ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

পর্যটন

ঝড়-জলোচ্ছ্বাস ঠেকাতে করা বাঁধ এখন দর্শনীয় স্থান

এস.এস শোহান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৫৪ ঘণ্টা, মার্চ ২৮, ২০২৩
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস ঠেকাতে করা বাঁধ এখন দর্শনীয় স্থান

বাগেরহাট: দক্ষিণের জেলা বাগেরহাটের সর্বশেষ উপজেলা শরণখোলা। প্রায় ১৫২ বর্গ কিলোমিটারের এই উপজেলার পূর্বে বলেশ্বর নদী, উত্তরে মোরেলগঞ্জ, দক্ষিণ ও পশ্চিমে সুন্দরবন এবং বঙ্গোপসাগর।

ঝড় জলোচ্ছ্বাসের মতো নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ এই উপজেলাবাসীর নিত্যসঙ্গী। চার ইউনিউয়নের ছোট্ট এই উপজেলাবাসী সব থেকে বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখোমুখি হয়েছিলেন ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর। সুপার সাইক্লোন সিডর নামের ওই ঘূর্ণিঝড়ে লন্ডভন্ড হয়েছিল শরণখোলাসহ উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের জীবন। সরকারি হিসেবে সিডরে সাড়ে তিন হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু ও ক্ষতি হয়েছিল কয়েকশ কোটি টাকার সম্পদের। সিডরের পরে শরণখোলাবাসীর ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য সরকারি-বেসরকারি নানা সংস্থা কাজ করেছে। কিন্তু উপজেলাবাসীর একমাত্র দাবি ছিল ঝড় জলোচ্ছ্বাস ঠেকানোর জন্য বলেশ্বর নদীর পাড়ে টেকসই বাঁধ নির্মাণ। জনগণের দাবির প্রেক্ষিতে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করে সরকার। ঝড়-জলোচ্ছ্বাস ঠেকাতে বলেশ্বর নদীর তীরে করা বাঁধ এখন আশির্বাদ হয়ে দেখা দিয়েছে শরণখোলাবাসীর কাছে। মাটির বাঁধকে টেকসই করতে দেওয়া কংক্রিটের ব্লক রীতিমত দর্শনীয় স্থানে রূপ নিয়েছে। একসঙ্গে নদী ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজার মানুষ আসছেন শরণখোলা উপজেলা সদর সংলগ্ন বলেশ্বর নদীর তীরে। একদিকে বিশালাকৃতির নদী, নদীর ওপারে বন, সুদৃশ্য নদীর তীর, নীল আকাশ সব মিলিয়ে এক মনোমুগ্ধকর দৃশ্য। যা আকৃষ্ট করছে দর্শনার্থীদের।

এদিকে বলেশ্বর নদীর তীরের এই পর্যটন সম্ভাবনাকে এগিয়ে নিতে কাজ শুরু করেছে উপজেলা প্রশাসন। সম্ভাবনাময় এই তীরের নাম দেওয়া হয়েছে রিভারভিউ ইকো পার্ক। রায়েন্দা-মাচুয়া ফেরিঘাটের কিচু সামনে থেকে বড়ইতলা পর্যন্ত  প্রায় এক কিলোমিটার জুড়ে ব্লকে লাল ও হলুদ রঙ করা হয়েছে। বসানো হয়েছে রঙিন ছাতা ও বিচ খাট। এসব কর্মযজ্ঞে ব্যয় হয়েছে প্রায় ১০ লক্ষাধিক টাকা। বিভিন্ন প্রকার খাবারের পসরা নিয়ে বসেছেন স্থানীয় ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা। নদীর সৌন্দর্য উপভোগের জন্য ব্যক্তি উদ্যোগে এসেছে স্পিড বোট। ১০০ টাকা ব্যয়ে স্পিড বোটে ঘুরতে পারেন দর্শনার্থীরা। সব মিলিয়ে ২০ জনের বেশি বেকারের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। ভবিষ্যতে দর্শনার্থী বৃদ্ধির সঙ্গে রিভারভিউ ইকো পার্ক ঘিরে হাজারেরও বেশি মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। সেই সঙ্গে সুন্দরবনের কটকা-কচিখালী পর্যটন এলাকায়ও দর্শনার্থী বাড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিকেলে নদীর তীরে ঘুরতে আসা পিরোজপুর সদরের অমিতাভ মন্ডল বলেন, নদীর স্রোত ও আকাশে সাদা মেঘের ভেসে বেড়ানো দেখে খুবই ভাল লেগেছে। এমন দৃশ্য সচারচর দেখা যায় না।

পরিবার-পরিজন নিয়ে  ঘুরতে আসা রুহুল আমিন নামে এক সরকারি কর্মকর্তা বলেন, শান্ত ও নির্মল পরিবেশ, সঙ্গে নদীর স্রোতের কলতান যে কাউকেই মুগ্ধ করবে। সবার উচিত অবসর সময়ে নদী ও নির্মল পরিবেশে যাওয়া। শুধু রুহুল আমিন ও অমিতাভ নয়, প্রতিদিন হাজারো দর্শনার্থীর প্রশান্তির খোরাক এই রিভারভিউ ইকোপার্ক।

রিভারভিউ ইকোপার্কে ফুচকা বিক্রেতা মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বেশ কিছুদিন হল বিকেল থেকে এখানে ফুচকা বিক্রি করি। প্রতিদিন অনেক লোক আসে। বেচা-বিক্রিও ভাল হয়। আমি ছাড়াও কয়েকজন আছে যারা ফুচকা, চানাচুর, ঝালমুড়ি ও আইসক্রিম বিক্রি করেন।

স্পিডবোট চালক মো. সেলিম বলেন, জন প্রতি একশ টাকার বিনিময়ে ১০ মিনিট ঘুরাই দর্শনার্থীদের। স্পিডবোটে ঘুরে তারাও খুশি হয়, আমারও আয় ভাল হয়।

উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আজমল হোসেন মুক্তা বলেন, শরণখোলার মানুষের ঘোরার জন্য তেমন কোনো জায়গা ছিল না। এখন সবাই রিভারভিউ পার্কে আসছে, সময় কাটাচ্ছে। এক কথায় ভ্রমণ পিপাসুদের অন্যতম আকর্ষণে পরিণত হয় বলেশ্বর নদীর তীর। আশা করি শরণখোলাবাসীর সমৃদ্ধির জন্য রিভারভিউ ইকোপার্ক ভূমিকা রাখবে।

শরণখোলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নুর-ই-আলম সিদ্দিকি বলেন, বলেশ্বর নদীর তীরকে আমরা পর্যটনবান্ধব করে গড়ে তুলেছি। আমাদের কাজ এখনও শেষ হয়নি, কাজ চলছে। এরই মধ্যে প্রতিদিনই বিভিন্ন স্থান থেকে বিপুল পরিমাণ দর্শনার্থী আসছে। সেই সঙ্গে অর্থনীতির বিকাশ শুরু হয়েছে। নতুন ধরনের জীবিকার সৃষ্টি হয়েছে। এখানে ছোট ছোট উদ্যোক্তারা নানা ধরনের প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। যার মাধ্যমে অনেকের জীবিকা নির্বাহ হচ্ছে। ভবিষ্যতে আধুনিক রেস্টুরেন্ট ও হোটেল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলেও জানান উপজেলার এই শীর্ষ কর্মকর্তা।

তিনি আরও বলেন, শরণখোলা থেকে সুন্দরবনের কটকা. কচিখালী ও দুবলার চর যাওয়া খুবই সহজ। কিন্তু পরিচয় ও জানা না থাকায় সবাই মোংলা দিয়ে সুন্দরবনে প্রবেশ করে। বলেশ্বর নদীর তীরে যদি দর্শনার্থীরা বেশি আসেন, তাহলে সুন্দরবনের কটকা, কচিখালী ও দুবলার চর এলাকায়ও দেশি-বিদেশি পর্যটক বাড়বে। আমাদের সেই ধরনের প্রচার-প্রচারণা চালানোর প্রক্রিয়া রয়েছে।

যেভাবে যাবেন রিভারভিউ ইকোপার্কে: ঢাকাসহ যে কোনো স্থান থেকে পরিবহনে সড়কপথে শরণখোলা উপজেলা সদরের রায়েন্দা বাসস্ট্যান্ডে নামতে হবে। সেখান থেকে রিকশাভ্যান বা অটো রিকশায় রায়েন্দা-মাসুয়া ফেরিঘাট হয়ে বড়ইতলায় যেতে হবে। এছাড়া হেঁটেও যাওয়া যায়, তাতে সময় লাগবে ১০ থেকে ১৫ মিনিট।

বাংলাদেশ সময়: ১০৫৩ ঘণ্টা, মার্চ ২৮, ২০২৩
এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।