচকা, চটপটি, কপি, রং চা, পিঠাসহ নানা রকম মুখরোচক খাবার ছোট ছোট স্টল। তবে এসব স্টলে খাবারের দাম একটু বেশি।

সরকারি উদ্যোগ ও পৃষ্ঠপোষকতা পেলে ভোলার তুলাতলী হয়ে উঠতে পারে অপরূপ পর্যটন কেন্দ্র এমনটাই মনে করছে ঘুরতে আসান মানুষ, এলাকাবাসী ও সচেতনমহল।

বাংলাদেশ সময়: ০৭৩৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৭, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।