ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

ট্রাভেলার্স নোটবুক

পাহাড়ের নতুন ঈর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র ‘সাজেক’

অপু দত্ত, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৫৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০১৪
পাহাড়ের নতুন ঈর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র ‘সাজেক’

খাগড়াছড়ি: কোথাও নীল আকাশ আবার কোথাও কালো মেঘের ভেলা। কোথাও ঝুম বৃষ্টি আবার কোথাও প্রখর রোদ।

বৃষ্টি শেষের দৃশ্য আরো ঈর্ষণীয়। পাহাড় ভেদ করে মেঘের পারাপার দেখে মনে হবে শীতের ঘন কুয়াশা ছেয়ে গেছে চারপাশ। শুধু তাই নয় সাজেক পাহাড়ের ওপর থেকে সূর্যোদয় আর সূর্যাস্ত দুটি দৃশ্যই মুগ্ধ করবে পর্যটকদের।

বলছিলাম রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলায় অবস্থিত পাহাড়ের ভূ-স্বর্গ নামে পরিচিত ‘সাজেক’র কথা।

এমনিতে বাংলাদেশের মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে পর্যটকদের আকর্ষণ একটু বেশি। আর সেই আকর্ষণ আরো বাড়িয়ে তুলেছে সাজেক উপত্যকা। বাঘাইছড়ি উপজেলায় সাজেকের অবস্থান হলেও, এর যোগাযোগ ব্যবস্থা খাগড়াছড়ির সঙ্গে।

এখন থেকে তিন-চার বছর আগেও দুর্গম বলে মানুষ সাজেকে যেতে সাহস পেতোনা। আর সাজেক এখন রুপান্তরিত হয়েছে ঈর্ষণীয় এক পর্যটন কেন্দ্রে। সব সুযোগ-সুবিধা নিয়ে সাজেক এখন পর্যটকদের হাতের মুঠোয়।

স্থানীয় বাসিন্দা জন কেরিন জানান, আগে স্থানীয় বাসিন্দা ছাড়া বাইরের সাধারণ মানুষ আসতোনা বললেই চলে। কিন্তু এখন প্রতিদিন পর্যটকদের উপস্থিতি চোখে পড়ার মত।

আগে পাহাড় পর্বত, যাতায়াত ব্যবস্থা না থাকার কারণে সাজেক সীমান্তবর্তী দুর্গম এলাকা হিসেবে পরিচিতি ছিল। কিন্তু সেনাবাহিনীর কারণে সব সুযোগ সুবিধা থাকায় এই এলাকা এখন পর্যটকদের হাতের মুঠোয়।

স্থানীয় রুইলুই পাড়ার বাসিন্দা হাপিং লুসাই জানান, রাতে হারিকেন একমাত্র ভরসা হলেও এখন গ্রামে গ্রামে সৌর বিদ্যুতায়ন, নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, গভীর নলকূপের মাধ্যমে বিশুদ্ধ পানীয় জলের ব্যবস্থা, শিব মন্দিরসহ দীর্ঘমেয়াদী নানামুখী উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের জন্য হাসি ফুটেছে সাজেকবাসীর মুখে।

রুইলুই মৌজার হেডম্যান লাল থাংগা লুসাই বাংলানিউজকে জানান, সাজেকের পরিবর্তন আমাদের কাছে স্বপ্নের মত। এতদিন কঠিন জীবন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এখানকার মানুষগুলো জীবন পার করছে। আর এখন প্রতিদিন পর্যটকদের আনাগোনা বাড়ায় স্থানীয়দের কিছু আয়ের পথ তৈরি হয়েছে।

কল্পনা এখন বাস্তব হয়ে ধরা দিয়েছে সাজেকবাসীর জন্য। কারণ খাগড়াছড়ির সঙ্গে সাজেকের নির্মাণ হওয়া রাস্তায় চালু হয়েছে সরাসরি সাজেক বাস সার্ভিস, পর্যটকদের জন্য রয়েছে থ্রি স্টার মানের ক্লাব, রিসোর্ট, ক্লাব। রয়েছে পাহাড়ি রেস্তোরা।

চট্টগ্রামের ২৪ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি ও এরিয়া কমান্ডার জেনারেল সাব্বির আহম্মেদ বাংলানিউজকে জানান, সাজেকের যে সৌন্দর্য আমরা তা পর্যটকদের কাছে উপস্থাপন করতে চাইছি। এরইমধ্যে পর্যটকদের জন্য থাকা এবং খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পর্যটন এলাকা হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে উন্নয়ন কর্মকান্ড অব্যাহত থাকবে।

আর এই এলাকার উন্নয়ন ঘটলে সাজেকবাসীর আর্থ-সামাজিক, জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি এবং নিজস্বতা ধরে রাখতে ভূমিকা রাখবে। সাজেক হবে, দেশের সবচেয়ে স্বস্তি আর শান্তির বিনোদন কেন্দ্র।

আয়তনের দিক থেকে দেশের বৃহত্তম ইউনিয়ন পাহাড়িয়া ‘সাজেকে’ কঠিন জীবন সংগ্রামে জয়ী পাংখো-লুসাই আর ত্রিপুরাদের পরিচর্যায় টিকে রয়েছে এখনো অনেক নান্দনিকতায়। আর এই এলাকা পুরোপুরি পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে উঠলে দেশে পর্যটন শিল্পে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে বলে আশা স্থানীয়দের।

কিভাবে যাবেন:
ঢাকার কমলাপুর বা ফকিরাপুল, কলাবাগান থেকে এস আলম, সৌদিয়া, শ্যামলী, শান্তিসহ আরো বেশ কিছু পরিবহনে খাগড়াছড়ি যাওয়া যায়। ভাড়া নন এসি ৫২০ টাকা। খাগড়াছড়ি নেমে জিপ রিজার্ভ করে সাজেক যেতে লাগবে ২ ঘণ্টা। ভাড়া লাগবে ৪৫০০-৫০০০ টাকা।

বাংলাদেশ সময়: ০৯২৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।