ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

খেলা

অনেক নাটকের পর তামিম অস্ট্রেলিয়া যেতে রাজি

স্পোর্টস করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯১৬ ঘণ্টা, আগস্ট ২৪, ২০১০
অনেক নাটকের পর তামিম অস্ট্রেলিয়া যেতে রাজি

ঢাকা: অভিমানের মেঘ কেটে গেছে। নিজেকে বোঝাতে পেরেছেন তামিম ইকবাল।

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)’র ব্যবস্থাতেই চিকিৎসা নিতে যাচ্ছেন অস্ট্রেলিয়ায়।

জট বেধেছিলো অস্ট্রেলিয়ায় যাতায়াত ব্যবস্থা নিয়ে। বিসিবি থেকে ইকোনোমি ক্লাসে অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিলো। তামিম ইচ্ছা পোষণ করেছিলেন বিজনেস ক্লাসে যাওয়ার। তা না হওয়ায় এ নিয়ে সোমবার ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের সহকারী ম্যানেজার শরিফুল ইসলাম সেলিমের সঙ্গে ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েন তামিম। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন সহকারী ম্যানেজারের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছেন।  

ঠান্ডা মেজাজের শরিফুল ইসলাম এ নিয়ে কারো কাছে অভিযোগ পর্যন্ত করেননি। উল্টো তামিম মিডিয়া কমিটির প্রধান জালাল ইউনুসের কাছে অভিযোগ করেন, শরিফুল ইসলাম দুর্ব্যবহার করায় তিনি রেগে গিয়ে ছিলেন।

কিন্তু ঘটনার সময় উপস্থিত বিসিবির অন্য কর্মচারিরা বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে জানিয়েছেন উত্তপ্ত হওয়ার মতো কোন কথাই তামিমকে বলেননি শরিফুল ইসলাম। বরং ভালোভাবে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন।

শরিফুলের সঙ্গে শুধু রাগ দেখিয়েই থেমে যাননি জাতীয় দলের নির্ভরযোগ্য এই ব্যাটসম্যান। উল্টো ঘটনাস্থলেই অস্ট্রেলিয়ার ভিসা ফর্ম ছিড়ে ফেলেন।

এরপর হাতে চোটের অজুহাতে প্রধান কোচ জেমি সিডন্সের কাছ থেকে দুই দিনের ছুটি নিয়ে বাসায় চলে যান মারকাটারি ব্যাটসম্যান তামিম।

মঙ্গলবার কয়েক ঘন্টা তামিমকে বোঝানোর চেষ্টা করা হয়। কিন্তু নিজের অবস্থান থেকে একচুলও সরতে রাজি হননি। ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিজামউদ্দিন চৌধুরী থেকে তামিমের চাচা আকরাম খান এবং বিসিবির মিডিয়া কমিটির প্রধান জালাল ইউনুসও সন্ধ্যা পর্যন্ত বাগে আনতে পারেননি।

প্রত্যেক কর্মকর্তাকে তামিম সাফ জানিয়ে দেন বিজনেস ক্লাসে যাতায়াতের ব্যবস্থা করা হলেই কেবল বিসিবির ব্যবস্থায় অস্ট্রেলিয়া যাবেন। কর্মকর্তারা শেষে হাল ছেড়ে দেন। জালাল ইউনুস সাফ জানিয়ে দেন এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন বিসিবি সভাপতি আ হ ম মোস্তফা কামাল (লোটাস কামাল)।

জালাল ইউনুসকে তামিম বারবার একই কথা বলেছেন,“অন্যদের যে সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়েছে আমার বেলায় সেই নিয়ম নয় কেন?”

এর উত্তরে মিডিয়া কমিটির প্রধান তামিমকে বলেছেন,“একটা নিয়মের মধ্যে আসার জন্যই আমরা এই উদ্যোগ নিয়েছি। বোর্ডের চুক্তিভুক্ত সবাইকে যদি বিজনেস ক্লাসে চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে পাঠাতে হয়, তবে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বিসিবি। ” তামিমও পাল্টা বলেছেন,“এর আগে সাকিব এবং মাশরাফিকে বিজনেস ক্লাসে পাঠানো হয়েছে। ” ইউনুস বলেছেন,“তারা দুজনই অধিনায়ক হিসেবে অস্ট্রেলিয়া গেছেন। ”

সন্ধ্যা নামতেই ভোজবাজির মতো সবকিছু বদলে যায়। তামিম টেলিফোনে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানিয়ে দেন বিসিবির ব্যবস্থাতেই অস্ট্রেলিয়া যাবেন। এবিষয়ে জানতে চাইলে বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে তামিম বলেন,“ভেবে দেখলাম যাওয়াই ভালো। তাই সিইওকে আমার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছি। ” এর বেশি কিছু বলতে রাজি হননি।

বিসিবি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে তামিম সাংবাদিকদের যা বলেছিলেন:

প্রশ্ন: অস্ট্রেলিয়া যাচ্ছেন?

তামিম: খুব সম্ভবতো যাচ্ছি।

প্রশ্ন: বোর্ড থেকে যাচ্ছেন?

তামিম: নো কমেন্টস।

প্রশ্ন: আপনার ক্ষোভটা কমেছে?

তামিম: আমার কারো প্রতি ক্ষোভ নেই। সব কিছুই স্বাভাবিক। বোর্ডও আমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেনি। আমিও বোর্ডের সঙ্গে কিছু করিনি।

প্রশ্ন: প্র্যাকটিস করবেন?

তামিম: অবশ্যই করবো। দুইদিন আমি ছুটি নিয়েছিলাম। আজ (মঙ্গলবার) জেমিকে (প্রধান কোচ) ফোন করে বলেছি কাল থেকে অনুশীলনে যাবো।

প্রশ্ন: সোমবার কখন ছুটি নিয়েছিলেন?

তামিম: শরীরটা একটু খারাপ মনে হয়েছে। হাতে ব্যথা অনুভব করছিলাম। এরপরই দুই দিনের ছুটি নেই।

প্রশ্ন: ছুটি কে দিয়েছিলো?

তামিম: আমি বোর্ডকে জানিয়েছিলাম। নিয়ম মেনেই ছুটি নিয়েছি।

প্রশ্ন: ছুটিতেও বোর্ড অফিসে এসেছেন কেন?

তামিম: পত্রিকায় কিছু কথা এসেছে। সেগুলোর যুক্তি খন্ডাতে।

প্রশ্ন: কেউ কি আসতে বলেছিলো?

তামিম: না, আমি নিজে থেকেই এসেছি।

এরপরই ইউনুসের কাছে তামিমের অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন,“আমরা তামিমকে বোঝাতে চেষ্টা করেছি। এখনও সে নিজের অবস্থানেই আছে। আশা করি বোর্ড সভাপতি আসার পর এবিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। ”

তিনি আরো বলেন,“ও একটু ভুল বোঝেছে। তামিমের ধারণা হয়েছে অন্যদের থেকে একটু কম গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে তাকে। আসলে তা নয়। সে আমাদের খুবই গুরুত্বপূর্ণ একজন খেলোয়াড়। তার সঙ্গে কখনোই বৈষম্য করার প্রশ্নই ওঠে না। ”

রাতে জালাল ইউনুস আবার ফোনে খবর দেন তামিম অস্ট্রেলিয়াতে যেতে রাজি হয়েছেন।

গতবছর নভেম্বরে ভারতের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ খেলার সময় ডান হাতে চোট পান তামিম। ম্যাটাকার্পালে চোট এখনো পুরো সারেনি। হার উঁচু হয়ে আছে। সে জন্যই চিকিৎসা নিতে অস্ট্রেলিয়ায় পাঠানো হচ্ছে তামিমকে।

বাংলাদেশ সময়: ২০৩৫ ঘন্টা, আগস্ট ২৪, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।