ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫

পর্যটন

বেনাপোল-পেট্রাপোলের মতো হোক সব ইমিগ্রেশন-স্থলবন্দর

আসিফ আজিজ, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩৫৯ ঘণ্টা, মার্চ ১৯, ২০১৭
বেনাপোল-পেট্রাপোলের মতো হোক সব ইমিগ্রেশন-স্থলবন্দর বেনাপোল-পেট্রাপোল ইমিগ্রেশন ও স্থলবন্দর/ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: দু’পাশে উঁচু লোহার গেট। মাঝের কয়েক ধাপ জায়গা শুধু নোম্যানস ল্যান্ড। যশোর রোড ধরে এক দেশ থেকে আরেক দেশে পা রাখতে সময় লাগে কয়েক সেকেন্ড। এক ইমিগ্রেশন থেকে আরেক ইমিগ্রেশনও নিশ্বাস দূরত্বে। পণ্য আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রেও সোজাসিধা পথ। আর এসব সুবিধায় দেশের দক্ষিণাঞ্চলের বেনাপোল-পেট্রাপোল ইমিগ্রেশন ও স্থলবন্দর ভ্রমণ এবং বাণিজ্যের ক্ষেত্রে হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ-ভারতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র।

ঠিক বিপরীত চিত্র দেশের উত্তরাঞ্চলের শেষ সীমানায় গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসে উদ্বোধন হওয়া বাংলাবান্ধা-ফুলবাড়ি স্থলবন্দর ইমিগ্রেশনে। দু’দেশের ইমিগ্রেশনের মধ্যে দূরত্ব এক কিলোমিটারের বেশি।

এটা আবার নোম্যানস ল্যান্ড। ভ্রমণকারীদের এই দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে যাওয়া-আসা করতে হয় এক দেশ থেকে আরেক দেশে। লাগেজ বহন, নারী, বয়সী, রোগীদের জন্য বিষয়টি আরও কষ্টকর। কারণ এই পথটুকুতে কোনো যানবাহন নেই।

সেটা থাকারও কথা নয়। কারণ মাঝের মাটিটুকুর দায়ভার দুই দেশেরই, আবার কারও নয়! এজন্য কোনো একটি দেশ দায়িত্ব নিয়ে বাহন ব্যবস্থা করতে পারছে না। ইমিগ্রেশন অফিস সরিয়ে আনা কিংবা কোনো বাহনের ব্যবস্থা না করায় ওপারের শিলিগুড়ি, দার্জিলিং, কালিম্পং, মিরিক, ডুয়ার্স, লাভা, রিশপের মতো আকর্ষণীয় স্পটগুলোতে যেতে পর্যটকদের কষ্ট পোহাতে হচ্ছে। এ রুটে অন্য যেকোনো রুট থেকে দার্জিলিং, নেপাল যাওয়া সহজ। ওদিক থেকে যারা বাংলাদেশে আসবে তাদের জন্যও বিষয়টি বিড়ম্বনার। কিন্তু দুই দেশের আন্তরিকতা ছাড়া কোনোভাবেই এ সমস্যা সমাধানের উপায় নেই।

একটি ঊর্ধ্বতন দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, উদ্বোধনের পর বিষয়টি নীতি নির্ধারক উচ্চ পর্যায়ের কর্তাব্যক্তিদের নজরে এলেও কোনো সমাধানে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। তাদের ভাবনা এর জন্য দুদেশকেই সমান গুরুত্বে এগিয়ে আসতে হবে। কারণ এর প্রধান সুবিধাভোগী হবে দু’দেশের জনগণ। সমস্যা উৎরাতে ইমিগ্রেশন অফিস জিরো পয়েন্টে সরিয়ে নিতে আলোচনা উঠলেও তাতে কোনো ফল আসেনি।

সূত্র জানায়, ভারতের সঙ্গে বেনাপোল-পেট্রাপোল বন্দরে সবচেয়ে বেশি পণ্য আমদানি-রপ্তানি হয়। সাধারণ মানুষও এই ইমিগ্রেশন সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করে।

এখানে দুই শিফটে মানুষ যাতায়াত ও পণ্য আমদানি-রপ্তানির কাজ হয়। রাত ৮টার পর আর কোনো কার্যক্রম থাকে না। শিফট আরও একটা বাড়ানোর পক্ষে ঊর্ধ্বতনরা। বিমানবন্দরগুলো সারারাত খোলা থাকতে পারে, তাহলে স্থলবন্দরগুলোও সেটা পারে। এতে দুই দেশই রাজস্ব বেশি পাবে। কারণ বন্দর ব্যবহার, আমদানি-রপ্তানি আরও বাড়বে।

নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, সবশেষ বছর ১৪ লাখ মানুষ বেনাপোল-পেট্রাপোল ইমিগ্রেশন ব্যবহার করেছে। এবং মোট বাণিজ্যের প্রায় ৮০ শতাংশ মানে প্রায় ছয়শো কোটি ডলারের বাণিজ্য হয়েছে এ রুটে।

ঊর্ধ্বতন দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের মতে, বেনাপোল-পেট্রাপোল দিয়ে এতো বেশি মানুষ যাতায়াত ও পণ্য পরিবহন হচ্ছে এর অবকাঠামোগত সুবিধা থাকায়। সবকিছু সহজলভ্য হওয়ায়। যদিও বেনাপোলে আন্তর্জাতিক মানের আরও সুবিধাজনক অবকাঠামো তৈরি হলেও সেগুলো এখনও সচল হয়নি।   কিংবা হতে পারতো আরও গোছালো। কিন্তু বাণিজ্যিক দিক, রাজস্ব প্রভৃতি বিষয়গুলো বিবেচনা করলে ঠিক আছে।

বর্ডার টু বর্ডার যোগাযোগ যতো বেশি হবে, সহজলভ্য হবে ততো বেশি মানুষ যাবে, বাণিজ্য হবে সহজ। সরাসরি বাসে ঝামেলামুক্তভাবে কোনো সীমান্ত দিয়ে ভারত-বাংলাদেশে যাতায়াত করার সুবিধাও এই সম্ভাবনাকে অনেকটা এগিয়ে দেয়।

পারস্পরিক সহযোগিতা, বাণিজ্য, রাজস্ব বাড়াতে এরইমধ্যে ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করার পাশাপাশি ভিসার মেয়াদ বাড়ানো এবং প্রতিদিন ভিসা দেওয়ার সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ করেছে ভারত। এ ধরনের সহযোগিতা ভবিষ্যতে আরও বাড়ানো হবে বলেও জানায় দায়িত্বশীল সূত্রটি।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৫০ ঘণ্টা, মার্চ ১৯, ২০১৭
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।