ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

খেলা

ইয়ানের বোলিং মডেল বাংলাদেশের আশিক

সেকান্দার আলী | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২১, ২০১০
ইয়ানের বোলিং মডেল বাংলাদেশের আশিক

ঢাকা: বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)’র সঙ্গে সম্পর্ক হওয়ার পর থেকেই একটা ছেলেকে মনে মনে খুঁজছিলেন বোলিং কোচ ইয়ান পন্ট। ছেলেটিকে প্রতিদিনই দেখেন।

ছেলেটিও কোচের কাছাকাছি থাকেন। অথচ কারো সঙ্গে কারো কথা হয়নি।

ছেলেটি ভয়ে কথা বলেননি। ইয়ান ছেলেটিকে চিনতে পারেননি। কিন্তু দুজনই একে অন্যের প্রতি আলাদা একটা টান অনুভব করছিলেন।

জাতীয় দলের অনুশীলন শেষে ইয়ানের সঙ্গে বিসিবির বোলিং কোচ সারোয়ার ইমরানের পরিচয় হয়। প্রধান কোচ জেমি সিডন্সই দুজনের মধ্যে আলাপ করিয়ে দেন। বাংলাদেশের পেস বোলিং নিয়ে দুই কোচের মধ্যে তথ্য আদান প্রদান হয়। ছেলেটি দূরে দাঁড়িয়ে কোচদের আলোচনার বিষয় বুঝতে চেষ্টা করছিলেন।

কোচিং ম্যানুয়েল থেকে সারোয়ার ইমরানকে একটি ছবি দেখান ইয়ান। ছবিটি দেখে ছেলেটিকে কাছে ডাকেন জাতীয় দলের সাবেক কোচ। একজন বিদেশি কোচের কাছে নিজের ছবি দেখে ছেলেটি অবাক হয়। বিস্ময়ের ঘোর কাটতে চায় না। পাঁচ বছর আগে ইয়ানের সঙ্গে তার পরিচয় হয়েছিলো ভারতের চেন্নাইয়ে এমআরএফ পেস বোলিং ফাউন্ডেশন একাডেমিতে। ২০০৫ সালে ভারতের ওই একাডেমিতে ড্যানিস লিলির সঙ্গে ইয়ানও ক্ষুদে পেস বোলারদের প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন। সেই থেকে ছবিটি পন্টের কাছে।

ছেলেটির নাম সৈয়দ গোলাম কিবরিয়া আশিক। বিসিবি পেস ফাউন্ডেশন থেকে জাতীয় দলের ক্যাম্পে নেট বোলার হিসেবে আছেন।

অনেক বছর পর আশিককে কাছে পেয়ে পন্ট একটু আবেগ আপ্লুত হয়ে ওঠেন। আশিকের ছবির উল্টো দিকে ওয়াকার ইউনুসের ছবি বাঁধানো। দুটো ছবিই রঙ্গীন পোস্টার সাইজের। ইয়ানের কোচিং ম্যানুয়েলের পেস বোলিংয়ের মডেল এই দুজন। একজন বিশ্বখ্যাত। অন্যজন বাংলাদেশেই অচেনা। ইয়ান বলেন,“তোমার ছবি নিয়ে আমি দুনিয়া ঘুরে বেড়াই। এই দুটো ছবি দেখিয়ে আমি পেস বোলিং শেখাই। তুমি বুঝতে পারছো তোমাকে আমি কতো উঁচু মানের মনে করি। ”

আশিকের মনের মধ্যে দারুণ এক অনুভূতি খেলে যায়। চোখে মুখে তার ছাপ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। আশিকের কাছে ইয়ান জানতে চান এখন সে কি করছে। বেশি কিছু বলতে পারেননি অনূর্ধ্ব-১৯ দলের সাবেক এই পেসার। ইয়ানই ছেলেটিকে উদ্বুদ্ধ করে তোলেন। বলেন,“এখন থেকে তোমার সঙ্গে আমার প্রতিদিনই কথা হবে। আজ বিশ্রাম কর কাল নেটে দেখা হবে। ”

আশিক বুঝে গেলেন ইয়ানের কাছ থেকে কিছু শেখার সুযোগ এসেছে। বিসিবি একাডেমির সাবেক এই পেসার মঙ্গলবার বাংলানিউজকে বলছিলেন,“ছবিটা দেখার পর আমার মধ্যে বড় হওয়ার ইচ্ছে দ্বিগুণ বেড়ে গেছে। পাঁচ বছর ধরে যখন তিনি আমাকে মনে রেখেছেন, নিশ্চয়ই তার কাছ থেকে সাহায্য পাব। জানেন আমার বিস্ময়ের ঘোর কাটছে না। দেশের মানুষই যেখানে মনে রাখে না। অথচ একজন বিদেশি কোচ আমাকে মডেল হিসেবে রেখে দিয়েছেন। আমাকে একজন বড় মাপের পেস বোলার হতেই হবে। ”

আশিকের ক্রিকেট ক্যারিয়ার মন্দ নয়। বিকেএসপির সাবেক এই পেসার ২০০৮ সালে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে খেলেছেন। বিসিবি একাডেমি দলেও ছিলেন। সবকিছুই যথাযথভাবে এগোচ্ছিলো। বলে গতি ছিলো। লাইন-লেন্থ ঠিক রেখে নিশানায় বল ফেলার কৌশল ভালোই রপ্ত করেছিলেন। ৮৫ মাইল বেগে প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানদের আঘাত হানার ক্ষমতা ছিলো আশিকের বলে। এখন সেই ক্ষুরধার নেই। নিজে থেকে পিছিয়ে পড়েননি। অগত্যা টাইফয়েডে আক্রান্ত হয়ে ২০০৯ সালে ক্রিকেটের মূল স্রোত থেকে বেরিয়ে যেতে হবে আশিককে। টাইফয়েড শরীরের পেশিগুলো মলিন করে দিয়েছে। এখন সুস্থ। আগের অবস্থা ফিরে পেতে মরিয়া হয়ে চেষ্টা করছেন বিসিবির এই তরুণ পেসার।

দরিদ্র বাবা-মায়ের সন্তান আশিক স্বপ্ন দেখেছিলেন ২০১১ সালের বিশ্বকাপে খেলবেন। নিয়তি সেই আশা পূরণ হতে দেয়নি। তবে পরের বিশ্বকাপকে লক্ষ্য ধরে নিয়েছেন। যতটা দ্রুত সম্ভব জাতীয় দলে সুযোগ করে নিতে চান আশিক। ঢাকা প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগে এবার নিজেকে মেলে ধরতে চান।

আশিকের ক্রিকেটার হওয়ার গল্পটা অনেক করুণ। ছেলে চান ক্রিকেটার হতে। কিন্তু দরিদ্র বাবা-মার মন গলাতে পারছিলেন না। পিতা-মাতার ইচ্ছে ছিলো, ছেলে লেখাপড়া শিখে পরিবারের দুঃখ ঘোচাবে।

নেত্রকোনার বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়ে ২০০২ সালে বিকেএসপিতে ভর্তি পরীক্ষা দেন আশিক। ভর্তির জন্য নির্বাচিত হন। কিন্তু অভাবের সংসারে অন্ন-বস্ত্রের সংস্থান করাই যেখানে কঠিন, সেখানে বিকেএসপিতে ছেলের ভর্তির খরচ যোগানো অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। ছেলের খুশির জন্য মা নিজের কানের সোনার দুল বিক্রি করে টাকার যোগার করেন। আশিক এখন অনেকটাই প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু মাকে কানের দুল বানিয়ে দেওয়া হয়নি। তবে মায়ের জন্য গ্রামে সুন্দর একটি বাড়ি বানিয়েছেন। একমাত্র ছোট ভাইকে নিয়ে সেখানেই থাকেন আশিকের বাবা-মা।

আশিক এখন স্বপ্ন দেখেন প্রিয় ক্রিকেটার মশরাফি বিন মুর্তজার সঙ্গে জাতীয় দলের হয়ে খেলবেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৭১৫ ঘন্টা, সেপ্টেম্বর ২১, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।