ঢাকা, শুক্রবার, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৭ মে ২০২৪, ০৮ জিলকদ ১৪৪৫

পর্যটন

পুলিশ কী না পারে!

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০১৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৬, ২০১৬
পুলিশ কী না পারে! ছবি: সোহেল সরওয়ার-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

এপ্রিলের চেয়ে অনেক বেশি ঝকঝকে তকতকে দেখে বেশ ভালোই লাগলো। তার মানে ট্যুরিস্ট পুলিশের ঝুড়ি থেরাপি বেশ কাজে দিয়েছে।

কক্সবাজার থেকে: এপ্রিলের চেয়ে অনেক বেশি ঝকঝকে তকতকে দেখে বেশ ভালোই লাগলো। তার মানে ট্যুরিস্ট পুলিশের ঝুড়ি থেরাপি বেশ কাজে দিয়েছে।

এপ্রিলে যখন কক্সবাজার সফর করেছিলাম তখন অনেক নোংরা দেখেছিলাম কক্সবাজার বিচে। তখন ট্যুরিস্ট পুলিশের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার হোসাইন মোহাম্মদ রায়হান কাজেমীর মুখে শুনেছিলাম এই ঝুড়ি থেরাপির কথা।  

ট্যুরিস্ট পুলিশের এই কর্তা বলেছিলেন, আমরা বিচ পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য বেশি কিছু উদ্যোগ নিয়েছি। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ময়লা ফেলার ঝুড়ি বসানো। প্রত্যেক ছাতার সঙ্গে একটি করে ঝুড়ি দেওয়া হবে। কোন ছাতার সামনে পেছনে ময়লা পাওয়া গেলে সেই ছাতা তুলে দেওয়া হবে।
কিন্তু এই ঝুড়ি থেরাপি এত কাজে দেবে তা অনুমান করতে পারিনি তখন। কারণ ঢাকা শহরে পুলিশকে অনেক কিছু শুরু করতে দেখেছি। সেখানে শুধুই হতাশার কথা। যেমন ঢাকঢোল পিটিয়ে ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার, মোটরবাইকে হেলমেট ব্যবহার। কয়েকদিন পরই আবার যে অবস্থা সেই।

কিন্তু কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশ যা বলেছিলো ঠিক তেমনিই হয়েছে। লাবনী থেকে সুগন্ধা বিচ পর্যন্ত হেঁটে কোথাও কোন ময়লা চোখে পড়েনি। অথচ আগে সারা বিচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকতো প্লাস্টিকের বোতল, চিপসের প্যাকেট ও নানান জাতের কাগজের ঠোঙ্গা।

কিন্তু এখন আমূল বদলে গেছে সৈকতের দৃশ্য। আগে যাদের দু’দণ্ড বিচে মন টিকতো না তারা এখন ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় কাটাচ্ছেন।

বিচের ঝুড়ি থেরাপি সফল হওয়ার পর এখন বিচের বার্মিজ মার্কেটে তা সম্প্রসারণ করা হয়েছে বলে জানালেন রায়হান কাজেমী। সেখানেও দারুণভাবে সফল হয়েছে ট্যুরিস্ট পুলিশ।

আরও বেশ কিছু উদ্যোগের সুফল পেতে শুরু করেছে ভ্রমণকারীরা। আগে যেখানে সন্ধ্যার পরই বিচে যেতে গা ছমছম করত। এখন সেখানে অনেকেই আরাদ কেদারায় গা এলিয়ে দিয়ে সারারাত কাটিয়ে দিচ্ছেন অনায়াসে।
নেই ফটোগ্রাফারদের উৎপাতও। ফটোগ্রাফারদের বিশেষ পোশাক দেওয়া হয়েছে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে। প্রত্যেকের নামে রয়েছে আলাদা কার্ড। কাউকে হয়রানি করলে আর রক্ষা নেই। ফোন অথবা ট্যুরিস্ট পুলিশের ফেসবুকের ম্যাসেঞ্জারে পোস্ট দিলে ১০ মিনিটে পাওয়া যাবে পুলিশের সহায়তা।
এমনকি হয়রানির শিকার হওয়ার পর ঢাকায় ফিরে ফেসবুকে পোস্ট দিলেও তার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। চলতি মাসের ১৪ তারিখে কক্সবাজার এসেছিলেন হীরক-হাসনাত দম্পতি। শ্যামলী পরিবহনে প্রতারিত হন তারা। ঢাকা ফিরে তার ফেসবুকে দুর্ভোগের কথা লিখে পোস্ট দেন। সেই পোস্টে হিরক হাসনাতের এক বন্ধু কমেন্টে ট্যুরিস্ট পুলিশের ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ার পরামর্শ দেন।

ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ার ১০ মিনিটের মাথায় সাড়া দেয় ট্যুরিস্ট পুলিশ। শেষ পর্যন্ত শ্যামলী পরিবহন তার জেনারেল ম্যানেজারকে বরখাস্ত করে ক্ষমা চেয়ে রক্ষা পায়। এ রকম অনেক ঘটনার নজির রয়েছে বলে জানান রায়হান কাজেমী।

পুলিশ চাইলে কী পারে না তার একটি জ্বলন্ত উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে কক্সবাজার বিচ। সংশ্লিষ্টরা বাধ্য হচ্ছে লাইনে চলতে। এখন শুধু ভ্রমণকারীদের একটু সচেতন হওয়া প্রয়োজন। তাহলেই বিশ্বের সপ্তম আশ্চর্য’র তালিকা থেকে ছিটকে পড়া পৃথিবীর দীর্ঘতম এই সমুদ্র সৈকত আবার ঠাঁই করে নিতে সক্ষম হবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

কক্সবাজার থেকে ৫ মিনিটে বিশ্বের সুন্দর দ্বীপ

বাংলাদেশ সময়: ১৬১৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৬, ২০১৬
এসআই/আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।